এবার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ হতে পারে মালয়েশিয়া থেকে

এবার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ হতে পারে মালয়েশিয়া থেকে

বাংলাদেশে সিন্ডিকেট না হলেও কর্মী প্রেরণের কৌশল পাল্টে এবার সেই ‘সিন্ডিকেট’ হতে পারে মালয়েশিয়া থেকে। এমনি আশঙ্কা প্রকাশ করছেন জনশক্তি প্রেরণের সাথে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ রয়েছে, গতবারের যে সিন্ডিকেট মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণ করেছিল, ‘এবার সেই ১০ জনের তালিকার কেউই নেই নতুন হতে যাওয়া মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের ‘সিন্ডিকেটে’। এবার ওই তালিকা থেকে ছয়জনকে বাদ দেয়া হয়েছে। আর বাকি চারজন রয়েছে ভিন্ন নামে।’

এ দিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় মালয়েশিয়ায় শ্রমিক প্রেরণের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর নিজস্ব ডাটা ব্যাংক থেকে কর্মী প্রেরণের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সেই প্রক্রিয়া এখনো শুরুই করতে পারেনি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় তথা সারা দেশে থাকা বিএমইটির ডেমো অফিস থেকে। এসব অফিস একজন সহকারী পরিচালকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।

গতকাল জনশক্তি প্রেরণের সাথে সম্পৃক্ত একজন ব্যবসায়ী মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের নতুন ফর্মুলার ধারণার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, আমাদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী এবার কর্মী পাঠাতে কোনো ধরনের সিন্ডিকেট হোক তা চাচ্ছেন না। আমরাও কিন্তু চাচ্ছি না। তবে এখন দেখার বিষয় এমওইউ চুক্তি হওয়ার পরে কিভাবে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো হয়। তার মতে, এবার মালয়েশিয়া রিক্রুটিং এজেন্সি (এমআরআই) লোকাল নামে কোম্পানিগুলো থেকে মার্কেটিং করে চাহিদাপত্র সংগ্রহ করবে। এরপর সেই চাহিদাপত্র মালয়েশিয়া সরকার মনোনীত সফটওয়্যার কোম্পানির অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে অটো চলে যাবে ঢাকার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিএমইটির সার্ভারে। একইভাবে ওই চাহিদাপত্রটি চলে যাবে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের সার্ভারে। এরপরই সেই চাহিদাপত্র যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে সত্যায়িত করবে। এরপরই বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক যেতে পারবে।

মালয়েশিয়ার যে সফটওয়্যার কোম্পানি এবার অনলাইন সিস্টেমে কাজ করবে সেই কোম্পানির নাম কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগের আমিন নূরের বেস্টিনেট কোম্পানি (এফডব্লিওসিএমএস) থাকবে নাকি অন্য কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার হবে সে ব্যাপারে ওই ব্যবসায়ী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গতবার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে যে ১০ সদস্যর সিন্ডিকেট হয়েছিল এবার সেই তালিকার একজনও শ্রমবাজারে সিন্ডিকেটে না-ও থাকতে পারে? শোনা যাচ্ছে গতবারের ১০ জনের মধ্যে চারজন নতুন কোনো নামে থাকতে পারে। সিন্ডিকেট যদি না হয় তাহলে পুরনো চারজন কী কারণে থাকবে এমন প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য ওই ব্যবসায়ী বলেন, এবার আসলে বাংলাদেশে থেকে কোনো ধরনের সিন্ডিকেট করে মালয়েশিয়ায় কর্মীপ্রেরণ করা যাবে না। আমাদের মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, এবার ওপেন ফর অল হবে। তবে মালয়েশিয়া থেকে এখন যাকে কাজ দেয়া হবে তারাই কিন্তু মূলত কাজ করতে পারবে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে অন্য একজন ব্যবসায়ী নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, এবার মালয়েশিয়ায় কর্মী যাবে সম্পূর্ণ দালালমুক্ত সিস্টেমে। খরচ হবে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। দালালদের ওপর নির্ভরশীল হলেই তখন অভিবাসন ব্যয় চার-পাঁচ লাখ টাকা বেড়ে যায়। তাই মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের চাহিদা পূরণ করা হবে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর নিজস্ব ডাটাবেজ থেকে। যদিও এখনো পর্যন্ত সারা দেশের বিএমইটির এডি অফিস থেকে কর্মীদের ডাটা এন্ট্রির কার্যক্রম শুরুই হয়নি। ওই ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিস্ট্রিক অফিসগুলোতে মালয়েশিয়াগামীরা তাদের নাম এন্ট্রি করাতে গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এখন এ সংক্রান্ত নির্দেশনা আসেনি। বন্ধ আছে। ব্যবসায়ীদের মতে, ডাটা এন্ট্রির কার্যক্রম আজ থেকেই শুরু হওয়া উচিত। কারণ এবার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুললে এক বছরে দুই লাখ শ্রমিক যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে, যদি ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক থাকে একই সাথে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা না দেয়।

গতকাল মালয়েশিয়া থেকে একজন অভিবাসন বিশ্লেষক বলেন, যে প্রক্রিয়ায় হোক আগে শ্রমবাজারটা খুলুক। এরপর সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে কিভাবে শ্রমিক পাঠানো হবে। তারা এও বলছেন, এবার যদি কোনো কারণে শ্রমবাজারটি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তাদের ওপর সাধারণ ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ হতে পারেন বলে তাদের আশঙ্কা।