সংসদীয় কমিটিকে অর্থ মন্ত্রণালয়

রিজার্ভ চুরির মামলার রায় পেতে দেরি হবে

রিজার্ভ চুরির মামলার রায় পেতে দেরি হবে

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক কাউন্টি সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা মামলার রায় পেতে আরো দেরি হবে। গতকাল সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে দেয়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কাউন্টি সুপ্রিম কোর্টে বাংলাদেশের দায়ের করা মামলাটির বিষয়ে লিখিত সিদ্ধান্ত দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন এর বিচারক। শুনানিতে তিনি মামলাটিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। এজন্যই লিখিত সিদ্ধান্ত দেয়ার কথা বলেন। আর সে কারণেই এ মামলার রায় দিতে সময় লাগবে বলে আদালতটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ১৪ অক্টোবর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। সেদিন আদালত পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানাবেন।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ডলার উদ্ধার হয়েছে। অবশিষ্ট অর্থ উদ্ধারে আইনি প্রক্রিয়া চলমান।

চুরির ঘটনার তিন বছর পর ২০১৯ সালে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি), দেশটির ক্যাসিনোসহ ১৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এবং তিন চীনা নাগরিককে আসামি করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতে মামলা দায়ের করে বাংলাদেশ। অভিযোগে বলা হয়, দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আসামিরা এ অর্থ চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে। অন্যদিকে মামলার বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট আদালতের এখতিয়ারের বাইরে উল্লেখ করে পাল্টা মামলা করে আরসিবিসিসহ সংশ্লিষ্টরা। তারা মামলাটি খারিজের আবেদনও করে। তবে বাংলাদেশের করা মামলায় পরের বছরের ২০ মার্চ রায় দেন আদালত। রায়ে বলা হয়, মামলাটি টেকনিক্যাল হওয়ায় তা আদালতে বিচারের জন্য গ্রহণ করা হয়নি। তবে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা দায়েরের সুযোগ রয়েছে বলেও আদালত মতামত দেন।

এর পরিপ্র্রেক্ষিতেই ২০২০ সালের ২৭ মে কাউন্টি সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি করা হয়। এ মামলায়ও বিবাদী করা হয়েছে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের। এরই মধ্যে মামলার বিবাদীদের কাছে হেগ কনভেনশন অনুযায়ী নোটিস পাঠানো হয়েছে। সবশেষ গত ১৪ জুলাই নিউইয়র্ক কাউন্টি কোর্টে ব্লুমবেরি, কিম ওং ও ইস্টার্ন হাওয়াইয়ের দায়ের করা খারিজের আবেদনের ওপর শুনানি হয়। সেখানেই আদালত জানান যে মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এটির লিখিত সিদ্ধান্ত দেয়া হবে ও এজন্য আরো সময় প্রয়োজন। এছাড়া ১৪ অক্টোবর যে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে সেদিন মামলার অন্য তিন বিবাদী আরসিবিসি, লরেনজো ট্যান ও রাউল ট্যানের দায়ের করা খারিজ আবেদনের ওপর শুনানি হবে। এর পরই মামলার পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে রায় দেবেন কাউন্টি আদালতের বিচারক।

এ রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশেও একটি মামলা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা ওই মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি। তবে মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এখনো আদালতে প্রতিবেদন দিতে পারেনি।

সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেও সুপারিশ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই সংসদীয় কমিটির বৈঠকে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। কমিটির সভাপতি মো. মোসলেম উদ্দিনের সভাপতিত্বে বৈঠকে সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে আইনি প্রক্রিয়া সম্পাদনের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধারের সবশেষ অবস্থাও তুলে ধরা হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, সাইবার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশের ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারের বিষয়টি গুরুত্ব বিবেচনায় সমন্বিত কার্যক্রম চলমান। অর্থ উদ্ধারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এ টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইনের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও সেখানে উল্লেখ করা হয়।-বণিক বার্তা