কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, চলছে গলাকাটা বাণিজ্য

কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, চলছে গলাকাটা বাণিজ্য

টানা তিনদিনের ছুটিতে কক্সবাজারে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম হয়েছে। পর্যটকের এই ঢলকে কেন্দ্র করে সবখানেই চলছে গলাকাটা বাণিজ্য।

প্রশাসনের যথাযত নজরদারি না থাকায় এ অব্যবস্থাপনা চলছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।

রিকশায় চড়লে বাড়তি ভাড়া, হোটেলের কক্ষ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন-চারগুন বেশি, খাবার হোটেলগুলোতেও নেওয়া হচ্ছে অস্বাভাবিক দাম, সবমিলিয়ে এক অরাজক পরিবেশের মধ্যে পড়েছি বলে মনে হচ্ছে।

ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বললেন ঢাকার পর্যটক মমিনুর রহমান।

তিনি বলেন, কোথাও ফাঁকা না পেয়ে শুক্রবার দুপুরে কলাতলীর একটি হোটেলে বউ-বাচ্চাসহ খাবার খেতে যাই। খাবারের যে মান তাতে মনে হয়েছে দাম দ্বিগুণেরও বেশি নেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর থেকে আসা পর্যটক সুমন রহমান বলেন, আঁধা ঘণ্টারও বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর কলাতলীর শালিক রেস্তোরাঁয় চেয়ার পেয়েছি। কিন্তু এত কষ্টে খাবার খেয়েও মোটেও ভাল লাগেনি। মান অনুযায়ী খাবারের দাম অনেক বেশি মনে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এখানকার শহরের ভেতরে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটোরিকশাগুলো পর্যটকদের কাছ থেকে ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় করছে। এখানে প্রশাসনের কোনো ধরনের নজরদারি আমরা দেখিনি।

কক্সবাজার যেহেতু পর্যটন কেন্দ্র এখানে সারা বছরই বাইরের লোকজন আসবে। অন্তত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ভাড়ার তালিকা টানিয়ে দেওয়া দরকার। যোগ করেন সুমন রহমান।

অন্যদিকে আবাসিক হোটেলগুলোতেও মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন অনেক পর্যটক। পর্যটকদের অভিযোগ, যেগুলোর ভাড়া এক দেড় হাজার টাকা হওয়ার কথা এই কদিন সেই কক্ষগুলোর ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা।

শুক্রবার সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে কথা হয়, কুমিল্লা থেকে আসা পর্যটক মো. আকবর আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিজয় দিবসের ছুটিসহ টানা তিনদিনের ছুটি পাওয়ায় কক্সবাজারে প্রচুর পর্যটক এসেছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পর্যটকদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। কিন্তু এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কোনো নজরদারি আমাদের চোখে পড়েনি।

তবে এসব অনিয়ম প্রতিরোধে জেলা প্রশাসনের একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো. সৈয়দ মুরাদ ইসলাম।

তিনি জানান, টানা তিনদিনের ছুটিতে কক্সবাজারে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আগমনের সুযোগে কিছু অসাধু চক্র নানা অজুহাতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে। এ জন্য শুক্রবার সারাদিন হোটেল-মোটেল জোনে অভিযান নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। এ সময় হোটেল সি-পার্লের দুটি কক্ষে থাকা দুজন পর্যটকের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় এবং দুটি হোটেলকে জরিমানা করা হয়। এরমধ্যে হোটেল সি-পার্লকে পাঁচ হাজার ও হোটেল ওপেলাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

পর্যটকদের কোনো ধরনের অভিযোগ থাকলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্রে জানানোর জন্য মাইকিং করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, পর্যটক হয়রানি বা অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ আসলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে। তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।