ডিজিটাল আইন সংশোধনে গণমাধ্যম, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের আহবান টিআইবির

ডিজিটাল আইন সংশোধনে গণমাধ্যম, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের আহবান টিআইবির

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পর্যালোচনা ও সংশোধনের জন্য গঠিত কমিটিতে গণমাধ্যমকর্মী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

এ ছাড়া, আইনের চোখে সবাই সমান—এই নীতির কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে শুধু সাংবাদিক নয়, ডিজিটাল আইনে করা মামলায় দেশের সাধারণ নাগরিকদেরও তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার না করার দাবি জানিয়েছে টিআইবি। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে আজ শুক্রবার এসব দাবি জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইনটির নিবর্তনমূলক ধারাসমূহ সংশোধন করা বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যকে সতর্ক সাধুবাদ জানাচ্ছে টিআইবি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার হয়েছে স্বীকার করে, বিশ্বের সেরা চর্চাসমূহের অনুসরণে আইনের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী।

বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের শুরু থেকেই এটির বেশকিছু ধারা বিশেষ করে ২৫ ও ৩১ নিয়ে গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়েছিল। মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য এটি খড়্গ্‌হস্ত হওয়ার শঙ্কাও প্রকাশ করা হয়েছিল; কিন্তু সরকার কর্ণপাত করেনি। এটির অপব্যবহার রোধে আইনমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেটিরও বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায়নি; বরং অল্পদিনেই আইনটি ভিন্নমত দমন ও ভয়ের পরিবেশ তৈরির কার্যকর হাতিয়ার হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ও সরকারের প্রশাসন যন্ত্রের কাছে। এমন বাস্তবতায় আইনটির অপব্যবহার রোধে যেকোনো ধরনের সংশোধনে গঠিত কমিটিতে সব অংশীজন, বিশেষ করে গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা জরুরি। নয়তো নতুন উদ্যোগও ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কা মোটেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করলে সাংবাদিকদের তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করা হবে না- এমন সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হলেও অন্তর্ভুক্তিমূলক নয় উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আর্টিকেল নাইনটিনের তথ্য অনুযায়ী, এ আইনে ২০২১ সালের ১১ মাসে মামলা হয়েছে ২২৫টি; যেখানে ৪ শয়ের বেশি মানুষকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৬৬ জনকেই আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আবার এসব মামলার বড় অংশই হয়েছে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কটূক্তি করার জন্য। অর্থাৎ আইনটি শুধু গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধই নয়, সাধারণ নাগরিকদের ভিন্ন চিন্তা ও সরকারের সমালোচনা রোধে ব্যবহারের সুস্পষ্ট নজির তৈরি করেছে; যার বড় উদাহরণ এই আইনে করা মামলায় কারাগারে থাকা লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু। তাই শুধু সাংবাদিক নয়, সাধারণ নাগরিকদের ক্ষেত্রেও এ আইনে তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তারের নীতি থেকে সরে আসতে হবে।

একই সঙ্গে ডিজিটাল আইনে সাংবাদিকদের তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার না করার যে সিদ্ধান্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর আলোচনার পর মৌখিকভাবে থানাগুলোতে জানানো হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে, তা অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার ও সবার জন্য সমানভাবে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।