অনাহারে-অর্ধাহারে বন্যার্তরা

অনাহারে-অর্ধাহারে বন্যার্তরা

দেশের বন্যা পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে পানি কমার সাথে সাথে নদীভাঙন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ভাঙনে ঘরবাড়ি, জায়গা, জমি সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে হাজারও পরিবার। প্রমত্তা নদী গিলে খাচ্ছে ক্ষেত-খামার, রাস্তাঘাট, বাঁধ, মাঠ-ঘাট, মসজিদ, স্কুল-মাদরাসা, হাট-বাজার। বন্যাকবলিত ১৫টি জেলায় এখনো শত শত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বানের কাদা-পানি, বন্যাবাহিত আবর্জনায় সয়লাব। বন্যায় অনেক এলাকায় ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ। তলিয়ে গেছে রোপা আমনের ক্ষেত ও বীজতলা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাকা আউশ ধান। অন্যদিকে পানি নামতে শুরু করলেও বানভাসিদের দুর্ভোগ আরও বাড়ছে। উঁচু বাঁধে বা শিবিরে আশ্রয় নেওয়া বন্যার্তদের অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে। বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের তীব্র সঙ্কটে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। বন্যায় প্লাবিত এলাকায় পানি বাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে শিশুরা ডায়রিয়া ও আমশয়ে আক্রান্ত হচ্ছে। বন্যা এলাকায় মানুষের কাজ নেই। অভাব-অনটনে তারা দুঃসহ জীবনযাপন করছেন।

ব্রহ্মপুত্র নদের পানি হ্রাসের একদিন পর দীর্ঘ তিন সপ্তাহ শেষে গতকাল বুধবার যমুনা নদের পানি সবক’টি পয়েন্টে বিপদসীমার নিচে নেমে গেছে। পদ্মা নদীর পানিও কমছে। এখন দু’টি পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে রয়েছে। প্রধান নদ-নদীগুলোর উজানভাগে ভারতের অনেক অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হ্রাস পাওয়ায় কমে গেছে উজানের ঢল। এরফলে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্য ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে ভাটির দিকে তীব্র বেগে নামছে বানের পানি। ঢাকার আশপাশ এলাকাসহ মধ্যাঞ্চল হয়ে ভাটিতে মেঘনার মোহনা চাঁদপুর, বৃহত্তর বরিশাল, খুলনা উপকূলভাগ অবধি নদ-নদী, শাখা-প্রশাখা, খাল-খাঁড়িগুলোতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরে তুরাগ নদীর পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৩ সে.মি., মানিকগঞ্জ জেলার জাগিরে পুরাতন ধলেশ্বরী বিপদসীমার ৫ সে.মি. এবং তারাঘাটে কালিগঙ্গার পানি হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ২২ সে.মি. ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে। দক্ষিণ-পশ্চিমে গড়াই নদীর পানি আরো হ্রাস পেয়ে কামারখালীতে বিপদসীমার দুই সে.মি. ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সকালে আবারও নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫ সে.মি. এবং চাঁদপুরে মেঘনার মোহনায় ৪৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে বিকাল নাগাদ উভয় নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নেমেছে।

নদ-নদীর প্রবাহ পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল জানায়, দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে এবং তা আগামী ৭২ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। আজ বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকতে পারে।

এদিকে পাউবোর পূর্বাভাসে জানা গেছে, আগামী ৭ দিনের মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় পানি আরো হ্রাস পেয়ে সামগ্রিকভাবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো।
রাজশাহী: বরেন্দ্র অঞ্চলে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম না করায় চাষাবাদে তেমন বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারেনি। তাছাড়া বরেন্দ্র অঞ্চল উঁচু ভূমি হওয়ায় আমনের ক্ষেতে জমেনি বর্ষণের পানি। অনেকটা নির্বিঘ্নে চাষাবাদ চলছে আমনসহ বিভিন্ন শীতকালীন ফসলের। বর্ষণের পানি খানিকটা ভুগিয়েছে বিল এলাকার চাষিদের। পানিবদ্ধতার কারণে শত শত বিঘা অনাবাদি রয়েগেছে। পানি নিষ্কাশনের খালের মধ্যে ভাগ ভাগ করে মাছ চাষের জন্য পুকুর তৈরি ও পানি নিষ্কাশনের মুখ বন্ধ করায় পানি নদীতে যেতে পারেনি। ফলে ডুবে রয়েছে ফসলি জমি। পানিবদ্ধতার জন্য কৃষকরা দূষছেন অপরিকল্পিত পুকুর খননকে। পুঠিয়া দুর্গাপুরে কুড়ি হাজার একর ধানের জমিকে পুকুরে রূপান্তরিত করা হয়েছে। ফলে আশপাশের জমির পানি নামতে পারছে না।

পুঠিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বলেন, কয়েক বছর আগেও বর্ষা মওসুমে দুয়েকটি বিলের নিচু স্থান ছাড়া কোনো বাধা ছাড়াই নেমে যেত। এখন কিছু লোক রাজনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে তিন ফসলি জমিতেও অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করেছে। আবার কেউ কেউ পানি নিষ্কাশনে সরকারি খাল দখল করে পুকুরে বাঁধ নির্মাণ করেছে। ফলে বর্ষণের পানি নামতে না পারায় কৃষকরা চাষাবাদ করতে পারছে না।

সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী জানান, জেলার ৯টি উপজেলায় বন্যায় রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অসংখ্য বাড়িঘর রাস্তাঘাট, কালভার্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও তাঁত সমৃদ্ধ তাঁতপল্লী লক্ষাধিক তাঁতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছ। বন্যার্তরা পরিত্যাক্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে অনেক দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করছে। সবমিলিয়ে সিরাজগঞ্জের বানভাসি মানুষের অবস্থা নাকাল হয়ে পড়েছে। ত্রাণ তৎপরতাও অপ্রতুল বলে অভিযোগ রয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলায় চলতি বছরে রোপা আমন আবাদে সমগ্র জেলায় ৭ হাজার ১ শত ৯২ হেক্টর জমির ফসল ও প্রায় ১ হাজার ৫ শত হেক্টর জমির অন্যান্য ফসল বন্যার পানি ও ভারীবর্ষণে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমির ফসল হারিয়ে কৃষকরা এখন দিশেহারা। সেই সাথে বন্যায় জেলার ৫টি নদী তীরবর্তী এলাকায় নদীভাঙনে অসখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাস্তাঘাট, হাটবাজার কার্লভার্ট নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। যমুনার ভাঙনে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ রিক্ত, নিঃস্ব সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে।

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত রযেছে। ধরলা ও ব্রক্ষপুত্র নদীর পানি কিছুটা কমলেও ধরলা ও তিস্তা অববাহিকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রায় সাড়ে তিনশ’ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ এখনও পানিবন্দি হয়ে আছে। এক সপ্তাহের বেশি সময় থেকে পানিবন্দি থাকতে থাকতে চরম খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে। এসব মানুষ জ্বর ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকের হাত-পায়ে ঘা দেখা দিয়েছে। ধরলা অববাহিকার কিংছিনাই, জয়কুমোর ও বড়াইবাড়ী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৪০টি ঘরবাড়ি ধরলার পানির তীব্র স্রোতে ভেসে গেছে। মানুষের দুর্ভোগ এখনও কমেনি। দুর্গত এলাকায় খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও গবাদি পশুর খাদ্য সঙ্কট প্রকট হয়ে উঠছে। বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ও নৌকায় আশ্রয় নেয়া মানুষগুলো গবাদি পশুর সাথে থেকে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। এ সব মানুষ ত্রাণের আশায় অপেক্ষা করছে। জেলার বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে স্থানীয় এনজিও, বেসরকারি সংস্থা ও রাজনীতিবীদরা কেউই যায়নি এখন। এর মাঝেও বিভিন্ন এনজিওর কিস্তির টাকা তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বরগুনা থেকে জানান, জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বরগুনার বেড়িবাঁধের বাইরে এবং নিম্নাঞ্চল গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার পরিবার। ভেসে গেছে বসতবাড়ি ও পুকুরের মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাকা আউশ ধান ও বীজতলা। স্থানীয়রা জানায়, অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে সদর উপজেলার পশু হাসপাতাল সড়ক, কাঠপট্টি, গৌরিচন্না ইউনিয়নে মহাসড়ক এলাকা, খেজুরতলা আবাসন, ফুলতলা আবাসন, কুমড়াখালী গুচ্ছ গ্রাম, বড়ইতলা ফেরিঘাট পল্টন, বদরখালী এলাকা, ঢলুয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, গুলিশাখালী, মাঝেরচর, ফুলঝুড়ি বাজার কিছু অংশ, পাথরঘাটা, আমতলী, বামনা, বেতাগী, নলটোনা, বালিয়াতলী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল নদীর পার্শ্ববর্তী গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

ফরিদপুর: চলমান বন্যায় সবগুলো উপজেলায় বন্যায় ফসলি জমির ক্ষতি না হলেও ৬টি উপজেলার ১৩৫২ হেক্টর ফসলি জমি পানির তলে নিমজ্জিত। এতে ৫৩৫২ জন চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে, ফরিদপুর সদর, চরভদ্রাসন, মধুখালী, ভাঙা, আলাফাডাঙ্গাও সদরপুর উপজেলা। ফরিদপুর সদরের ফসলের অধীন মোট জমির পরিমাণ ১৪ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে নিমজ্জিত রোপা আমানের পরিমাণ ১৪৮ হেক্টর। চরভদ্রাসন উপজোয় ফসলের অধীন জমির পরিমাণ স্থানীয় আউশ ধানের অধীন জমির পরিমাণ ১৫৪৫ হেক্টর, এর মধ্য নিমজ্জিত ১৫ হেক্টর, আউশ ধান উফশী জমির পরিমাণ ১৪৫ হেক্টর। ভাঙা উপজেলার মোট রোপা-আমন ফসলি জমির পরিমাণ ৫৮৬০ হেক্টর, নিমজ্জিত ফসলি জমির পরিমাণ ৮৫০ হেক্টর, সবজির ফসলি জমির পরিমাণ ১৪০ হেক্টর, নিমজ্জিত ফসলি জমির পরিমাণ ৩০ হেক্টর, মোট জমির পরিমাণ ৬,০০০ হেক্টর, নিমজ্জিত ফসলি জমির মোট পরিমাণ ৮৮০ হেক্টর। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পরিমাণ ৩০৫০ জন। আলফাডাঙ্গা উপজেলায় রোপা আমনের আওতায় ফসলি জমির পরিমাণ ১৬০৫ হেক্টর, নিমজ্জিত জমির পরিমাণ, ৩৫ হেক্টর, সবজি ক্ষেতের পরিমাণ ৯৫ হেক্টর, নিমজ্জিত সবজি ক্ষেতের পরিমাণ ৫ হেক্টর।

মাদারীপুর: বন্যায় জেলার ৪টি উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের সমীক্ষায় এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে।

মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচলক মো: মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ক্ষতিগ্রস্তের মধ্যে নদী তীরবর্তী অঞ্চল শিবচর উপজেলায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। তারপরও মওসুমের শেষ পর্যন্ত ফসল উৎপাদন অব্যাহত থাকলে এ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। সে লক্ষ্যেই কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।

মানিকগঞ্জ: বন্যায় নদ-নদী তীরবর্তী এলাকায় হেক্টরের পর হেক্টর যেসব জমিতে আমন ধানসহ বিভিন্ন সবজির চাষ হয়েছিল তা পানিতে তলিয়ে গেছে।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত জেলায় ৭ হাজার ৯শ’ হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

এরমধ্যে ১ হাজার ৬৬৭ হেক্টর রোপা আমন, ৪ হেক্টর বীজতলা ও ৫ হাজার ৪৬৯ হেক্টর বোনা আমনসহ সর্বমোট ৭,৯০০ হেক্টর ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

রাজবাড়ী: বন্যায় রাজবাড়ীতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে এ বছরের বন্যায় ৪৫ হেক্টর জমির ফসলের পুরোপুরি ও ৩২৬ হেক্টর জমির ফসলের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে পুরোপুরি ক্ষতি বা নিমজ্জিত হয়েছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার সাড়ে ১২ হেক্টর জমির সবজি পাংশা উপজেলার আড়াই হেক্টর জমির সবজি ও গোয়ালন্দ উপজেলার ৩০ হেক্টর জমির সবজি।

রংপুর: দুই দফা বন্যায় রংপুরের ৩ উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তিস্তা নদীর পানি দফায় দফায় বৃদ্ধিতে চরাঞ্চলসহ নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের জমির রোপা আমন, আউশ ধান, বিভিন্ন রবিশস্য এবং শাক-সবজি বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, তিস্তার পানি বৃদ্ধির কারণে প্রথম দফায় জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে রংপুরের গঙ্গাচড়া, পীরগাছাসহ কাউনিয়া উপজেলার আংশিক এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় দফায় আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আবারো তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ওইসব এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। এতে এই তিন উপজেলার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমির রোপা-আমন ও রবিশস্যসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বিশেষ করে বেগুন, পটল, করলা, ঢ্যাঁড়শ, মরিচসহ বিভিন্ন শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রথম দফার বন্যায় কিছু কিছু এলাকায় আমনের বীজতলারও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

টাঙ্গাইল: সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কোথাও স্থিতিশীল আবার কোনো কোনো এলাকায় অবনতি ঘটেছে। জেলার বন্যাকবলিত ৮টি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। বিভিন্নস্থানে কাঁচা-পাকা রাস্তা, বাঁধ, কালভাট ও সেতু ভেঙে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে। বন্যায় জেলার ৮টি উপজেলার ৯৮০ হেক্টর জমির রোপা-আমন ধান বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ১৫৫ হেক্টর, কালিহাতী উপজেলায় ২০৫ হেক্টর, নাগরপুর উপজেলায় ৮০ হেক্টর, মির্জাপুর উপজেলায় ১৪০ হেক্টর, ভূঞাপুর উপজেলায় ১৩০ হেক্টর, গোপালপুর উপজেলায় ১২৫ হেক্টর, সখীপুর উপজেলায় ৪০ হেক্টর ও দেলদুয়ার উপজেলায় ১০৫ হেক্টর জমির রোপা আমন পানির নিচে রয়েছে।