পণ্যের ঊর্ধ্বমূল্যে ক্রেতার নাভিশ্বাস

বাঁধা আয়ে অচল সংসার, দুঃসহ যন্ত্রণা

বাঁধা আয়ে অচল সংসার, দুঃসহ যন্ত্রণা

একের পর এক বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। করোনায় কাবু মানুষের জন্য এ-এক দুঃসহ যন্ত্রণা। আয় কমে যাওয়া মানুষের হিমশিম অবস্থা। নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে হা-হুতাশ এখন নিত্যদিনের চিত্র। স্বল্প আয়ের মানুষের সারি দীর্ঘ হচ্ছে টিসিবি’র ন্যায্যমূল্যের ট্রাক পয়েন্টে। কম দামের পণ্য কেউ পাচ্ছে, কেউ পাচ্ছে না। পণ্যের জন্য ট্রাকের পেছনে দৌড়ানো, পণ্য না পেয়ে আকুল কান্নার ছবি আর ভিডিও ভাইরাল নেট দুনিয়ায়। বলা হচ্ছে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।

আদতে বাজারে এর কোনো লক্ষণ এবং প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। বাজারে এখন ভোজ্য তেল রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে। দামে রেকর্ড হওয়ায় সরকারের মূসকও বেড়ে সর্বোচ্চ হয়েছে। প্রতিবেশী ভারত ইতিমধ্যে তিন দফা এই মূসক কমিয়ে সমন্বয় করেছে। দেশে এখনও ভ্যাট কমানোর কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভ্যাট কমাতে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে বলে জানা গেছে। মন্ত্রণালয়ের ইচ্ছা অনুযায়ী ভ্যাট প্রত্যাহার হলে ভোজ্য তেল থেকে মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে। চাল, ডাল, পিয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যেরই দাম বাড়তির দিকে। আসন্ন রমজানে পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়ায় এ নিয়ে চিন্তিত সাধারণ মানুষ। সরকারি সংস্থা টিসিবি’র হিসাবে গত এক মাসের ব্যবধানে অন্তত ৩১ টি পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে একশ’ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে এমন পণ্যও আছে। বাড়তি দামের কারণে নিম্ন্ন আয়ের মানুষকে সুবিধা দিতে সরকারি সংস্থা টিসিবি কম দামে পণ্য বিক্রি করছে। সীমিত পরিসরে এই কার্যক্রম চলায় অল্পসংখ্যক মানুষ এর সেবা পাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে বহুমুখী পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি’র হিসাবেই এক মাসের ব্যবধানে অন্তত ৩১টি পণ্যের দাম বেড়েছে সর্বনিম্ন ১ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ শতাংশ পর্যন্ত। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পিয়াজের দাম। এক মাসের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে মান ভেদে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। এছাড়া ভোজ্যতেল, আটা-ময়দা, ডাল, চিনিসহ বেড়েছে অন্তত ৩১টি পণ্যের দাম। তবে টিসিবি’র দর ও বাজারের বাস্তব চিত্রের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। সংস্থাটি বর্তমানে ভোজ্য তেলের দাম ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা বললেও, বাজারে এর দাম ১৮০ থেকে প্রায় ২০০ টাকায় ঠেকেছে।

গতকাল টিসিবি’র সর্বশেষ বাজার দর অনুযায়ী, বর্তমানে সরু চালের কেজি (নাজির/মিনিকেট) ৬২ থেকে ৭০ টাকা। যা এক মাস আগে ছিল ৬০ থেকে ৬৮। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। সাদা আটা (খোলা) প্রতি কেজি’র বর্তমান মূল্য ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা। এক মাস আগের মূল্য ৩৩ থেকে ৩৬ টাকা। এক মাসে বেড়েছে ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ময়দা (খোলা) বর্তমান মূল্য ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। আগের মূল্য ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। বেড়েছে ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ময়দা (প্যাকেট) এখন ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আগে ছিল ৫২ থেকে ৬০ টাকা। বেড়েছে ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

সয়াবিন তেল (লুজ) প্রতি লিটারের বর্তমান মূল্য ১৬০ থেকে ১৭২ টাকা। এক মাস পূর্বের মূল্য ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। বেড়েছে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। পাম অয়েল (লুজ) বর্তমান মূল্য ১৫০ থেকে ১৫৮ টাকা। আগে ১৩৪ থেকে ১৩৬ টাকা। বেড়েছে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। পাম অয়েল (সুপার) বর্তমান ১৫৫ থেকে ১৬৩ টাকা। আগে ১৩৬ থেকে ১৪০ টাকা। বেড়েছে ১৫ দশমিক ২২ শতাংশ। সয়াবিন তেল (বোতল) ১ লিটারের বর্তমান মূল্য ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা। এক মাস পূর্বে ছিল ১৫৫ থেকে ১৬৫ টাকা। বেড়েছে ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। সয়াবিন তেল ৫ লিটারের বোতল বর্তমান মূল্য ৭৯০ থেকে ৮৩০ টাকা। আগে ছিল ৭৩০ থেকে ৭৬৫। বেড়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

মসুর ডাল-মাঝারি দানা বর্তমান মূল্য প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। এক মাস আগের মূল্য ১০৫ থকে ১১০ টাকা। বেড়েছে ৪ দশদিম ৬৫ শতাংশ। ডাল (দেশি) বর্তমান মূল্য প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১৩০ টাকা। এক মাস আগের মূল্য ১১০ থেকে ১২০ টাকা। বেড়েছে ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। মুগ ডাল (মানভেদে) প্রতি কেজি’র বর্তমান মূল্য ১২৫ থেকে ১৪০ টাকা। এক মাস আগের মূল্য ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। বেড়েছে ১ দশমিক ৯২ শতাংশ। বর্তমানে এ্যাংকর ডাল প্রতি কেজি’র মূল্য ৪৮ থেকে ৬০ টাকা। এক মাস আগে ছিল ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা। বেড়েছে ৪ দশমিক ৮৫ টাকা।

বর্তমানে পিয়াজের (দেশি) প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা। এক মাস আগে ছিল ২৫ থেকে ৩৫ টাক। বেড়েছে ১০০ শতাংশ। পিয়াজ (আমদানি) প্রতি কেজি বর্তমান ৪৫ থেকে ৬০ টাকা। এক মাস আগে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বেড়েছে ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

রসুন (দেশি/নতুন-পুরাতন) এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এক মাস আগের মূল্য ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বেড়েছে ২০ শতাংশ। এখন রসুন (আমদানি) ১১০ থেকে ১৩০ টাকা। আগে ১০০ থেকে ১১০। বেড়েছে ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ।

শুকনা মরিচের বর্তমান মূল্য (আমদানি) কেজিতে ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা। এক মাস আগে ছিল ২৬০ থেকে ৩৫০ টাকা। বেড়েছে ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। আদা (দেশি নতুন) এখন ৯০ থেকে ১৪০ টাকা। আগে ৮০ থেকে ১২০ টাকা। বেড়েছে ১৫ শতাংশ। আদা (আমদানি) এখন ৭০ থেকে ১২০ টাকা। আগে ৬০ থেকে ১০০ টাকা। বেড়েছে ১৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এখন জিরা কেজিতে ৩২০ থেকে ৪২০, আগে ছিল ৩০০ থেকে ৪২০ টাকা। বেড়েছে ২ দশমিক ২৭ শতাংশ। তেজপাতা প্রতি কেজি বর্তমানে ১২০ থেকে ২০০ টাকা। এক মাস আগে ছিল ১২০ থেকে ১৭০ টাকা। বেড়েছে ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

গরুর মাংস বর্তমানে প্রতি কেজি ৬২০ থেকে ৬৫০ টাকা। এক মাস আগে ছিল ৫৮০ থেকে ৬২০ টাকা। বেড়েছ ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। খাসি বর্তমানে প্রতি কেজি ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকা। এক মাস আগে ছিল ৮০০ থেকে ৯০০ টাক। বেড়েছে ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। মুরগি (ব্রয়লার) প্রতি কেজি বর্তমানে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা। এক মাস আগের মূল্য ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। বেড়েছে ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ। মুরগি (দেশি) প্রতি কেজি বর্তমানে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। এক মাস আগে ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকা। বেড়েছে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ।

ডানো গুঁড়াদুধ প্রতি কেজি’র বর্তমান মূল্য ৬৫০ থেকে ৬৯০ টাকা। এক মাস আগে ছিল ৬৫০ থেকে ৬৮০। বেড়েছে দশমিক ৭৫ শতাংশ। ডিপ্লোমা (নিউজল্যান্ড) এখন ৬৫০ থেকে ৬৮০। আগে ৬৪০ থেকে ৬৭০। বেড়েছে ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

চিনি বর্তমানে প্রতি কেজি ৭৮ থেকে ৮০। আগে ছিল ৭৫ থেকে ৭৮। বেড়েছে ৩ দশমিক ২৭ শতাংশ। ডিম (ফার্ম) বর্তমানে প্রতি হালি ৩৬ থেকে ৪০ টাকা। আগে ছিল ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা। বেড়েছে ৪ দশমিক ১১ শতাংশ।

লম্বা বেগুন বর্তমানে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৯০ টাকা। আগে ৪০ থেকে ৮০ টাকা। বেড়েছে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আলু বর্তমানে মান ভেদে প্রতি কেজি ১৮ থেকে ২০ টাকা। এক মাস আগে ১৫ টাকা। বেড়েছে ৮ দশমিক ৫৭। কাঁচামরিচ বর্তমানে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ১০০ টাকা। এক মাস আগে ৪০ থেকে ৮০ টাকা। বেড়েছে ৪১ দশমিক ৬৭ শতাংশ।