ব্যবসা করবে না ১৩৩ খেলাপি গার্মেন্ট

ব্যবসা করবে না ১৩৩ খেলাপি গার্মেন্ট

তৈরি পোশাক খাতের ১৩৩টি প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি। বিভিন্ন ব্যাংক এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে মোট পাওনা ১০৩৮ কোটি টাকা। রুগ্নতার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে অপারগতা জানিয়েছে। পাশাপাশি ঋণের দায় এখন সরকারের ওপর দিতে চায়। ঋণসহ সমুদয় অর্থ মওকুফ চেয়ে পোশাক খাত থেকে বিদায় নিতে চায় এসব প্রতিষ্ঠান। এগুলোর পক্ষে সুপারিশ করে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। পাশাপাশি অনুলিপি দেওয়া হয়েছে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

এ প্রসঙ্গে মন্তব্য নিতে সোমবার বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। একই দিন ওই ফোন নম্বরে এ প্রতিবেদকের পরিচয় দিয়ে খুদেবার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু মঙ্গলবার রাত ৭টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তিনি কোনো সাড়া দেননি।

তবে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম যুগান্তরকে বলেন, পোশাক খাতের রুগ্ন শিল্পের ঋণ মওকুফের ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সম্মত হয়েছে। জাতীয় বাজেটে এর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এরপরও এ সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণ জানা নেই। তিনি বলেন, নানা কারণে শিল্প রুগ্ন হয়। ভবিষ্যতে আরও হতে পারে। কিন্তু সরকারের একটি এক্সিট প্ল্যান থাকা দরকার। ইচ্ছাকৃত কেউ রুগ্ন হয়ে ঋণের টাকা অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে কিনা-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, না এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কারখানাগুলো রুগ্ন হওয়ার কারণ খুঁজতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটি বলেছে, এগুলো ভাড়া বাড়িতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে। ব্যাংকিং নিয়ম-কানুন, আন্তর্জাতিক ব্যবসার নিয়ম-কানুন অধিকাংশ উদ্যোক্তারই অজানা ছিল। নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা, বাড়িভাড়া ও গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে অসমর্থ হয়ে পড়ে। ঋণখেলাপি হয়ে পড়ায় তারা নতুন ব্যাংকঋণ পায়নি। বকেয়া ভাড়ার কারণে বাড়ির মালিকরা কারখানার মেশিনারিজ দখল করে নেন। ঋণদাতা ব্যাংকগুলো দখলে নেয় কারখানার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি। তাদের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে ব্যাংকগুলো মামলাও করেছে। তবে নানা আবেদন ও সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালে ২৭৯টি কারখানাকে এক্সিট সুবিধা দিয়েছিল সরকার। ওই সময় ১৩৩ কারখানা মালিক এ সুবিধা নেননি। যারা এখন সে সুবিধা নিতে চাচ্ছেন।

সূত্র জানায়, খেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ব্যাংকের মূল ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৫৫২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ঋণের বিপরীতে অনারোপিত সুদ ৩৭২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা এবং আরোপিত সুদের পরিমাণ ১ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। আর আয় খাতে নীত সুদের পরিমাণ ৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূল ঋণ পাওনা রয়েছে ৪৫৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের পাওনা প্রায় ১৩ কোটি টাকা, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকের ৮০ লাখ টাকা। বাকি ১৩টি ব্যাংকের পাওনা হচ্ছে ২১৭ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, এ মোট ঋণ ৫৫২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, আয় খাতে নীত সুদ ১৪৭ কোটি টাকা ও মামলা খরচ ৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা অর্থাৎ মোট ৬৮৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা ঋণ মওকুফের অনুরোধ জানিয়ে ৩ অক্টোবর বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। সেখানে তিনি বলেন, ১৯৮৫ সাল থেকে শতভাগ রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনসহ বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে অবিশ্বাস্য ও যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে আসছে। নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে ১৯৮৫ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিজিএমইএর ২৭৯টি পোশাক শিল্প রুগ্ন এবং বন্ধ হয়ে যায়। আপনার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ঐকান্তিক ইচ্ছায় (২০১০-১২) অর্থবছরে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সংসদে বাজেটে ঋণ অবসায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। পরবর্তীকালে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার কারণে ১৩৩টি শিল্প অবসায়ন সম্ভব হয়নি।

চিঠিতে তিনি আরও বলেন, বিজিএমইএর সভাপতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৩৩টি রুগ্ন শিল্পের মোট ৬৮৬ কোটি টাকা মওকুফের পক্ষে মতামত প্রদান করে।

ওই চিঠিতে ফারুক হাসান বলেন, রুগ্ন এই ১৩৩ কারখানার মালিকদের মধ্যে অনেকে মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধাসহ ১৩৩টি কারখানার মালিকদের সার্বিক অবস্থা খুবই করুণ, কর্মহীন ও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের মাথা গোঁজার শেষ সম্বলটুকু ব্যাংকের নিকট দায়বদ্ধ। তাদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধে অর্থ ঋণ আদালতের মামলা আছে, গ্রেফতারি পারোয়ানাসহ অনেকেই শারীরিক ও মানসিকভাবে কর্মক্ষমতা হারিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। রুগ্ন শিল্প মালিকদের পক্ষে কারখানা চালু বা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

এমজে/