সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আসিফ নজরুলের একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আচরণকে বিদ্বেষমূলক ও আক্রমণাত্মক উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদের ওপর হামলা, শিক্ষাঙ্গনের স্বাধীনতা হরণ ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিদাতাদের পক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ও তাদের একটি সহযোগী সংগঠন আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে যে বিদ্বেষমূলক ও আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিয়েছে, তার তীব্র নিন্দা জানাই। এমন আক্রমণাত্মক অবস্থান বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে সংবিধানে প্রদত্ত তাঁর চিন্তা, বিবেক ও বাক্স্বাধীনতার স্পষ্ট লঙ্ঘন, যা দেশের মানুষের মৌলিক অধিকারচর্চার প্রতি প্রত্যক্ষ হুমকি ও মতপ্রকাশের বিরুদ্ধে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টির নিন্দনীয় অপচেষ্টার অংশ। অধ্যাপক আসিফ নজরুলের ফেসবুক পোস্ট সম্পর্কে যে কেউ ভিন্নমত পোষণ করতে পারেন, তবে তা করতে হবে নিয়মতান্ত্রিক ও শোভনীয় প্রক্রিয়ায়, আক্রমণাত্মকভাবে নয়।’
১৭ আগস্ট আসিফ নজরুল তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুকে পোস্ট দেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কাবুল বিমানবন্দর ধরনের দৃশ্য বাংলাদেশেও হতে পারে।’ ওই দিন সিরিজ বোমা হামলা দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি পালন শেষে ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা–কর্মীরা আসিফ নজরুলের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেন। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ তুলে কক্ষের দরজা ও দেয়ালে পোস্টার লাগানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাক্স্বাধীনতাচর্চার কারণে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের কয়েকজন নেতা-কর্মী অধ্যাপক আসিফ নজরুলের বিভাগীয় কার্যালয়ে তালা ও বিভিন্ন উসকানিমূলক পোস্টার লাগিয়ে দেন, তাঁকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করার প্রকাশ্য হুমকি প্রদান করেন এবং শাহবাগ থানায় তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক ও মনগড়া একটি অভিযোগ দায়ের করেন, যা তাঁকে অহেতুক হয়রানি ও হেয় করার শামিল।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বাক্স্বাধীনতাসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকারের ওপর অব্যাহত হুমকি হয়ে থাকা নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ধারাগুলোর বিলুপ্তির দাবি করছি। আসিফ নজরুলসহ সব নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রদত্ত বিভিন্ন বক্তব্যকে কেন্দ্র করে এই নিবর্তনমূলক আইনের উদ্দেশ্যমূলক প্রয়োগ থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব আলী ইমাম মজুমদার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, নারীপক্ষের সদস্য শিরীন হক, সেন্ট্রাল উইমেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক পারভীন হাসান, অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান, আইনজীবী জেড আই খান পান্না, হাসনাত কাইয়ুম, সারা হোসেন, সালমা আলী, সুব্রত চৌধুরী, তবারক হোসেইন ও জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, লেখক রেহনুমা আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিয়ারা নাসরীন, একই বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, একই বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, সহযোগী অধ্যাপক নাসরিন খন্দকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, একই বিভাগের অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অধ্যাপক নাইমা হক, সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক শিপন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সি আর আবরার, একই বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ফেরদৌস আজিম, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক বিনা ডি কস্টা, উন্নয়ন গবেষক ইমরান মতিন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মনোয়ার কামাল, একই সংস্থার পরিচালক (কর্মসূচি) নিনা গোস্বামী, মানবাধিকারকর্মী ফষ্টিনা পেরেরা, মানবাধিকারকর্মী শারমীন মুরশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসনিম সিরাজ মাহবুব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাদাফ নূর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামজতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম, গবেষক নোভা আহমেদ, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সহযোগী স্বপন আদনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সেলিম হোসেন, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, কোস্টের নির্বাহী রেজাউল করিম চৌধুরী, মানবাধিকারকর্মী মো. নূর খান লিটন, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন, অধিকারকর্মী ও গবেষক রেজাউর রহমান লেলিন, গবেষক হানা শামস আহমেদ, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের ক্লিনিক্যাল নিউরোসায়েন্স সেন্টারের পরিচালক নায়লা জেড খান, সংগীতশিল্পী অরূপ রাহী ও আলোকচিত্রী মাহমুদ রহমান।