জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় নারীদের অংশীদারিত্ব বাড়ানোর আহ্বান হাসিনার

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় নারীদের অংশীদারিত্ব বাড়ানোর আহ্বান হাসিনার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান ভুক্তভোগী হিসেবে নারীরা এই ঝুঁকি মোকাবিলায় বর্ধিত অংশীদারিত্বের দাবিদার এবং তাদের ক্ষমতায়নের জন্য বিশেষ করে স্থিতিস্থাপকতা উন্নয়নে আরও সাহসী পদক্ষেপের প্রয়োজন।

‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট তাদের দুর্বলতা মোকাবিলায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের জন্য অবস্থান তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ,’ প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ডে কোপ২৬-এর সাইড লাইনে নারী এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ওপরে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় এ কথা বলেন।

তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সহনশীল কমিউনিটি গড়ে তুলতে বৈশ্বিক সংহতির জন্য এই কোপ২৬ সম্মেলনে সাহসী ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে নারী নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান। যেখানে নারী ও পুরুষ উভয়েই সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বেশকিছু সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের বেশিরভাগই মহিলা এবং মেয়ে।’

তিনি বলেন, ‘মানবসমাজে বিদ্যমান কাঠামোগত বৈষম্য, অন্তর্নিহিত সামাজিক রীতিনীতি নারীদের ওপরে জলবায়ু পরিবর্তনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রভাব সৃষ্টি করছে।’

সাধারণত বিশ্বজুড়ে নারীদের সম্পদের সমান সুযোগ নেই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক সমাজে তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই এবং তারা প্রায়ই স্বল্প বেতনের এবং অবৈতনিক চাকরি ও কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকে।’

তিনি বলেন, ‘এসব কারণে নারীদের ওপরে পুরুষদের তুলনায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বেশি পড়ে।’

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় নারীদের চরম বিপণ্নতা স্বীকার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার টেকসই উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ।

পরে প্যানেল প্রশ্নোত্তর পর্বে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করেছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্রোগ্রাম অব অ্যাকসন (এনএপিএ) অভিযোজন সমাধানের অংশ হিসেবে ব্যাপকভাবে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করেছে।’

বাংলাদেশের সরকার প্রধান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত নীতি, কৌশল এবং পদক্ষেপে লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করতে তার সরকার ন্যাশনাল ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড জেন্ডার অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছে।

সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে তিনি বলেন, তার সরকার জেন্ডার রেসপন্সিভ বাজেটিং (জিআরবি) চালু করেছে, এতে সকল নীতি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার মূলধারায় নারীর উন্নয়নে নারীদের জন্য প্রায় ৩০ শতাংশ বরাদ্দ করেছে।

বৈজ্ঞানিক সত্য হচ্ছে— পূরুষের চেয়ে নারী সহনশীল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের কঠিন পরিস্থিতিতে নারীরাই প্রথমে তাদের পরিবার পরিজনের যত্ন নিতে ঘুরে দাঁড়ায়।

তিনি বলেন, তার সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়ে নীতি নির্ধারণ থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ে নারীর সমান অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করেছে।’ জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রস্তুতি প্রোগ্রামে ৭৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত রয়েছে, এদের ৫০ শতাংশ নারী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দুর্যোগ প্রস্তুতি কর্মসূচি দুর্যোগে মৃতের সংখ্যা কমাতে সাফল্য অর্জন করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরিকল্পনা থেকে শুরু করে সম্পদ বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন পর্যন্ত প্রতিটি উদ্যোগে নারীদের চালকের ভূমিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে জেন্ডার সংবেদনশীল অভিযোজন এবং প্রশমন ব্যবস্থার জন্য অর্থায়ন হবে মূল বিষয়।’

শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ‘নারীদের চাহিদা ও অগ্রাধিকার দিতে অর্থের সমান সুবিধা নিশ্চিত করতে বিশ্বব্যাপী নারীদের কন্ঠস্বর সোচ্চার করার’ আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আমরা ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারিটি প্ল্যান’ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। এই পরিকল্পনা নারীদের জলবায়ু ঝুঁকি থেকে জলবায়ু সহনশীলতা এবং জলবায়ু সহনশীলতা থেকে জলবায়ু সমৃদ্ধির মূল ধারায় পৌঁছে দেবে।’ খবর: বাসস