কুয়েতের কোম্পানি থেকে মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না শ্রমিকরা

কুয়েতের কোম্পানি থেকে মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না শ্রমিকরা

কুয়েতে প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করলেও তারা কোম্পানিগুলো থেকে চুক্তি মোতাবেক ন্যায্য পারিশ্রমিক (বেতনভাতা) পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। একটি অভিযোগে জানা গেছে, কুয়েতের এক কোম্পানিতে কর্মরত চার শতাধিক বাংলাদেশী কর্মী দীর্ঘদিন বেতন পাচ্ছেন না। নেই আকামাও। অনেকে আবার এ নিয়ে অভিযোগ দেয়ার পরও দূতাবাস থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না বলে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এ অবস্থায় যারা কোম্পানি থেকে সঠিকভাবে বেতনভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পাচ্ছে না, তাদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার জন্য এবার অনলাইন ফরমে অভিযোগ দেয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস।

কুয়েতের আলছারি ক্লিনিং কোম্পানির শ্রমিক মো: ইমরান হোসেন তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, ‘আমি দীর্ঘ ছয় মাস ধরে বেতন পাই না। আকামা নেই এমন চার শতাধিক কর্মী রয়েছে এখানে। এর জন্য মকফরে গেছি অনেকবার, শোনে গেছি দুই বার, এম্বাসিতে গেছি কতবার তা মনেও নেই। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। মনে হচ্ছে আমাদের কোম্পানির কাছে বাংলাদেশ এম্বাসি বড় অসহায়! তাহলে আমরা তার কাছ থেকে কিভাবে সহায়তা পাবো? তিনি আরো অভিযোগ করেন, আজ এক মাস হলো কোনো ডিউটি নেই। কিছু বলারও নেই। কাকে বলব? যাকেই বলি সে শুধু সান্ত¡না দেয়। কোম্পানি সময় নেয় দুই সপ্তাহ পর একটা বেতন দেবে। আর আমাদের এম্বাসি বলে, তোমরা ডিউটি করো। এক সপ্তাহ পর বেতন দিবে। কিন্তু এটা বলে না, ছয় মাসের বকেয়া বেতন পুরোটা পরিশোধ করতে হবে। ‘হায়রে বাংলাদেশ এম্বাসি, জয় হোক তোমার’ বলে ব্যঙ্গ করেন হতাশ ইমরান।

এমন অভিযোগ শুধু আলছারি কোম্পানির ইমরানের নয়, অনেকেই কোম্পানি থেকে ন্যায্য বেতন না পেয়ে দূতাবাসের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তবে অনেকে আবার ভয়ে কোম্পানির বিরুদ্ধে কথাই বলতে চাচ্ছেন না। সেই সংখ্যাও কিন্তু নেহাত কম নয় বলে জানা গেছে।

মো: নাসির নামে একজন প্রবাসী আক্ষেপ করে বলেন, কুয়েতে অধিকাংশ কোম্পানিতে বাংলাদেশীদের কোনো না কোনো সমস্যা আছে, অন্য দেশের লোকের সাথে এমন সমস্যা হয় না। সব দেশের এম্বাসি তাদের শ্রমিকদের কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে, সে বিষয়ে সময়ে সময়ে খোঁজ খবর নিচ্ছে। কিন্তু আমাদের এম্বাসি কেউ মইরা গেলেও খোঁজ নেয় না! তাই আমাদের আল্লাহর ওপর ভরসা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলে হতাশা প্রকাশ করেন নাসির।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে গতকাল দুপুরে কুয়েতের একটি কোম্পানিতে কর্মরত শ্রমিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি আশপাশে কোম্পানির লোকজন থাকায় ভয়ে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করে শুধু বলেন, পরে কথা বলব।

এর আগে কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর বিভাগ থেকে কুয়েত প্রবাসীদের বলা হয়, আপনাদের অনেকেই কুয়েতের বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজে নিয়োজিত আছেন। আপনারা কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে কোম্পানির কাছ থেকে বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধাদি পাওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর অনিয়ম না হলেও মাঝে মধ্যে আপনাদের বেতনভাতা ও অন্যান্য সুবিধার ব্যাপারে অনিয়ম ঘটে থাকে বলে দূতাবাসের কাছে অভিযোগ আসে। অনেক ক্ষেত্রে দূরবর্তী এলাকা থেকে অনেকে দূতাবাসে এসে অভিযোগ জানাতে পারেন না। বিষয়টি উপলব্ধি করে ইতঃপূর্বে দূতাবাসের ফেসবুক পেজে অনলাইন অভিযোগ ফরমের অভিযোগ লিপিবদ্ধ করার জন্য আহবান জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাতে কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছ থেকে তেমন সাড়া মেলেনি। তবে প্রতিদিন প্রবাসী বাংলাদেশীরা বিভিন্ন কোম্পানিতে ঠিকভাবে বেতন পাচ্ছে না বলে পৃথক পৃথকভাবে দূতাবাসে অভিযোগ নিয়ে আসছেন। এই অবস্থায় অনলাইন অভিযোগ ফরমে আপনার অভিযোগ (যঃঃঢ়:// নফবসনধংংুশঁধিরঃ.ড়ৎম /ংঁঢ়ঢ়ড়ৎঃ/) লিপিবদ্ধ করার জন্য অনুরোধ জানানো হলো। আপনার কাছ থেকে থেকে পাওয়া অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে দূতাবাস প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। তবে কোনো অসত্য বা আংশিক সত্য কিংবা অন্যের অভিযোগ লিপিবদ্ধ না করার জন্য দূতাবাস থেকে কর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। প্রবাসী শ্রমিকদের দেয়া তথ্য গোপনীয় তথ্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে বলে দূতাবাসের পক্ষ থেকে প্রবাসী শ্রমিকদের জানানো হয়।

দূতাবাসের এমন উদ্যোগের পর এনামুল হক ভূইয়া নামের একজন কুয়েত প্রবাসী দূতাবাসের সব কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানান। এরপর তিনি জানতে চান, অভিযোগ দেয়ার পরও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া না হলে তখন কিন্তু কোম্পানির দ্বারা আমাদের হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হতে হবে। জিয়া উদ্দিন নামের অপর এক প্রবাসী বলেন, দূতাবাসের এটা একটা ভালো উদ্যোগ। অপর প্রবাসী বলেন, আমাদের কোম্পানি বেতন দেয় ৭৫ দিনার। কিন্তু ১৫ দিনার করে ফেরত নিয়ে নেয়। এসব অভিযোগের বিষয়ে গতকাল বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো: শহিদুল আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতে বাংলাদেশে কর্মী পাঠানোর গতি খুবই ধীর। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছে মাত্র ৪৭৬ জন। এর মধ্যে অক্টোবর মাসে গেছে ২৪৫ জন। আর জানুয়ারি মাসে গিয়েছিল মাত্র একজন। দেশটিতে প্রায় চার লাখের মতো কর্মী কর্মরত রয়েছেন বলে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ধারণা করছেন। দেশটিতে ভিসা সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের উৎপাত বেশি রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে, যার কারণে এখানে কর্মীরা গিয়ে প্রতিনিয়ত হয়রানি ও প্রতারিত হন। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী শ্রমিকদের।

এমজে/