সরকারি খাল দখল করে আ.লীগ কার্যালয়, নির্মাণ হচ্ছে বহুতল ভবন

সরকারি খাল দখল করে আ.লীগ কার্যালয়, নির্মাণ হচ্ছে বহুতল ভবন

দখল হয়ে যাচ্ছে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের কর্তিমারী বাজারের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র সরকারি খাল। ‘ভুয়া’ দলিলে একতরফা রায় নিয়ে সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত এই খাল ভরাট করে চলছে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ। পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়। খালটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পাশাপাশি হওয়া সত্ত্বেও দখলদারদের উচ্ছেদে কার্যকর কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা।

ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ কাগজপত্রের মাধ্যমে উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সুরুজ্জামাল মিয়া ও জামায়াতের সাবেক নেতা নুরুল ইসলাম মাস্টার খালটির মালিকানার বিষয়ে একতরফা রায় পেলেও আজ পর্যন্ত নামজারি করতে পারেননি। আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও নিষ্পত্তির আগেই দখল হয়ে যাচ্ছে খালটি।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্থানীয় রাজনীতির মাঠে জামায়াত-আওয়ামী লীগ বিরোধ থাকলেও সরকারি খাল দখলে একাট্টা হয়েছেন সুরুজ্জামাল মিয়া ও নুরুল ইসলাম মাস্টার। তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সুযোগসন্ধানী কয়েকজন অসাধু ব্যবসায়ী খাল দখল করে স্থায়ী স্থাপনা তৈরি করছেন। যা এখনও চলমান। রাষ্ট্রপক্ষ ওই জমির মালিকানা ত্যাগ না করলেও দখল উচ্ছেদ না করে রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছে।

জানা গেছে, ইউনিয়ন ভূমি অফিস লাগোয়া কর্তিমারী বাজারের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খালটি সরকারি ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত। সুরুজ্জামাল মিয়া ও জামায়াতের সাবেক নেতা নুরুল ইসলাম মাস্টার মিলে ‘নকল’ দলিলে মালিকানা দাবি করে আদালতে একতরফা রায় পান। তবে তার আগে থেকেই খালটি দখলে নেন তারা। এই দুই ব্যক্তি ছাড়াও সরকারি খালটি দখল করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় তৈরি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কর্তিমারী বাজারের পলিথিন ব্যবসায়ী রকিকুল ইসলাম খালটির একাংশ দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন।

জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম খাল দখল করে ভবন নির্মাণের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমার দোকান ঘর আছে। আমি কেন খাল দখল করবো। ওই জায়গায় মন্ত্রীর (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের) এক বড় ভাই (সুরুজ্জামাল মিয়া) ভবন নির্মাণ করছেন।’

তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যবসায়ী রফিকুল আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ্জামাল মিয়াকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করছেন।

যাদুরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন সবুজ বলেন, খালটি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ্জামাল মিয়া ও জামায়াত নেতা নুরুল ইসলাম মাস্টার মিলে ‘ভুয়া’ কাগজপত্র দাখিল করে আদালত থেকে একতরফা রায় নিয়েছেন। জায়গাটি হাটবাজারের সম্পত্তি। তারা ডিসিআর মূলে ওই জায়গায় দলীয় কার্যালয় তুলেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি কয়েক বছর আগে ভূমি অফিস থেকে ডিসিআর কেটে রেখেছিলাম। ওই ডিসিআর মূলেই এক পাশে দলীয় কার্যালয় তোলা হয়েছে। তবে সুরুজ্জামাল মিয়া ও নুরুল ইসলাম মিলে নকল কাগজপত্র দিয়ে একতরফা রায় নিয়ে সরকারি জায়গা দখলে নিয়েছেন। আমরা চাই কর্তৃপক্ষ দ্রুত আপিল করে সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করুক।’

ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, যুগ যুগ ধরে কর্তিমারী বাজারের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে খালটি। কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে ভূমি অফিসের জায়গাসহ কর্তিমারী বাজারের বেশির ভাগ জায়গা প্রভাবশালী ভূমিদস্যু চক্রের দখলে চলে যাচ্ছে। যা উদ্ধারে তৎপরতা নেই স্থানীয় প্রশাসনের।

এ বিষয়ে জামায়াত নেতা নুরুল ইসলাম মাস্টার বলেন, ‘রায় পেলেও আমি খাল দখলে যাইনি। সুরুজ্জামাল ঘর করতেছেন তার সঙ্গে কথা বলেন।’ কাগজ জালিয়াতি করে একতরফা রায় নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে এই জামায়াত নেতা বলেন, ‘এই অভিযোগ সঠিক নয়। আর সেটা আদালত বুঝবে।’

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ্জামাল মিয়ার সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

যাদুরচর ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে একতরফা রায়ে জমিটি ব্যক্তি মালিকানায় গেলেও আমরা আপিলের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’

ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা গোলাম মোর্তূজা আল ফারুক বলেন, ‘খালটি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। তিন-চার মাস আগে আমরা আপিলের জন্য কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা জানি না।’

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান বলেন, ‘এটা আইনগতভাবে তারা করতে পারেন না। আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো।’

জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ মুন্সিখানা (আরএম) শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার গোলাম ফেরদৌস বলেন, ‘আপিলের কাগজপত্র আমাদের শাখায় এলে স্বাভাবিকভাবেই সেটা আদালতে চলে যাওয়ার কথা। সে হিসেবে আপিল হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।’