বাংলাদেশে স্বচ্ছ ও অবাধ নির্বাচন চায় ব্রিটেন

বাংলাদেশে স্বচ্ছ ও অবাধ নির্বাচন চায় ব্রিটেন

ব্রিটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ ডেভেলপমেন্ট মিনিস্টার লর্ড তারিক আহমেদ বলেছেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে বিশ্বের প্রতিটি দেশে স্বচ্ছ ও অবাধ নির্বাচন প্রয়োজন। বাংলাদেশেও স্বচ্ছ ও অবাধ নির্বাচন প্রত্যাশা করে যুক্তরাজ্য।

সোমবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য : অংশীদারত্বের অগ্রগতি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

ব্রিটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ মন্ত্রী বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে নানা ধরনের চর্চা প্রয়োজন। চর্চার মাধ্যমেই গণতন্ত্র স্থির হয়। একটি দেশ কোনদিকে যাবে সেটা দেশটির জনগণ ঠিক করবে। বাংলাদেশ কোনদিকে যাবে সেটা কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ ঠিক করবে। তবে কোনো দেশ যদি তাদের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে চায় সেখানে অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি জরুরি।’

‘উন্নয়নে শক্তিশালী বিরোধীদল আর সুশীল সমাজ যেমন গুরুত্ব রাখে তেমনি নির্বাচনে স্বচ্ছতা থাকা জরুরি। তাই যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন হবে, এটাই প্রত্যাশা করে যুক্তরাজ্য।’ বক্তব্যে যোগ করেন তারিক আহমেদ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে তিন দিনের সফরে আজ সোমবার সকালে ঢাকায় আসেন ব্রিটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ ডেভেলপমেন্ট মিনিস্টার লর্ড তারিক আহমেদ। তিনি সংঘাতে যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে যুক্তরাজ্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রতিনিধিও।

ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশে সফরকালে লর্ড আহমেদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমসহ সরকারের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

সফরের শুরুর দিনে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দেওয়া বক্তৃতায় ব্রিটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ মন্ত্রী বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক, জলবায়ু, শিক্ষা, রোহিঙ্গা ইস্যু, সম্প্রতি অনুষ্ঠেয় কপ-২৬ সম্মেলনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

লর্ড আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা-লন্ডনের বন্ধুত্বের অগ্রযাত্রা উল্লেখ করার মতো। এ পঞ্চাশ বছরের দুই দেশের সম্পর্কসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে অর্জন- পরবর্তী পঞ্চাশ বছরে আরও বেশি সফলতা আসবে বলে আমি আশাবাদী। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যেতে চায়।’

এ সময় তিনি জানান, বাংলাদেশের শিক্ষার উন্নয়নে যুক্তরাজ্য ৫৪ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা দেবে।

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশের নেতৃত্বকে স্বাগত জানিয়ে লর্ড আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) চেয়ারের দায়িত্ব পেতে চলেছে। আমরা আশা করি বাংলাদেশ খুব ভালোভাবে এর নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাবে।’

জলবায়ু প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রশংসা করে লর্ড আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ জলবায়ু মোকাবিলা করে সারাবিশ্বের কাছে অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়।’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে লর্ড আহমেদ বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বড় একটা চ্যালেঞ্জ নিয়েছে বাংলাদেশ। মানবতার বড় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ যে সংকট মোকাবিলা করছে আমরা তা অবগত আছি। যুক্তরাজ্য এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের সঙ্গে আছে, থাকবে সবসময়। কিছু রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাওয়ায় তাদের সেখানে স্থানান্তর প্রক্রিয়াটি ভালো সিদ্ধান্ত, তবে তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক মতৈক্য জরুরি।’

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যুক্তরাজ্য আরও জোরালো ভূমিকা রাখবে- এমটাই প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ।’ এ সময় বাংলাদেশকে রেড লিস্ট থেকে বাদ দেওয়ায় ব্রিটিশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান সচিব।

ব্রিটিশ হাইকমিশন জানায়, ব্রিটিশ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ মন্ত্রীর এ সফরে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে আগামী ৫০ বছরের বন্ধুত্ব, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, নিরাপত্তা সহযোগিতা বিষয়ে এই সফরে আলোচনা করবেন। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা প্রকল্পে যুক্তরাজ্যের আকাঙ্ক্ষা নিয়েও আলোচনা করবেন তিনি।