সংসদীয় কমিটিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে

মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে

শ্রম আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। আজ সোমবার সংসদীয় কমিটিকে এসব তথ্য জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

জাতীয় সংসদে বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সূত্র জানায়, সংসদীয় কমিটিকে মন্ত্রণালয় আরও জানায়, র‌্যাব এবং বাহিনীটির বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা যাতে তুলে নেওয়া হয়, সেই চেষ্টা শুরু করেছে সরকার। এ লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আইনজীবী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্রমাগত চাপ’ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা (জিএসপি) বাতিল করার পর সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেয়নি।

বিগত ২০ বছরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে কোনো দ্বিপক্ষীয় সফর হয়নি। তবে এ বছর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে উচ্চপর্যায়ের সফর আয়োজনের জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

বৈঠক সূত্র বলছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে বলে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে এ নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে সরকারের অসন্তোষের কথা যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে আইনজীবী নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে।

দেশটির সঙ্গে নানাভাবে দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ ও নিবিড় আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে যে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়; বরং মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা যথাযথ হয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আগেই সংসদীয় কমিটি লবিস্ট নিয়োগের কথা বলেছে। এর বাইরে সেটা নিয়ে কাজ চলছে। জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান (পিআর ফার্ম), আইনজীবী নিয়োগের কথাও মন্ত্রণালয় বলেছে।

ফারুক খান আরও বলেন, কমিটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে যা যা প্রয়োজন করতে বলেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছে।

বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের মিশনগুলোকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য তৎপর থাকার সুপারিশ করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মত করে অন্য দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কি না, বাংলাদেশের বিপরীতে অন্য কোনো দেশের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কি না, তা আগামী বৈঠকে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়।

ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মো. আবদুল মজিদ খান, মো. হাবিবে মিল্লাত এবং নাহিম রাজ্জাক অংশ নেন।