বিমানবন্দরে নামার পরই নিখোঁজ হয়েছিলেন রিজওয়ান, কেউই কিছু জানে না

বিমানবন্দরে নামার পরই নিখোঁজ হয়েছিলেন রিজওয়ান, কেউই কিছু জানে না

আবু জাফর নিশ্চিত তার ছেলে রিজওয়ান হাসান রাকিন গত ৪ আগস্ট সকাল ৮ টা ৪০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমেছেন। এরপর তার আর কোনো খোঁজ নেই। তিনি কোথায় আছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ কিছু বলতেও পারছেন না।

রিজওয়ান মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর পড়তে যান সেখানে। তিনি বাবা-মায়ের সঙ্গে সৌদি আরবের রিয়াদের ছিলেন লম্বা সময়। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাংলাদেশে আসেন। উত্তরা হাই স্কুল থেকে এসএসসির পর নটরডেমে ভর্তি হন। দুই পরীক্ষাতেই জিপিএ ৫ পেয়েছেন। ইসলাম ধর্ম নিয়ে উচ্চতর লেখাপড়ার ইচ্ছে থেকেই আল আজহারে যান। বৃত্তি নিয়ে সেখানে লেখাপড়া করছেন। মুঠোফোনে সম্প্রতি বিয়েও করেছেন। ঢাকায় আসছিলেন বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারতে। মিশর থেকে দুবাই হয়ে ঢাকায় তাঁর সঙ্গে আসেন স্ত্রীর বড় ভাই মাহফুজুর রহমান।

রিজওয়ানের বাবা আবু জাফর বলেন, এমিরেটসের একটা ফ্লাইটে রিজওয়ান ও তাঁর স্ত্রীর বড় ভাই মাহফুজুর রহমান ওই দিন সকালে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। ছেলেকে আনতে গিয়েছিলেন ছেলের নানা সেলিম সারোয়ার। প্লেন থেকে নেমে মাহফুজ ফোনে তাকে পৌঁছানোর খবর জানান। এরপর সেলিম সারোয়ার আর তাদের খুঁজে পাননি। রাত সাড়ে ১১টার দিকে চোখ বাঁধা অবস্থায় মাহফুজকে তাদের যাত্রাবাড়ীতে নামিয়ে দেয় অজ্ঞাতনামা অপহরণকারীরা।

মাহফুজ তাদের জানান, অভিবাসন ডেস্ক পার হওয়ার পর তাদের দুজনকেই চোখ বেঁধে গাড়িতে তোলা হয়। তারপর অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে জেরা করা হয় তাদের। রিজওয়ানের রাজনৈতিক পরিচয় এবং কোনো অপরাধে জড়িত কি না তা জানতে চাওয়া হয়। অবশ্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় রিজওয়ান কোথায় ছিলেন তা মাহফুজ জানতে পারেননি।

এই ঘটনায় আবু জাফর বিমানবন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তিনি বলেন, ঘটনার সময় তিনি স্ত্রী-কন্যা নিয়ে সৌদি আরবে ছিলেন। ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান করতে তারাও দেশে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ছেলের নানা ঘটনার পরপরই বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গিয়েছিলেন। পুলিশ সেই ডায়েরি নেয়নি। তবে তিনি একটি নোট রেখে এসেছিলেন। পুলিশ জিডি নেয় গত ৩ সেপ্টেম্বর। তবে এখন পর্যন্ত কিছু জানায়নি।

বিমানবন্দর থানার উপপরিদর্শক ও জিডির তদন্ত কর্মকর্তা মো. আজিজুল হক বলেন, প্রথমে জিডি না নেওয়ার যে অভিযোগ পরিবার করেছে সে সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর জিডির তদন্ত যেভাবে করতে হয়, সেভাবেই করছেন। রিজওয়ানকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আবু জাফর বলেন, তারা এত দিন পর্যন্ত এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি। আশা ছিল জিজ্ঞাসাবাদের পর হয়তো ছেড়ে দেবে। এত দিনেও কেউ কিছু জানাতে পারছে না। তিনি থানায় গেছেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগেও (ডিবি) গেছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

এমজে/