যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া মাত্রাতিরিক্ত: নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে শাহরিয়ার

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া মাত্রাতিরিক্ত: নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে শাহরিয়ার

র‌্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় নাখোশ শেখ হাসিনার সরকার। সাংবাদিকদের সঙ্গে সে মনোকষ্ট উগরে দিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘খুবই দুঃখজনক হলেও এটা আমরা এখনো বলব, সম্পর্ক যতই গভীর বন্ধুতার হোক না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এটা মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার বিকালে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, আন্তর্জাতিক সংস্থা আর দাতা গোষ্ঠীগুলোর মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের সঙ্গে নিজ দপ্তরে এভাবেই মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘র‌্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ। এই নিষেধাজ্ঞার ব্যাপ্তি কতটা, সেটাও বাংলাদেশ জানতে চেয়েছে।’

গত ১০ ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাতজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এরপর থেকে এ বিষয়ে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সরকারের কী পদক্ষেপ—এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর অন্য কোথাও কোনো ধরনের প্রভাব নেই। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও এটি বিস্তৃত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে তা বিভিন্ন দেশের ও ফোরামের সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসে। জাতিসংঘ, ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে আলোচনায় অভিযোগগুলো এলে সেখানে তথ্য-উপাত্ত দেওয়া হয়। পাল্টা যুক্তিও দেওয়া হয়। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কখনো সফল হই, কখনো সফল হই না। তার মানে কিন্তু এই না যে তারা এক সপ্তাহ বা পরের মাসে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেবে। এটা প্রথমবারের মতো হলো। খুবই দুঃখজনক হলেও এটা আমরা এখনো বলব, সম্পর্ক যতই গভীর বন্ধুতার হোক না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এটা মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।’

নিষেধাজ্ঞার অনেক আগে থেকেই র‌্যাবের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি ছিল। র‌্যাবকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার অভিযোগও আছে। এসব অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়নি। আমলে নিলে পরিস্থিতি অন্য রকম হতো কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে শাহরিয়ার আলম বলেন, রাজনৈতিকভাবে র‌্যাবকে ব্যবহারের অভিযোগটা হাস্যকর, তা টেকনাফের ঘটনা প্রমাণ করে। যে ভদ্রলোকের কথা বলা হয়েছে, তিনি আওয়ামী লীগ করতেন। একাধিক ব্যক্তি আওয়ামী লীগ করতেন এবং মাদকসহ অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের ধরতে গিয়ে র‌্যাব বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। এটা মোটেই সত্যি নয় যে র‌্যাবকে ব্যবহার করা হয়েছে বিরোধী দলকে দমনের জন্য।

বাংলাদেশের অংশীদার হিসেবে র‌্যাব গঠনের সময় প্রশিক্ষণ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করেছে। র‌্যাবের কাজের প্রক্রিয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রশ্ন থাকলে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তা সমাধান করা যেত বলে মনে করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, র‌্যাবের জন্য ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা বিভিন্ন সরঞ্জাম সচল রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া সেগুলো চলবে না।

র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগের পরিকল্পনার কথাও জানান শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গে যুক্ততার জন্য আরও কোনো পদক্ষেপের দরকার হয় কি না, সেটা নিয়ে আমরা ভাবছি। বিদেশি আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করার পাশাপাশি কিছু মানুষ লাগবে। যদি করি (লবিস্ট নিয়োগ), অবৈধ টাকা ব্যবহার করে লুকিয়ে সেটা করব না। বিএনপির মতো কোনো গোপন অ্যাজেন্ডা থাকবে না। আওয়ামী লীগের মতাদর্শ প্রচারের জন্য লবিস্ট নিয়োগ করা হবে না। দেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত করার জন্য বৃহত্তর প্রেক্ষাপট থেকে কাজটি করা হবে।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) প্রয়োগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আপত্তির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে পাল্টা জানতে চান, ডিএসএর সবচেয়ে বড় সুফলভোগী কে বলুন তো? তিনি বলেন, ‘ডিএসএর সবচেয়ে বড় সুফলভোগী হলো গ্রামের তরুণী বা মেয়েরা, যারা স্কুল কিংবা কলেজে যায়। যখন কারও সঙ্গে তার একটা সম্পর্ক তৈরি হয়, এরপর তাকে ফাঁদে ফেলে যে পুরুষ বা ছেলেটি তার ক্ষতি করেছে, সেখানে একমাত্র ভরসার জায়গা ডিএসএ। এখন কয়েকটি জায়গায় ভুলবশত বা বাড়াবাড়ি করে হোক প্রয়োগের ক্ষেত্রে যে ভুল হচ্ছে, তা নিয়ে আইনমন্ত্রী সুনির্দিষ্টভাবে বলেছেন। আমরা এটা সুরাহার বিষয়ে উন্নয়ন অংশীদারদের কাছে অঙ্গীকার করেছি।’

ভবিষ্যতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) অপপ্রয়োগ বন্ধের বিষয়ে সরকারের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম বলেন, আইনমন্ত্রী সেদিন কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ে স্পষ্ট করেই বলেছেন, ডিএসএ নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যেই তো সবচেয়ে বড় ভয়। তাদের আত্মবিশ্বাস জোগানোর জন্য বলা হয়েছে, কোনো সাংবাদিককে ডিএসএর আওতায় গ্রেপ্তারের আগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বা কমিটির কাছে জানাতে হবে।