তিন গুণ বেশি দামে হাজার কোটি টাকার এলএনজি আমদানি

তিন গুণ বেশি দামে হাজার কোটি টাকার এলএনজি আমদানি

আন্তর্জাতিক বাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। ফলে এক বছরের কম সময়ের ব্যবধানে তিন গুণ বেশি দামে এক কার্গো বা ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। নিউজিল্যান্ডের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এই গ্যাস আমদানিতে ব্যয় হবে এক হাজার সাত কোটি টাকা।

জানা গেছে, গেল জুন মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ছিল ১০ ডলারের কাছাকাছি। এখন তাতে ব্যয় করতে হচ্ছে প্রায় ৩০ মার্কিন ডলার। এলএনজি আমদানির প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আজ রোববার বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, দেশে ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা পূরণের জন্য কাতার গ্যাস ও ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের (ওকিউটি) সাথে দু’টি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে এলএনজি আমদানির পাশাপাশি স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি কেনা হচ্ছে। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার লক্ষ্যে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) প্রস্তুত করে আইন ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং নেয়া হয় এবং সে এমএসপিএটি চূড়ান্তও করা হয়েছে। পরবর্তীতে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির নীতিগত অনুমোদনের ভিত্তিতে পেট্রোবাংলা এমএসপিএ অনুস্বাক্ষরকারী ১৬টি প্রতিষ্ঠানের সাথে চূড়ান্ত করা এমএসপিএ স্বাক্ষর করা হয়।

সূত্র জানায়, দেশের নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে স্পট মার্কেট থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ২ কার্গো এলএনজি সংগ্রহের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) নীতিগত অনুমোদন দেন।

সূত্র মতে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্পট মার্কেট থেকে কমপক্ষে ১ (এক) কার্গো এলএনজি সংগ্রহ করা প্রয়োজন। চলতি মাসের ১৩ তারিখে আরপিজিসিএল থেকে এমএসপিএ স্বাক্ষরকারী ১৬টি প্রতিষ্ঠানের কাছে ২০২২ সালের জন্য স্পট ভিত্তিতে ১ (এক) কার্গো এলএনজি সরবরাহের দরপ্রস্তাব আহ্বান করে ই-মেইল পাঠানো হয়। দরপত্র পাঠানোর শেষ সময় ছিল ২০২২ সালের ২৩ জানুয়ারি।

সূত্র জানায়, এ সময়ের মধ্যে কম দরপ্রস্তাব দাখিলকারী তিনটি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। কমিটি প্রাপ্ত দরপত্রগুলো কারিগরি ও আর্থিকভাবে মূল্যায়ন করে। এর পর সেই সুপারিশসংবলিত একটি প্রতিবেদন প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটির (পিপিসি) কাছে দাখিল করে। ওই প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় তিন কোম্পানির মধ্যে সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড প্রতি এমএমবিটিইউর দাম ২৯.৭৭০০ ডলার উল্লেখ করে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছে। অন্য দু’টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সিঙ্গাপুরের ভাইটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড ৩৪.৯৯২১ ডলার এবং সুইজারল্যান্ডের এওটি ট্রেডিং এজি নন-রেসপন্সিভ হয়।

এ অবস্থায় প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটির ২৪ জানুয়ারি তারিখের সভায় দরপ্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরপ্রস্তাবকারী প্রতিষ্ঠান টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেডের প্রস্তাবিত একক দর (২৯.৭৭০০ ডলার/ এমএমবিটিইউ) গ্রহণ এবং ব্যয়িতব্য টাকায় ক্রয় প্রস্তাব সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানোর সুপারিশ করেছে।

জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, এই এলএনজি ক্রয়ে কোভিড-১৯-এর জন্য সরাসরি অথবা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দরপ্রস্তাব গ্রহণ না করে এলএনজি স্পট পারচেজ (এলএসপি) সফটওয়্যারের মাধ্যমে দরপত্র গ্রহণ করা হচ্ছে। ২০২২ সালে স্পট মার্কেট থেকে কার্গো গ্রহণের জন্য এর আগে এই সফটওয়্যারের প্রথম দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হয়। সেই প্রাপ্ত দরপ্রস্তাবগুলো কারিগরি ও আর্থিকভাবে নন-রেসপন্সিভ হওয়ায় ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের জন্য অনুমোদিত ১ (এক) কার্গো এলএনজি আমদানি করা সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে স্পট মার্কেট থেকে কার্গো গ্রহণের জন্য ওই সফটওয়্যারের মাধ্যমে ২১টি দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হয়। তার মধ্যে ১৬ কার্গো এলএনজি সংগ্রহের জন্য সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন নেয়া হয়েছে।