বিকাশ এজেন্টদের মোবাইল নম্বর প্রতারকদের দিতেন তানভীর

বিকাশ এজেন্টদের মোবাইল নম্বর প্রতারকদের দিতেন তানভীর

প্রতারক চক্রের কাছে বিকাশ এজেন্টদের মোবাইল ফোন নম্বর সরবরাহ করতেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কর্মকর্তা তানভীর সিরাজী সিজার। তার কাছ থেকে পাওয়া নম্বরে ফোন করে নিজেদের বিকাশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রথমে পিন নম্বর সংগ্রহ করত প্রতারকরা। পরে এজেন্টের অ্যাকাউন্টে থাকা সব টাকা হাতিয়ে নিত তারা। আর নম্বর দেওয়ার বিনিময়ে তানভীর পেতেন ১৫ হাজার টাকা। টাঙ্গাইলের এক ভুক্তভোগীর মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এ ব্যাপারে জানতে পারে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অবশেষে মঙ্গলবার গাজীপুরের টঙ্গী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আজ বুধবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সাইদুর রহমান খান জানান, মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিকাশের কিশোরগঞ্জ জেলার টেরিটোরি অফিসার ছিলেন তানভীর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে মাস্টার্স করা এই ব্যক্তি অনেকদিন ধরেই প্রতারণা করে আসছিলেন। ২০১২ সালে তিনি বিকাশের টেরিটোরি ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেন। এর কিছুদিন পর থেকে তিনি এজেন্টদের নম্বর প্রতারকদের কাছে সরবরাহ শুরু করেন। এর আগে তিনি প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা, নেত্রকোনা ও গাজীপুর জেলার টেরিটোরি ম্যানেজার ছিলেন।

বিশেষ পুলিশ সুপার জানান, ফরিদপুরের একটি প্রতারক চক্রের সঙ্গে মিলে কাজ করতেন তানভীর। চক্রটি তার কাছ থেকে পাওয়া ফোন নম্বরে কল করে কমিশন দেওয়ার ব্যাপারে কথা বলত। সেজন্য পিন নম্বর প্রয়োজন বলে জানাত। পিন নম্বর পাওয়ার পর হাতিয়ে নিত অ্যাকাউন্টে থাকা সব টাকা। মো. রাসেল নামে এমনই এক ভুক্তভোগী তার বিকাশ এজেন্ট নম্বর থেকে ৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে টাঙ্গাইলে মামলা করেন। ওই মামলায় ছয় প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।

সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, বিকাশের আর কোনো কর্মকর্তা এতে জড়িত কি-না তা জানতে তদন্ত চলছে। বিষয়টি বিকাশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে।

এ ব্যাপারে বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন্স শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম সমকালকে বলেন, প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার তানভীর সিরাজীকে শৃঙ্খলাজনিত কারণে সেপ্টেম্বর মাসেই বিকাশ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি বিকাশ কর্মকর্তা নন। এই ঘটনার তদন্ত চলাকালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে আসছে বিকাশ।

তিনি আরও বলেন, বিকাশ যে কোনো ধরনের প্রতারণা প্রতিরোধে সব সময় জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে থাকে। সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে প্রচার-প্রচারণাসহ নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে বিকাশ। একইসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতারণা প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিয়ে থাকে বিকাশ।