আ'লীগের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন ছহুল হোসাইন

‘এই প্রশ্ন করলে আমার কষ্ট লাগে’

‘এই প্রশ্ন করলে আমার কষ্ট লাগে’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ে আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে প্রধান করে (সভাপতি) ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। বিশিষ্ট নাগরিক হিসেবে এই কমিটিতে সদস্য মনোনীত হয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন। এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের সদস্য ছহুল হোসাইন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ (সদর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তাকে অনুসন্ধান কমিটির সদস্য করার পর থেকে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রিয়াদুল করিম।

প্রশ্ন: কবে থেকে আপনারা কাজ শুরু করবেন?

ছহুল হোসাইন: অনুসন্ধান কমিটির চেয়ার‍ম্যানের সঙ্গে এখনো কথা হয়নি। সময় তো বেশি নেই।

প্রশ্ন: কত দিনের মধ্যে আপনারা নাম প্রস্তাব করবেন?

ছহুল হোসাইন: আমি এখনো গেজেট দেখিনি। তবে গেজেটে নাকি আছে ১৫ দিনের মধ্যে নাম প্রস্তাব করতে হবে। তবে মনে হয়, ১৫ দিন আমরা পাচ্ছি না। কারণ, ১৪ তারিখ (ফেব্রুয়ারি) বর্তমান কমিশনের দায়িত্বভার শেষ হয়ে যাবে। তাহলে ১৫ তারিখ থেকে নতুন কমিশনকে দায়িত্ব নিতে হয়। দেখা যাক, কী করা যায়।

প্রশ্ন: অনুসন্ধান কমিটি গঠনের পর কি কমিটির সদস্যদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা হয়েছে?

ছহুল হোসাইন: না, এখনো কারও সঙ্গে আলাপ হয়নি। কারও সঙ্গে আমার তেমন পরিচয়ও নেই।

প্রশ্ন: আপনি নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে আপনার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে বলে মনে করেন কি?

ছহুল হোসাইন: শোনেন, এই প্রশ্ন করলে আমার কষ্ট লাগে। আমার সারা জীবনের আদর্শ কি এ জন্য নষ্ট হয়ে গেছে? আওয়ামী লীগ থেকে যদি এমপি হতাম, মন্ত্রী হতাম, তাহলে কি আদর্শ থেকে বিচ্যুত হতাম? কখনোই না। আমি আমার আদর্শের ওপর আছি। ন্যায়নীতির আদর্শের ওপর আছি। কোনো অবস্থাতেই এই আদর্শ থেকে আমি বিচ্যুত হবো না।

প্রশ্ন: যেহেতু রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক...

ছহুল হোসাইন: এটা তো বলতে থাকে তারা। আওয়ামী লীগ থেকে যখন আমি নমিনেশনের ফরম নিলাম (দলীয় মনোনয়নের ফরম সংগ্রহ) আমেরিকাতে গিয়েছিলাম একটি কাজে, আমার ছেলের কনভোকেশনে। ওখানে আমাকে একটা সংবর্ধনা দিল জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন। ওখানে বিএনপির একজন বলেছিলেন, ‘ও আপনি তো তাহলে এখন আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন।’ আমি বললাম, একটা কাজ আমার বের করেন তো যে আমি পক্ষপাতিত্ব করেছি?

প্রশ্ন: ওই সময় বা নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন নেই। কিন্তু যেহেতু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়ার পর এই পদে এলেন, এটা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করেন কি না?

ছহুল হোসাইন: যারা করার, তারা করতেই থাকবে। আমি কোনো দিনই আমার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হইনি। জজ (বিচারক) যখন ছিলাম, তখন আমি আমার আপন লোকদের বিরুদ্ধেও অনেক রায় দিয়েছি। আমার বেসিক ফাউন্ডেশন জাজ। আল্লাহর রহমতে আমার কোনো সমালোচনা নেই। আমিও খুশি, জাজ হিসেবে অনেক লম্বা জীবন পার করেছি, কোনো দিন কোনো রায়, কোনো আদেশ ন্যায়বিচারের স্বার্থ ছাড়া আমি দিইনি।

প্রশ্ন: এখন যে প্রেক্ষাপট, আপনারা কি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করতে পারবেন বলে মনে করেন?

ছহুল হোসাইন: দেখি, আমরা সবাই বসি। সবাই বসে সিদ্ধান্ত নেব, কীভাবে আমরা কাজ করব।-প্রথম আলো