করোনায় আক্রান্ত হয়েও ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে বিমানবন্দরে আসছেন প্রবাসীরা

করোনায় আক্রান্ত হয়েও ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে বিমানবন্দরে আসছেন প্রবাসীরা

হু হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। বিদেশে যেতে করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে যেতে হয় বিমানবন্দরে। তবে অনেক প্রবাসী করোনায় আক্রান্ত হয়েও বিদেশ যেতে বিমানবন্দরে চলে আসছেন। ল্যাবে পরীক্ষায় পজিটিভ হলেও জাল নেগেটিভ সনদ দেখাচ্ছেন। প্রতিদিন গড়ে ৫ জন প্রবাসী এমন ভুয়া সনদ নিয়ে আসেন। তারা বিমানবন্দরে এসে অন্য যাত্রীদের ঝুঁকিতে ফেলছেন। প্রতারণা করা এমন যাত্রীদের জরিমানাও করছে বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট।

দিনাজপুরের মফিজুল আলম স্থানীয় একটি ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করলে তার পজিটিভ রিপোর্ট আসে। তবে তার প্রতিবেশীদের পরামর্শে কম্পিউটারের দোকানে সেই রিপোর্টে এডিট করে নেগেটিভ সনদ হাতে নিয়ে ঢাকায় আসেন মফিজুল। সৌদিগামী ফ্লাইট ধরতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য বিভাগে এলে ধরা পড়ে তার জাল সনদ। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তাকে পাঠানো হয় বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাকে জরিমানা করে পাঠিয়ে দেন হাসপাতালে।

গেলো জানুয়ারি মাসে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মফিজুল আলমের মতো কমপক্ষে ৬০ যাত্রীকে শনাক্ত করা গেছে। এরা করোনা আক্রান্ত হয়েও ভুয়া সনদ নিয়ে বিমানবন্দরে এসেছেন। বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট জানুয়ারি মাসে ৪৫ জনকে ভুয়া সনদ নিয়ে বিমানবন্দরে আসায় ১ লাখ ৯৪ হাজার ৫০০ টাকা অর্থদণ্ড করেছেন।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আলী আফরোজ বলেন, বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য বিভাগ ভুয়া করোনা নেগেটিভ সনদ শনাক্ত করছে। এই যাত্রীরা ল্যাবে পরীক্ষা করে পজিটিভ রিপোর্ট পায়। কিন্তু কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে পজিটিভ রিপোর্টের জায়গায় এডিট করে নেগেটিভ লিখে নিয়ে আসে। এ কারণে জানুয়ারি মাসে ৪৫ জনকে ভুয়া সনদ নিয়ে বিমানবন্দরে আসায় ১ লাখ ৯৪ হাজার ৫০০ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। এর বাইরেও আরও কিছু যাত্রী ভুয়া সনদ নিয়ে এসেছেন, যাদের মানবিক কারণে জরিমানা করা হয়নি।

সূত্র জানায়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করে দিনে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ বিদেশ যাচ্ছেন। এরমধ্যে দিনে কমপক্ষে ৫ শতাধিক জনের যাত্রা আটকে যাচ্ছে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ফলে। অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। এ কারণে অনেক প্রবাসী ভুয়া সনদ নিয়ে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

শাহজালাল বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, বিমানবন্দরে যাত্রীদের করোনা পরীক্ষার সনদ শতভাগ যাচাই করা হয়। প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে ৫/৬ যাত্রী ভুয়া নেগেটিভ সনদ নিয়ে আসেন। তারা বিমানবন্দরে এসে অন্য যাত্রীদের ঝুঁকিতে ফেলছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা অনুসারে কোনও বিদেশগামী যাত্রী করোনায় আক্রান্ত হলে সাত দিনের মধ্যে বিদেশ যেতে পারবেন না। ২০২১ সালের জুনে জারি করা নির্দেশনায় আরও বলা হয়, সাত দিন পর শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ল্যাবে পুনরায় যাত্রী করোনা পরীক্ষা করবেন এবং তখন নেগেটিভ রিপোর্ট এলে দেশত্যাগ করতে পারবেন।

বিদেশগামী যাত্রীদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শাহজালাল বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ। তিনি বলেন, ফ্লাইটের কমপক্ষে ৭ দিন আগে থেকে বেশ সতর্ক হতে হবে। বিদেশ যাওয়ার জন্য কেনাকাটা, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করা এসব ৭ দিন আগেই শেষ করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, সঠিক নিয়মে মাস্ক পরতে হবে। এমনকি বিমানবন্দরে আসার সময় অহেতুক আত্মীয়স্বজন নিয়ে আসা বন্ধ করতে হবে।