বাসভাড়া বৃদ্ধি

‘এটা হিরক রাজার দেশের মতোই’

‘এটা হিরক রাজার দেশের মতোই’

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে নিয়মিত যাতায়াতকারী কয়েক লাখ যাত্রী আবারো জিম্মিদশার শিকার হয়েছেন। কোনো আগাম নোটিশ বা ঘোষণা ছাড়াই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাসভাড়া বৃদ্ধি করেছে নারায়ণগঞ্জের পরিবহণ মালিক সিন্ডিকেট।

হঠাৎ করেই এই রুটে চলাচলকারী বাস সার্ভিসের মালিকরা জনপ্রতি ১০ টাকা থেকে ১৪ টাকা ভাড়া বাড়িয়েছেন।

চরমভাবে ক্ষুব্ধ সাধারণ যাত্রীরা বলছেন, যেখানে লিটারে ১৫ টাকা মূল্য বেড়েছে, সেখানে জনপ্রতি ১৪ টাকা ভাড়া বৃদ্ধি করা শুধু অন্যায় নয়, রীতিমতো লুটপাটের শামিল।

অপরদিকে বাস মালিকদের দাবি, শুধু জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিই নয়, যানবাহনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের দাম বেড়ে যাওয়ায় সব বাস মালিকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। যদিও বাস মালিকদের এমন সিদ্ধান্তকে ‘স্রেফ হঠকারিতা’ বলে মন্তব্য করছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা।

তারা বলছেন, আবারো প্রমাণ হয়েছে আমরা পরিবহণ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি।

আর জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, কোনো প্রজ্ঞাপন ছাড়া অবৈধভাবে বাসভাড়া বৃদ্ধি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল অবধি নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে রাজধানীর উদ্দেশে চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহণের কাউন্টারগুলোতে গিয়ে জানা গেছে সাধারণ যাত্রীদের ক্ষোভের কথা। রাতারাতি অতিরিক্ত ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় দিনভর কাউন্টারে টিকিট কিনতে আসা যাত্রীরা বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। তবে নিরুপায় হয়ে বাড়তি ভাড়াতেই টিকিট কিনেছেন যাত্রীরা।

জানা গেছে, বুধবার নগরীর সিটি বন্ধন ও উৎসব পরিবহণের বাসভাড়া নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকার গুলিস্তান পর্যন্ত ছিল জনপ্রতি ৩৬ টাকা। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাসের টিকিট বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) শীতল পরিবহনে জনপ্রতি ৫৫ থেকে ভাড়া বাড়িয়ে ৬৫ টাকা করা হয়েছে। হিমাচল পরিবহনের ভাড়া বেড়েছে জনপ্রতি ৫ টাকা। অন্য পরিবহনগুলোর বাসভাড়াও ৫ থেকে ১০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে সরকারি পরিবহন বিআরটিসির নন-এসি বাসভাড়া পূর্বের ন্যায় ৩০ টাকাই রয়েছে। তবে বিআরটিসির ভাড়াও বৃদ্ধি করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।

এই রুটের এক যাত্রী চাকরি করেন ঢাকার একটি প্রাইভেট ব্যাংকে। তিনি জানালেন, আমরা চাকরিজীবীরা একটি নির্দিষ্ট বেতনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে। তার মধ্যে আজ কোনো নোটিশ ছাড়াই বাসভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হলো। লিটারে ১৫ টাকা ডিজেলের দাম বেড়েছে আর বাস মালিকরা প্রতি যাত্রীর কাছ থেকে লিটার অনুযায়ী সেই টাকা বাড়িয়ে পুষিয়ে নিচ্ছেন। প্রতিবাদ করতে গেলে হয় মার খেতে হবে, না হয় এর চেয়ে বেশি ভাড়ায় ঢাকা যেতে হবে। এটা হিরক রাজার দেশের মতোই।

আলমগীর হিরু চাকরি করেন একটি কম্পিউটার সার্ভিসিংয়ের দোকানে। সপ্তাহে কমপক্ষে ৪ দিন তাকে যন্ত্রাংশ কিনতে ঢাকা যেতে হয়। তিনি জানালেন, দোকান মালিক ১০০ টাকা দিয়েছেন, এর মধ্যে বাসভাড়া দিয়ে দিলে আমি যন্ত্রপাতি কিনতে যাবো কীভাবে আর সেগুলো নিয়ে আসবো কীভাবে। ফলে আমাকে টাকা বাড়িয়ে দিবে দোকান মালিক আর পুষিয়ে নিবে কাস্টমারের কাছ থেকে বেশি টাকা নিয়ে। এভাবেই শেষ পর্যন্ত সাধারণ জনগণের টাকা ঘুরে ফিরে যাবে বাস মালিকদের পকেটে।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. শাহাদাত বলেন, দুধ, চিনি, ভোজ্যতেল, ডাল সবকিছুর দাম তো আগে থেকেই বাড়তি। এখন ডিজেলের দামের সঙ্গে বাসভাড়াও বাড়ল। দেশে তো কোনো নিয়ম-কানুন নাই। যে যার মতো করে সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এদিকে বাসভাড়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। অনেকে বাসভাড়ার অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে রীতিমতো ডাকাতি বলেও মন্তব্য করেছেন।

অনেকে বলছেন, জ্বালানি তেলের সরকারের বর্ধিত দাম অনুপাতেও যদি ভাড়া বৃদ্ধি করে তা হলে ৩৬ টাকার ২৩ শতাংশ বর্ধিত মূল্য ৮ টাকা। যেখানে মোট ভাড়া দাঁড়ায় ৪৪ টাকা।

বাসভাড়া বাড়ানো প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিটি বন্ধন পরিবহণের চেয়ারম্যান নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন জানান, বাসের চাকাসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশের দাম বেড়েছে। সরকারিভাবে ফিটনেস পরীক্ষার ফিও বেড়েছে। সবকিছু বিবেচনায় কয়েক দিন পূর্বেই বিভিন্ন পরিবহণের বাস মালিকরা বাসভাড়া বাড়ানোর জন্য আলোচনায় বসেছিলেন। তবে গত রাতে ডিজেলের দাম বাড়ার খবর পেয়ে সব বাস মালিক ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। তবে সরকারি দিক-নির্দেশনা আসলে সেই অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে কথা বলতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী আইনুল হুদার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অফিসে গিয়ে জানা গেছে, তিনি ঢাকায় জরুরি মিটিংয়ে গেছেন।

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানিয়েছেন, ভাড়া বৃদ্ধির কোনো সরকারি প্রজ্ঞাপন এখনো আমরা পাইনি। যদি কেউ অবৈধভাবে বাসভাড়া বৃদ্ধি করে তবে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।