সিপিডির ওয়েবিনার

‘মধ্যম আয়ের ঋণ ফাঁদ’ থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ

‘মধ্যম আয়ের ঋণ ফাঁদ’ থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ যাতে একটি ‘মধ্যম আয়ের ঋণ ফাঁদ’-এ না পড়ে তার জন্য এখুনি সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা এ জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার জোরদার করাসহ অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বাড়ানো ও আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

স্বাধীনতা ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি আয়োজিত চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে দ্বিতীয় দিনে গতকাল রাতে আলোচনায় এ কথা বলেন বক্তারা। দ্বিতীয় দিনের প্রথম অধিবেশনে প্যানেল আলোচনার বিষয় ছিল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রূপান্তর।

প্রফেসর ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে এতে মোট তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। প্রথম প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক বেসরকারি খাত বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ আখতার মাহমুদ। দ্বিতীয় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান এবং দ্বিতীয় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান।

সিনারজিস অ্যান্ড টিপিং পয়েন্টস-পলিসি অ্যাকশন্স, মার্কেট রিসপোন্সেস অ্যান্ড ইকোনমিক গ্রোথ ইন বাংলাদেশ শীর্ষক নিবন্ধে আখতার মাহমুদ বলেন, গত কয়েক দশকে সরকারি বিনিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ ছাড়া উন্নয়নের ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ‘চলক’ কাজ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এ সময়ে মোবাইল ফোনের ব্যাপক গ্রাহক তৈরি হয়েছে এবং মোবাইল আর্থিক সেবার বিস্তৃতি ঘটেছে। এর পাশাপাশি রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধিও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুততর করেছে।

‘বাংলাদেশ ট্রানজিসনিং টু ও সাসটেইনেবল পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশন ফিউচার’ প্রবন্ধে মোস্তাফিজ আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের আমরা কি ‘মিডল ইনকাম ডেট ট্রাপ’-এ পড়তে যাচ্ছি। কারণ বৈদেশিক ঋণ ক্রয়েই বেড়ে চলেছে, এক সময় যা ছিল দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার, এখন তা ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উপনীত হয়েছে। আমরা সবাই জানি, এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে আমরা অনেক সুবিধা হারাব। এ সময় আমরা বিদেশ থেকে কম সুদে ঋণ পাব না। তখন সেই ঋণের সুদ ৫-৬ শতাংশ হতে পারে। অন্যদিকে ঋণ পাবার শর্তও কঠিন হবে। তিনি এ অবস্থা এড়ানোর জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সম্পদ আহরণ জোরদার করাসহ আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়ানোর ওপর গুরুত্বরোপ করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি আসিয়ানভুক্ত দেশের সাথে বাণিজ্য বাড়ানোর পরামর্শ দেন।

প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জ-শীর্ষক নিবন্ধে ড. সেলিম রায়হান দেশের বিভিন্ন খাতে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে এখনো নিয়মকানুনের অভাব রয়েছে, সিএজি অফিসেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এখানে সংস্কার বিরোধী লবি বেশ কার্যকর রয়েছে। তিনি এ অবস্থা দূরীকরণের জন্য শক্তিশালী রাজনৈতিক ইচ্ছার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

এর ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের সব ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা রয়েছে। এখানে অর্থনৈতিক খাতে যেমন দুর্বলতা রয়েছে, তেমনি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানিক খাতে দুর্বলতা রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, দেশের আমলা প্রচুর। তারা বেতন পেলেও যে অনুযায়ী কাজ করে না।

অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্যে ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি কালো চিত্র আকা হলেও গত কয়েক দশকে এ দেশ অনেক এগিয়েছে। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি দেশে পরিণত হয়েছে। এখন বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ হলেও সামনে আনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আলোচনা আরো অংশ নেন, বিআইডএসের সাবেক ডিজি ড. কে এ এস মুর্শেদ, ও ড. নাজনীন আহমেদ।