আগামী নির্বাচনের দিকে নজর রাখছে ইইউ

আগামী নির্বাচনের দিকে নজর রাখছে ইইউ

ঢাকায় নবনিযুক্ত ইউরোপিয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চালর্স হোয়াইটলি বলেছেন, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়ার দিকে নজর রাখছে ইউরোপিয় ইউনিয়ন। ইইউ প্রত্যাশা করে বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু পর্যবেক্ষণ নিয়ে সরকারের সঙ্গে নানা পর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ইইউ।

সোমবার কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিক্যাব আয়োজিত 'ডিক্যাব টকে' তিনি এ কথা বলেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত হোয়াইটলি জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে ইইউ। ইউরোপে বৈধ অভিবাসন উৎসাহিত করতে ভবিষ্যতে আরও কিছু নীতিগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে ইইউ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিক্যাব সভাপতি পান্থ রহমান এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈনুদ্দিন।

ইইউ রাষ্ট্রদূত তার প্রারম্ভিক বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ তার কাছে নতুন নয়। এক যুগ আগে তিনি ঢাকায় ইইউ মিশনে প্রায় তিন বছর দায়িত্ব পালন করে গেছেন। আবারও ঢাকায় একই মিশনে নতুন দায়িত্ব নিয়ে এসে খুবই আনন্দিত তিনি।

চালর্স হোয়াইটলি বলেন, এক যুগ যে বাংলাদেশ দেখেছিলেন, তার তুলনায় এখনকার বাংলাদেশের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে অবকাঠামোগত উন্নয়নে বড় পরিবর্তন দেখা গেছে।

ইইউকে বাংলাদেশের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ইইউ এবং বাংলাদেশের মধ্যে বহুমাত্রিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষা, পরিবেশ, প্রতিরক্ষা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, বাণিজ্য সহযোগিতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলদেশের সঙ্গে নানা মাত্রায় কাজ করছে ইইউ।

ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সঙ্গে এ সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে চালর্স হোয়াইটলি বলেন, 'যে কোনো দেশের জাতীয় নির্বাচন শুধু একটি ইভেন্ট নয়, এটি একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া। ইইউ গণতান্ত্রিক চর্চা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতার নীতি থেকে বিভিন্ন দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নজর রাখে। সেই সূত্রে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়ার দিকেও নজর রাখছে ইইউ।'

তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশে এর আগেও সফলভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দৃষ্টান্ত রয়েছে। ইইউ প্রত্যাশা করে বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত থাকবে।'

বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, 'গত অক্টোবর মাসে ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ইইউ আলোচনায় ইইউয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ইইউ নিজেদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। বাংলাদেশের প্রতিনিধিও নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়ার বিষয়ে ইইউ নিজেদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। কারণ সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইইউ মানবাধিকার রক্ষা এবং মত প্রকাশের অধিকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু অংশ সংস্কারের বিষয়ও নিয়েও ইইউয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চলছে। মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চার বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশের সুশীল সমাজের সঙ্গেও ইইউয়ের যোগাযোগ রয়েছে।'

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'ইইউ কোনো দেশেই কোনো সাম্প্রদায়িক বা গোষ্ঠীগত হামলা, সংঘাত সমর্থন করে না। বাংলাদেশে গতমাসে যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয়েছে তা খুবই দুঃখজনক। এ ধরনের সহিংসতা যেন আর কখনও সংঘটিত না হয়, সেজন্য বাংলাদেশ সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেবে বলে ইইউ প্রত্যাশা করে। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে।'

রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'মিয়ানমারের ওপর ইইউয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নীতিগত অবস্থান থেকে দেশটিতে মানবাধিকার রক্ষার কাজে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে ইইউ। ইইউ বিশ্বাস করে রোহিঙ্গাদের মিয়ানামারে স্বেচ্ছায় ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের মধ্য দিয়েই এ সংকটের স্থায়ী সমাধান হবে। এজন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে ইইউ।'

এ সংকট মোকাবেলায় গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করে চালর্স হোয়াইটলি বলেন, 'এ সংকট সমাধানে বাংলাদেশের পাশে আছে ইইউ।'

অভিবাসন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'ইইউ সব সময়ই বৈধ অভিবাসনকে উৎসাহিত করে এবং অবৈধ উপায়ের অভিবাসনের চেষ্টাকে নিরুৎসাহিত করে। তবে ইইউভুক্ত বিভিন্ন দেশের নিজস্ব অভিবাসন নীতি রয়েছে, সে অনুযায়ী তারা অন্য দেশের নাগরিকদের অভিবাসন সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়, এখানে ইইউ হস্তক্ষেপ করে না।'

চালর্স হোয়াইটলি বলেন, 'ইউরোপে বৈধ অভিবাসন সুবিধা বাড়ানোর জন্য ভবিষ্যতে আরও কিছু নীতিগত পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা ইইউয়ের আছে।'

ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়া সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত হোয়াইটলি বলেন, 'জিএসপি প্লাস সুবিধার ক্ষেত্রে ইইউয়ের একটি নীতি রয়েছে। সেই নীতিগত শর্ত পূরণ করলে একটি দেশ ইউরোপের বাজারে এ সুবিধা পায়। এ সুবিধার বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। জিএসপি প্লাস সুবিধার বিষয়ে নীতি সংস্কারেরও কাজ চলছে।'

প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউয়ের দীর্ঘদিনের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সবচেয়ে এগিয়ে। শান্তিরক্ষার এ অবস্থানই বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউয়ের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার মূল ভিত্তি।'