৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণের মামলা গ্রহণ নয়, পুলিশকে আদালত

৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণের মামলা গ্রহণ নয়, পুলিশকে আদালত

ধর্ষণের ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পর পুলিশকে ধর্ষণের মামলা না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকার সাত নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক। রাজধানীর বনানীতে রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের মামলায় রায়ের পর্যবেক্ষণে ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার ওই পরামর্শ দেন।

পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা প্রভাবিত হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছেন। ভিকটিমদের ডাক্তারি রিপোর্টে সেক্সুয়াল ভায়োলেশনের কোনো কথা উল্লেখ নেই। ভিকটিমের পোষাকে পাওয়া ডিএনএ নমুনার সঙ্গে আসামিদের ডিএনএ নমুনা মেলেনি। মামলার দুই ভিকটিম আগে থেকেই সেক্সুয়াল কাজে অভ্যস্ত। এতে আদালতের ৯৪ কার্যদিবস নষ্ট হয়েছে। এরপর থেকে পুলিশকে এ বিষয় সতর্ক থাকতে হবে।

আদালত আরও বলেন, ঘটনার ৩৮ দিন পর মামলা ফাইল করা হয়। ৩৯ দিন পর করা হয় মেডিকেল পরীক্ষা। ভিকটিমদের পোশাকে ধর্ষণর আলামত পাওয়া যায়নি। ধর্ষণ প্রমাণে মেডিকেল রিপোর্ট লাগে, সেটাতেও প্রমাণিত হয়নি।

পুলিশকে ভর্ৎসনা করে এবং ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তা দিয়ে পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ঘটনার ৩৮ দিন পর এসে তারা বললো 'রেপড হয়েছি', বিষয়টি তদন্ত কর্মকর্তার অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত ছিল, তা না করে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতের সময় নষ্ট করেছেন।

এসময় ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পরে ধর্ষণের মামলা পুলিশকে না নেওয়ার পরামর্শ দেন বিচারক।

বৃহস্পতিবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোছা কামরুন্নাহারের আদালত রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের মামলায় আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ জনকে খালাস দেন। খালাস পাওয়া অন্যরা হলেন- সাফাত আহমেদের বন্ধু সাদমান সাকিফ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন।

২০১৭ সালের ২৮ মার্চ রাতে বনানীর দ্যা রেইনট্রি হোটেলে সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। তরুণীদের অভিযোগ অনুযায়ী, এই রেইনট্টি হোটেলেই ঘটে ধর্ষণের ঘটনা।

ঘটনার এক মাসের বেশি সময় পর ৬ মে বনানী থানায় মামলাটি করেন এক তরুণী।

তিনি অভিযোগ করেন, ওই হোটেলে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাকেসহ তার বন্ধুকে রাতভর ( রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত) আটকে রেখে সাফাত ও নাঈম জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। অন্য তিনজন তাতে সহায়তা করেন।

এ ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজপথে মানববন্ধন করে বিভিন্ন সংগঠন। মামলার পর ১১ মে সিলেট থেকে সাফাত ও সাদমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্য আসামিদেরও পর্যায়ক্রমে গ্রেপ্তার করা হয়।

ধর্ষণ মামলার একমাস পর ৭ জুন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমি আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

অভিযোগপত্রে আসামি সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১) ধারায় ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়। মামলার অপর তিন আসামি সাদমান সাকিব, আলী ও বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধেও একই আইনের ৩০ ধারায় ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়।

তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৩ জুলাই অভিযোগ গঠনের পর শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় ৪৭জন সাক্ষীর মধ্যে ২২ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। এর আগে গত ৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের তারিখ ১২ অক্টোবর নির্ধারণ করেন আদালত। কিন্তু রায় প্রস্তুত না হওয়ায় তা দুদফা পিছিয়ে ১১ নভেম্বর ধার্য করেন আদালত।

মামলার বিবরণ অনুযায়ী, অভিযোগকারী তরুণীদের বন্ধু শাহরিয়ার ঘটনার দিন রেইনট্রি হোটেলে ছিলেন। তাকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়। আর মামলা দায়েরের সময় ওই তরুণীকে সহায়তা করেন সাফায়াতের সাবেক স্ত্রী মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা। সম্প্রতি মাদকের মামলায় গ্রেফতার হয়ে পিয়াসা এখন কারাগারে রয়েছেন।