হাসপাতালে স্বামীকে মারধর, বাঁচাতে গেলে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর পেটে লাথি

হাসপাতালে স্বামীকে মারধর, বাঁচাতে গেলে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর পেটে লাথি

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ইন্টার্নদের বিরুদ্ধে আবারও রোগী ও স্বজনদের ওপর হামলা এবং মারপিটের অভিযোগ উঠেছে। এবার কক্ষে আটকে রেখে মারধর করার সময় স্বামীকে বাঁচাতে আসা দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা অসুস্থ গৃহবধূর জয়নব বেগমের (২১) পেটে লাথি ও কিল-ঘুষি মারা হয়েছে। লাথি দেওয়ার পর তার রক্তক্ষরণ শুরু হয় বলে জানা গেছে।

শনিবার রাতে হাসপাতালের দোতলায় গাইনি ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির তিন সদস্যকেও মারধর করা হয়েছে। চিকিৎসকদের ভয়ে ও প্রাণ বাঁচাতে রাতেই ওই নারীকে শহরে ইসলামিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

ফাঁড়ির এএসআই রাকিবুল হাসান এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, চিকিৎসকরা রোগীদের প্রচণ্ড অবহেলা করে থাকেন; প্রতিবাদ করলেই মারধর করা হয়।

এ প্রসঙ্গে শজিমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, চিকিৎসকের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের হট্টগোল হয়েছিল। পুলিশ এলে তারাও এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তবে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি; শুধু ধস্তাধস্তি হয়েছে। এ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা নারীর পেটে লাথি মারার ঘটনা ঘটেনি।

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মাদলা ইউনিয়নের নন্দগ্রামের বাসিন্দা ও ডোমনপুকুর কামিল মাদ্রাসা মসজিদের খতিব মাওলানা আসলাম আলী মুজাহিদী অভিযোগ করেন, তার দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী কয়েক দিন ধরে বমি করছিল। গত বুধবার তাকে শজিমেক হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

শনিবার দুপুরে তার অবস্থার অবনতি হয়। কর্তব্যরত নারী চিকিৎসকদের অবহিত করলে তারা আসেননি। এর আগে থেকে তার স্যালাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। জয়নবের মা ইন্টার্নদের কক্ষে গিয়ে অনুরোধ করলেও তাকে জানানো হয় রোগী মারা গেলে তাদের কিছু করার নেই। এ সময় অসহায় স্বামী মাওলানা মুজাহিদী বিষয়টি প্রকাশ করার জন্য তার মোবাইল ফোন দিয়ে ভিডিও এবং অন্য রোগীর স্বজনদের সাক্ষাৎকার নিতে থাকেন। তখন চিকিৎসকরা বাধা দিলে তিনি ভিডিও বন্ধ করে দেন।

এর পর থেকে চিকিৎসকরা অসুস্থ জয়নব বেগমকে দেখতে আসেনি।
মাগরিবের নামাজের পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে মাওলানা মুজাহিদী রোগীর ফাইল নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে ছুটে যান। একপর্যায়ে তার সঙ্গে চিকিৎসক ও ইন্টার্নদের বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় অন্তত ৫০ চিকিৎসক ও ইন্টার্ন একত্র হয়ে তাকে কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন। তার চিৎকারে ছোট ভাই জাকির হোসেন এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করা হয়।

এতেও রাগ না মিটলে চিকিৎসকরা মাওলানা মুজাহিদীকে ইন্টার্নদের কক্ষে আটকে রেখে বেধড়ক মারপিট করতে থাকেন। অসুস্থ অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী জয়নব বেগম খবর পেয়ে সেখানে ছুটে এলে ক্ষিপ্ত এক চিকিৎসক তার পেটে লাথি দেন। অন্যরা তাকে কিল-ঘুষি মারেন। লাথি দেওয়ার পর জয়নবের রক্তক্ষরণ শুরু হয়।

এদিকে খবর পেয়ে মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই রাকিবুল হাসান, কনস্টেবল শফিউল ও অরূপ বিশ্বাস গাইনি ওয়ার্ডে গিয়ে চিকিৎসকদের নিবৃত করার চেষ্টা করলে তারও পেটে লাথি দেওয়া হয়।

এ ছাড়া ওরা কনস্টেবল অপরূপ ও শফিউলকে বেধড়ক মারপিট করেন। চিকিৎসকদের ভয়ে ও প্রাণ বাঁচাতে রাতেই অসুস্থ গৃহবধূ জয়নব বেগমকে বগুড়া শহরের মফিজ পাগলার মোড় এলাকায় ইসলামিক হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়েছে। ইন্টার্নদের হামলার সময় রোগীর স্বজনরা তাদের বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন।

বগুড়ার ছিলিমপুর মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই রাকিবুল হাসান জানান, অন্তঃসত্ত্বা জয়নবের অবস্থার অবনতি ঘটলে তার স্বামী মাওলানা মুজাহিদী ইন্টার্নদের সহযোগিতা চান। তারা রোগীর কাছে আসতে না চাইলে প্রতিবাদ করায় বাকবিতণ্ডা হয়।

একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ ইন্টার্ন ও চিকিৎসকরা মুজাহিদীকে সিনেমা স্টাইলে রুমে আটকে রেখে মারপিট করা হয়েছে। তার ভাই জাকিরকেও পেটানো হয়েছে। এ সময় অন্তঃসত্ত্বা জয়নব স্বামীকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তার পেটে লাথি ও মারধর করা হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রোগীদের প্রচণ্ড অবহেলা করে থাকেন। প্রতিবাদ করলেই ঘরে আটকে রেখে মারধর করে থাকেন। গত মার্চে ছুরিকাঘাতে আহত জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক তাকবির ইসলাম খান চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে মারা গেছেন। তারা প্রায় চার মাস আগে গাবতলীর রূপম নামে চেয়ারম্যানকে মারধর করেন। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে তারাও (পুলিশ) লাঞ্ছিত হয়েছেন।

এর আগেও এ হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের মারপিটের অনেক রেকর্ড আছে। পুলিশ লাঞ্ছিতের ঘটনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

এমজে/