বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খলা, ভোগান্তি

বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খলা, ভোগান্তি

পূর্ব প্রস্তুতি ও অগ্রিম ফ্লাইটের শিডিউল নতুনভাবে ঠিক না করেই হঠাৎ রাতে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ করায় চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এতে দেশের এই প্রধান বিমানবন্দরে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে দেশের দূর-দূরন্ত থেকে আসা বিদেশগামী যাত্রীরা। ৮ ঘণ্টা ফ্লাইট বন্ধ থাকার কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরাও। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তির পাশাপাশি বিমানবন্দরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে বোর্ডিং পাস ও ইমিগ্রেশনের সময় লম্বা লাইন হওয়ায় যাত্রী জট বাড়ছে।

টার্মিনালের দ্বিতীয় তলার বহির্গমনে ২ থেকে ৬ নম্বর গেটে দেখা দিয়েছে চরম বিশৃঙ্খলা। এই লাইন কখনো কখনো দ্বিতীয় তলার উঠার সিঁড়ি পর্যন্ত ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যাত্রীদের বিমানবন্দরে বিদায় জানানোর জন্য তাদের সঙ্গে একাধিক স্বজন আসার কারণে বিমানবন্দরের সামনে লোকজনের জটলা বেড়েছে।

গাড়ির পার্কিংয়ের স্থানে লোকজন থাকার কারণে বিমানবন্দরের সড়কের আশপাশে যানজট বেড়েছে। রাতে ফ্লাইট বন্ধ থাকার কারণে যে সব যাত্রীর সকালে ফ্লাইট রয়েছে তারা অনেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগেই বিমানবন্দরে উপস্থিত হচ্ছেন। কিছু দেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিমানবন্দরে করোনা টেস্ট বাধ্যতামূলক হওয়ায় যাত্রীরা আট থেকে ১২ ঘণ্টা আগেই হাজির হচ্ছেন।

অনেকেই বিমানবন্দরের টার্মিনালে রাতযাপন করছেন। তাদের স্বজনেরা আবার বিমানবন্দরের সামনের মূলফটকে বসে সময় কাটাচ্ছেন। রাতে ফ্লাইট বন্ধ থাকার কারণে যারা বিদেশ থেকে দেশে আসছেন তাদের ইমিগ্রেশনেও লম্বা লাইন হওয়ায় ভোগান্তিতে আছেন খোদ বিমানবন্দরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও। বহির্গমন টার্মিনালের পাশাপাশি জট লেগেছে অভ্যন্তরীণ টার্মিনালেও। এ ছাড়াও যাত্রীদের চাপের কারণে বিমানবন্দরের ট্রলির সংকট থাকায় লাগেজ-ব্যাগেজ নিয়ে আরও এক নতুন ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। কর্তৃপক্ষ বলছে, যেসব যাত্রীর ফ্লাইট রাতে ছিল তাদের ফ্লাইট দিনে করা হয়েছে। দিনের এবং রাতের যাত্রীদের চাপের কারণে বিমানবন্দরে যাত্রী জট বেড়েছে। তারা শৃঙ্খলা আনার কাজ করছেন।

শাহজালাল বিমানবন্দরের সংস্কার কাজের জন্য প্রতিদিন রাত ১২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। নতুন হাইস্পিড কানেকটিং ট্যাক্সিওয়ে বানানোর জন্য চলতি মাসের ১০ই ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের মার্চের ১০ তারিখ পর্যন্ত রাতে ফ্লাইট বন্ধ থাকবে। এতে ফ্লাইট শিডিউল বিপর্যয় নেমে এসেছে বিমানবন্দরে। দেশের প্রধান এই বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ প্রত্যেক দিন ২৫০টি ফ্লাইট ওঠানামা করে। এর মধ্যে শুধু রাতে ওঠানামা করে থাকে ১৫ থেকে ২০টি। এ বিষয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ কাপ্টেন এএইচএম তৌহিদুল আহসান মানবজমিনকে জানান, ‘উন্নয়নের জন্য রাতের ফ্লাইটগুলো দিনে নতুন করে শিডিউল করা হয়েছে।’

গতকাল সকালে শাহজালাল বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, বিমানবন্দরের টার্মিনালের সামনে মানুষের জটলা। গাড়ি রাখার স্থানে লোকজন থাকার কারণে ওই গাড়িগুলো বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের সামনের সড়কে রাখা হয়েছে। হ্যান্ড মাইকে এপিবিএনের সদস্যরা বার বার সেখান থেকে লোকজনকে চলে যেতে বললেও কেউ তেমন কর্ণপাত করেননি। সামনের অংশে অনেক যাত্রী ও তাদের স্বজনেরা চাদর পেতে বসে ছিলেন। বিশেষ করে টার্মিনাল-২ এর সামনে প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বিমানবন্দরের ভেতরে গিয়ে আরও ভোগান্তির দৃশ্য দেখা গেছে। ট্রলির সংকট থাকার কারণে অনেক যাত্রী মাথায় ও কাঁধে করে তাদের পণ্য ও মালামাল বহন করছেন। বিমানবন্দরের কোনো কোনো স্বেচ্ছাসেবকেরা টাকার বিনিময়ে তাদের মালামাল বিমানবন্দরের ভেতরে নিয়ে গেছে। এ ছাড়াও বিমানবন্দরের করোনা পরীক্ষার সময়ও লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে।

জামালপুর থেকে আসা কাতারগামী যাত্রী মো. তোফায়েল জানান, আমার ফ্লাইট রাতে ছিল। কিন্তু, পরে জানতে পারি যে, বিকালে ফ্লাইট। আবার ফ্লাইট পরিবর্তন হবে কিনা তার আশঙ্কায় আমি রাতে বিমানবন্দরে চলে আসি। তিনি আরও জানান, আমাকে বিদায় দিতে আমার সঙ্গে আমার বড় ভাই, স্ত্রী ও বাচ্চা এসেছে। তারা রাতে বিমানবন্দরে থেকেছে। যাত্রীর চাপের কারণে করোনা পরীক্ষায় তাকে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

মানিকগঞ্জ থেকে আসা আশরাফুল হক জানান, তিনি দুবাই যাবেন। তারও রাতে ফ্লাইট ছিল। সকাল ৯টাই করোনা টেস্টের জন্য দাঁড়ালেও কোনো সিরিয়াল পাননি। অনেক যাত্রী লাইনে ঢুকে যাওয়ার কারণে লাইন লম্বা হয়েছে।

সৌদি থেকে আসা লিটন নামে এক যাত্রী জানালেন, সকাল ৮টায় বিমানবন্দরে তার ফ্লাইট অবতরণ করেছে। বিমানবন্দরে এসে তিনি বের হয়েছেন বিকাল ৩টায়। বিমানবন্দরের আনুষঙ্গিক ২ ঘণ্টার কাজ তার লেগেছে ৭ ঘণ্টা। ইমিগ্রেশন ও লাগেজে তার অনেক সময় কেটে গেছে। শুধু তার নয়, অন্য যাত্রীদের একই সমস্যা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালন করা এপিবিএনের সদস্য সেলিম জানান, দিনে সব ফ্লাইট হওয়ার কারণে বিমানবন্দরে যাত্রীদের জট লেগেছে। তাদের শৃঙ্খলা মানাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বিমানবন্দরের স্বেচ্ছাসেবক সাব্বির জানান, বহির্গমন ও বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। যাত্রীদের পণ্য ডেলিভারি দিতে তাদের অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে। অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কর্মঘণ্টার বাইরে গিয়ে ডিউটি করছেন।

এ বিষয়ে বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জিয়াউল হক জানান, ফ্লাইট বন্ধ থাকার কারণে ইমিগ্রেশনে চাপ পড়েছে। তারা শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কাজ করছেন। তিনি আরও জানান, করোনা পরীক্ষায় যাত্রীদের সময় বেশি লাগছে। এ ছাড়াও ট্রলির স্বল্পতা থাকার কারণে টার্মিনালে যাত্রীরা দ্রুত টার্মিনাল থেকে বিদায় নিতে না পারার কারণে যাত্রীদের জট লেগে যাচ্ছে।