অভিজিতের হত্যাকারীরা অন্য দেশে গা ঢাকা দিয়েছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

অভিজিতের হত্যাকারীরা অন্য দেশে গা ঢাকা দিয়েছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ব্লগার, লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত জঙ্গিগোষ্ঠী আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান ও বরখাস্ত হওয়া মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক, জঙ্গিনেতা আকরাম হোসেন ওরফে আবির ওরফে আদনান ভিন্ন কোনো দেশে ‘গা ঢাকা দিয়েছেন’ বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের সামনে ‘মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘ব্লগার অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত হয়েছে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের একটি গ্রুপ এই হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছে। ওই সময় আমাদের দেশে জঙ্গিগোষ্ঠীর উত্থান হয়েছিল। তবে আমাদের দেশের নিরাপত্তায় যারা আছে তারা জঙ্গিদের সকল কর্মকাণ্ড ব্যর্থ করে দিয়েছে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকায় পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড ও একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মেজর জিয়া ও আকরামকে আমরা খুঁজছি। কিন্তু আমাদের কাছে তথ্য আছে তারা অন্য কোনো দেশে গা ঢাকা দিয়ে আছে।’

এ সময় ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদ, মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয়, জেলা প্রশাসক আব্দুল লতিফ, পুলিশ সুপার গোলাম আজাদ খান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দীন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলামসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

গত সোমবার বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায় হত্যায় দণ্ডিত পলাতক দুই ঘাতক সৈয়দ জিয়াউল হক ও আকরাম হোসেনসহ এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে ৫০ লাখ ডলার (৪২ কোটি ৫০ লাখ টাকা) পুরস্কার ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আওতাধীন ‘রিওয়ার্ড ফর জাস্টিস’ (আরএফজে) অফিস এই পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে।

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় হামলার শিকার হন অভিজিৎ রায়। চাপাতির আঘাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। হামলায় অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদও গুরুতর আহত হন। ওই হামলার দিনই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে একই অঙ্কের পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।

গত ফেব্রুয়ারিতে আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার একটি আদালত। রায়ে জঙ্গিগোষ্ঠী আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান ও বরখাস্ত হওয়া মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক, জঙ্গিনেতা আকরাম হোসেন ওরফে আবির ওরফে আদনানসহ পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন জিয়াউল হক ও আকরাম হোসেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আরএফজে অফিস তাদের ঘোষণায় বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অভিজিৎ রায়কে হত্যা এবং তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদকে গুরুতর আহত করার ঘটনা সম্পর্কে তথ্যের জন্য পুরস্কার দেওয়া হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ ঘটনায় সম্পৃক্ত যে কাউকে যেকোনো দেশে গ্রেপ্তার বা সাজা হতে পারে এমন তথ্যের জন্য ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার অনুমোদন করেছেন।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক টুইটেও ওই পুরস্কার ঘোষণার কথা জানানো হয়েছে। সেখানে অভিজিৎ ও রাফিদা আহমেদের ছবিসংবলিত একটি পোস্টার প্রকাশ করা হয়।

পোস্টারে বলা হয়েছে, ‘২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ঢাকায় একটি বইমেলা থেকে ফেরার পথে আল-কায়েদাসংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসীরা অভিজিৎ রায়কে হত্যা এবং তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদকে আহত করে। বাংলাদেশের আদালতে ছয়জনকে দোষী সাব্যস্ত করে হামলায় তাঁদের ভূমিকার জন্য সাজা দেওয়া হয়েছে। ওই অভিযুক্তদের দুজন সৈয়দ জিয়াউল হক (ওরফে মেজর জিয়া) এবং আকরাম হোসেনের অনুপস্থিতিতে বিচার হয়েছিল এবং এখনো তাঁরা পলাতক। যদি আপনার কাছে হক, হোসেন বা ওই হামলায় জড়িত অন্য কারও বিষয়ে তথ্য থাকে, তাহলে নিচের নম্বরে সিগন্যাল, টেলিগ্রাম বা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে আমাদের কাছে তা পাঠান। আপনিও পুরস্কার পেতে পারেন।’

তথ্য দেওয়ার জন্য ‍+১-২০২-৭০২-৭৮৪৩ নম্বরটি উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।