‘পরীমণিকে হেনস্থার দায়িত্ব রাষ্ট্র নিজের হাতে তুলে নিয়েছে’

‘পরীমণিকে হেনস্থার দায়িত্ব রাষ্ট্র নিজের হাতে তুলে নিয়েছে’

পরীমণিকে হেনস্থা করার দায়িত্ব রাষ্ট্র নিজের হাতেই তুলে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল।

রবিবার (২২ আগস্ট) বিকাল ৪টায় রাজধানী শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিকজনের’ আয়োজনে ‘পরীমণির জন্য ন্যায়বিচার’ ব্যানারে নাগরিক সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে তিনি একথা বলেন।

সুলতানা কামাল বলেন, ‘একজন মানুষ যিনি একটা অপরাধের শিকার হয়ে একসময় মামলা করেছে। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে নানাভাবে প্রশ্ন করা হচ্ছে এবং হেনস্থা করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তাকে হেনস্থা করার দায়িত্ব রাষ্ট্র নিজের হাতেই তুলে নিয়েছে। তার জন্য আজকে আমরা দাঁড়িয়েছি, আর এটার থেকে দুঃখজনক ও বিব্রতকর কোনও ঘটনা সমাজে হতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিশুর বয়সী একজন নারীকে র‌্যাব দিয়ে যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। র‌্যাবের মতো একটা এলিট ফোর্স দিয়ে কারও বাড়িতে মাদক আছে কিনা— এটার দেখার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।’

ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘পরীমণিকে নিয়ে যেটা শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও গণমাধ্যমে, কোনও কিছু সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই তাকে অপরাধী হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছে। আদালতের রায়ের আগে তাকে অপরাধী হিসেবে সাবস্ত করা এবং তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য, এটা কোনও সভ্য সমাজের পরিচয় হতে পারে না। একটি পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে নারীকে সবসময় খাটো করা, হেয় করার একটা মনোবৃত্তি আমরা সবসময় লক্ষ্য করি। পরীমণিকে কেন এত বারবার রিমান্ডে যেতে হবে, আদালত কেন একটা সুয়োমোটো জারি করবে না পুলিশের বিরুদ্ধে। একবার রিমান্ড যথেষ্ঠ, সেজন্য তো এতবার রিমান্ডে নেওয়ার দরকার হয় না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘পরীমণি একজন নাগরিক। সে সাংবিধানিক সকল অধিকার পাওয়ার যোগ্য। আমরা বিভিন্ন আইনজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি যে, পরীমণির যে অপরাধ তা জামিনযোগ্য অপরাধ। কিন্তু তাকে জামিন না দিয়ে বারবার রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে। সে মিডিয়া ট্রায়াল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুলিংয়ের শিকার, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

মানবাধিকার নেত্রী খুশি কবীর ভার্চুয়াল বক্তব্যে বলেন, ‘প্রত্যেকটি নাগরিকের কিছু সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। সেগুলো রক্ষা করা হলো রাষ্ট্রের দায়িত্ব। একজন মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার সময় এই ধরনের আচরণ করা যায় না।’

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র একজন সাংস্কৃতিক কর্মীকে সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে এবং রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। আত্মহত্যা বা হত্যার প্ররোচণা যারা দিচ্ছে তাদের কিছুই হচ্ছে না। কিন্তু পরীমণির সঙ্গে যা হচ্ছে, তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অনতিবিলম্বে পরীমণির মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। পরীমণিকে কেন্দ্র করে যে নাটক তৈরি করা হয়েছে, তা বোঝা যাচ্ছে। রক্তে অর্জিত বাংলাদেশে যে পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে, আমরা তা কোনোভাবে মেনে নিতে পারি না। সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা অতীতে দাঁড়িয়েছি এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতেও দাঁড়াবো।’

সমাপনী বক্তব্যে গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক আকরামুল হক বলেন, ‘আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে না। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আইন অনুযায়ী চলছে না। আইনানুযায়ী যে চলা উচিত, সেই বোধও তাদের বিলুপ্ত হয়ে গেছে। রাষ্ট্রে আইন না মানার যে সংস্কৃতি, এগুলোর আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। অনিয়ম যদি ঘটে থাকে আইনানুযায়ী তার তদন্ত করেন। রাষ্ট্র তালেবানিকরণের চাইতে একধাপ এগিয়ে গিয়েছে।’

এসময় তিনি সিলেট এবং খুলনায় সাম্প্রদায়িক হামলার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা দেখছি একজন জুমন দাসের জামিন হয় না। কিন্তু যারা সাম্প্রদায়িক হামলা উসকে দিয়েছিল, তাদের জামিন মেলে। জুমন দাসের জন্য কি রাষ্ট্র না? ক্ষমতাসীনদের বলছি, আপনারা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন, যে আপনারদের জন্য আমরা অগ্নি মশাল জ্বালিয়েছিলাম, সেই আমরা আপনাদের ধিক্কার জানাই। পরীমণি অপরাধ করে থাকলেও আপনারা ক্ষমতার ব্যবহার করে তার সঙ্গে যে অন্যায়গুলো করছেন, তার তীব্র নিন্দা এবং ক্ষোভ জানাই।’

সমাবেশে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খাঁন আসাদুজ্জামান মাসুমের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন— চলচ্চিত্র নির্মাতা অপরাজিতা সঙ্গীতা, চলচ্চিত্র নির্মাতা রশিদ পলাশ, হাবিবুর রহমান হাবিব, মানবাধিকার কর্মী মুঞ্জুন্নাহার, কবি ও সংগঠক শতাব্দী ভব, ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া সেতু, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফাসহ আরও অনেকে।