২০২১ সালে ধর্ষণের শিকার ৮১৮ শিশু: রিপোর্ট

২০২১ সালে ধর্ষণের শিকার ৮১৮ শিশু: রিপোর্ট

সারাদেশে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও শিশুদের জনসমাগমের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সময়কালে সারাদেশে ৮১৮ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে এবং ৯৪ শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়ে নিহত হয়েছে ১৪ মেয়েশিশু। এ ছাড়া যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১১০ শিশু। ২০২০ সালে শিশু ধর্ষণের এই সংখ্যা ছিল ৬২৬।

এদিকে, ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে বাল্যবিয়ের সংখ্যায়। ২০২১ সালে স্কুল খোলার পর পরই ৪৩ হাজার ৫৪টি বাল্যবিয়ের সংবাদ পাওয়া গেছে সংবাদপত্রে প্রকাশিত ৮৭ টি খবর থেকে। অন্যদিকে ২০২০ এ বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছিল ১০১ শিশু।

মঙ্গলবার অনলাইনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি ২০২১’ শিরোনামে শিশু বিষয়ক সংবাদের আধেয়-বিশ্লেষণ থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপস্থাপন করেছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)।

শিশু ধর্ষণ এবং বাল্যবিয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের শিশুদের সার্বিক পরিস্থিতি সার্বিকভাবে উদ্বেগজনক বলে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের এক পর্যালোচনায় উঠে এসেছে। পাঁচটি জাতীয় বাংলা দৈনিক— সমকাল, প্রথম আলো, যুগান্তর, ইত্তেফাক ও কালের কণ্ঠ এবং তিনটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার, নিউ এজ এবং ঢাকা ট্রিবিউনে প্রকাশিত শিশু অধিকার বিষয়ক সংবাদ পর্যালোচনা করে এ তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন কারণে এ সময়ের মধ্যে আত্মহত্যা করেছে ৭৮ শিশু। এর মধ্যে ৫৭ জন ছেলে এবং ২১ জন মেয়েশিশু। ২০২০ সালে আত্মহত্যাকারী শিশুর সংখ্যা ছিল ৩৪ জন এবং আত্মহত্যার চেষ্টা করতে গিয়ে আহত হয়েছে ২৩ জন। মূলত পরীক্ষায় ফল-বিপর্যয়, পরিবারের উপর রাগ, প্রেম, উত্যক্ত হয়ে, ধর্ষণের শিকার বা ধর্ষণ চেষ্টা, ধর্ষণের বা শ্লীলতাহানির বিচার না পাওয়া এবং সাইবার ক্রাইম বা ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন কারণে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ১৮৩ জন শিশু এবং হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ১৩৫ শিশুকে। ২০২০ সালে হত্যার শিকার হয়েছিল ১৪৫ জন শিশু। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৬৯ জন শিশু। ২০২০ সালে এইসংখ্যা ছিল ১৫৮ জন। ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ও অন্যান্য দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত হওয়ার সংখ্যা ২০২০ সালের তুলনায় কমেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবারের পরিচিত লোকদের মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার হওয়া ছাড়াও, প্রতিবেশীদের হাতে শিশুদের একটি বড় অংশ ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিশুর সর্বনিম্ন বয়স ২ বছর। কিশোরীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে প্রেম করতে গিয়ে। স্কুল-মাদরাসার ছাত্রীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে শিক্ষক ও হুজুরদের দ্বারা। এর বাইরে নির্যাতনে আহত হয়েছে ২৫৪ জন শিশু। হারিয়ে গেছে ৩৮ শিশু। পানিতে ডুবে মারা গেছে ৫৭০ জন শিশু। ২০২০ সালে পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৬৫ টি। ২০২০ সালে নিখোঁজ ও অপহরণের শিকার হয়েছে ২২ জন শিশু।

৫৬টি ঘটনার মাধ্যমে ২৫৪ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ২০২০ সালে শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১৬টি। নির্যাতনকারী হিসেবে রয়েছেন— গৃহর্কতা, বাবা-মা, শিক্ষক, উত্ত্যক্তকারী, স্থানীয় চেয়ারম্যান, চাকরিদাতা, প্রতিবেশী এবং সৎ মা। এ ছাড়া ২০২১ সালে অপরাধে জড়িয়ে যাওয়া শিশুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২০। ২০২০ সালে ছিল ২ জন। শিশুকে নিয়ে ২৫টি বিষয়ের উপর নেতিবাচক খবর ছাপা হয়েছে ১ হাজার ৯৩০টি আর ইতিবাচক সংবাদ ছাপা হয়েছে ১২টি বিষয়ের ওপর ১০৬টি।

সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি ২০২১’- এর সার্বিক চিত্র উপস্থাপন করেন এমজেএফের কোঅর্ডিনেটর রাফেজা শাহীন।

শাহীন আনাম বলেন, এমজেএফের বিশ্লেষণ অনুযায়ী শিশুরা নিজের বাসায় নিরাপদ নয়। শিশু ধর্ষণ ও শিশুকে যৌন হয়রানি বন্ধ করার জন্য সবাইকে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনামের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় শিশু ও সমন্বয় বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুহিবুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি মাহবুবা বিলকিস।

মুহিবুজ্জামান বলেন, ‘পত্রিকা থেকে প্রাপ্ত তথ্য হচ্ছে অপরাধ প্রবণতার ধারণা মাত্র। ১৫টি পত্রিকা থেকে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় তথ্য গ্রহণ করে। ১০৯ হট লাইন নম্বরে প্রতিদিন অসংখ্য ফোন আসে। সেখান থেকে আমরা অপরাধের একটা ডাটা বেইজ তৈরি করি।

এমজেএফের বার্ষিক ‘বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি’ পর্যালোচনার উদ্দেশ্য হলো— শিশু সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নীতি নির্ধারণী সুপারিশ তুলে ধরা।