নিষেধাজ্ঞার পরও মুন্সীগঞ্জের পদ্মায় ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশের আহরণ বেড়েছে

নিষেধাজ্ঞার পরও মুন্সীগঞ্জের পদ্মায় ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশের আহরণ বেড়েছে

সরকার মাছ শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণার পরও পদ্মায় রুপালি ইলিশের আহরণ বেড়েছে। পদ্মা নদীর মুন্সীগঞ্জ অংশে ইলিশের আহরণ বেড়েছে কয়েকগুণ। দীর্ঘ দিন পর ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশের দেখা মিলতে শুরু করেছে।

মুন্সীগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মুন্সীগঞ্জে ইলিশের আহরণ বেড়েছে প্রায় তিন-চারগুণ।

সরকার ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সারাদেশে ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত আট মাস জাটকা মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে। এর পাশাপাশি দেশে মাছের ছয়টি অভয়াশ্রমের মধ্যে পাঁচটিতে গত ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস সব ধরণের মাছ শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এতে করে মুন্সীগঞ্জে পদ্মা নদীতে জেলেদের জালে রুপালি ইলিশ ধরা পড়ছে তিন থেকে চারগুণ।

জেলার মধ্যে ভৌগলিকভাবে মুন্সীগঞ্জ সদর, টংগিবাড়ী ও লৌহজং উপজেলার অংশে পদ্মা নদী পড়েছে। তবে, ইলিশ বেশি আহরিত হয় জেলার লৌহজং উপজেলার পদ্মা নদীতে। তাই লৌহজংয়ের মাওয়া মৎস্য আড়ত গোটা বাংলাদেশে রুপালি ইলিশের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছে।

জেলার লৌহজং উপজেলার মাওয়া মৎস্য আড়ৎ সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হামিদুল ইসলামের মাছের আড়ৎ প্রায় ৫০ বছর ধরে ইলিশের পাইকারি বেচাকেনা করে।

এ প্রসঙ্গে মো. হামিদুল ইসলাম বলেন, গত ৬-৭ দিন থেকে হঠাৎ করে ইলিশের আহরণ বেড়েছে। তবে, প্রতিদিন মোট কি পরিমাণ ইলিশ মাওয়ার মোট ২৯টি আড়তে বেচাকেনা হচ্ছে তার কোনো পরিসংখ্যান রাখা হয় না বা রাখা যায় না। তবে, আনুমানিক এখন সব ধরণের মাছ মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় সোয়া কোটি টাকার মত মাছ বেচাকেনা হয় প্রতিদিন সকালে।

এখানকার আড়তে ছয় শ' গ্রাম থেকে ১৫ শ' গ্রাম আকারের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। তবে, ৬-৭শ' গ্রাম আকারের ইলিশ মাছই বেশি দেখা মিলে। এর বেশিরভাগই পদ্মা নদীর ইলিশ। কারণ, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোর বিভিন্ন স্থানে অভয়াশ্রম ঘোষণা করে সরকার দুই মাস সব ধরণের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু, নিষিদ্ধ করার আগে শতশত অবৈধ কারেন্টজাল দিয়ে নদীগুলো ঘেরাও করে রাখত জেলেরা। যার কারণে ইলিশ পদ্মা নদীতে আসতে পারে না। মাছের আহরণ বৃদ্ধির সাথে সাথে দামও আগের চাইতে কমেছে বলে জানান এই মাছ ব্যবসায়ী হামিদুল।

তিনি আরো জানান, এক কেজি বা তার চেয়ে বড় আকারের ইলিশ আগে বিক্রি হয়েছে ১৫-১৬শ' টাকা কেজি দরে। তবে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সেটা কমে হয়েছে ১২-১৩শ' টাকা কেজি।

মুন্সীগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামশুল করিম জানান, ১ মার্চ থেকে অভয়াশ্রমে সব ধরণের মাছ শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণার পর ইলিশের ঝাঁক দক্ষিণাঞ্চল থেকে উত্তর দিকের নদীগুলোতে আসতে পারছে। এ কারণে ইলিশের আহরণ বেড়েছে তিনগুন। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে যেখানে পুরো জেলায় গড়ে ইলিশ আহরণের পরিমাণ ছিল এক মেট্রিক টন, সেখানে মার্চের প্রথম সপ্তাহের প্রতিদিন গড় আহরণ হয়েছে তিন টন।

তিনি আরো জানান, ২০২০ মৌসুমে পুরো জেলায় ইলিশ আহরিত হয়েছিল দুই হাজার ৭২ মেট্রিক টন।

জেলার লৌহজং উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম জানান, মুন্সীগঞ্জ জেলার মধ্যে লৌহজং উপজেলার পদ্মা নদীর অংশে সবচেয়ে বেশি ইলিশ আহরিত হয়। তাই জেলেদের সংখ্যাও এই উপজেলায় বেশি। মোট এক হাজার ২৩২ জন নিবন্ধিত জেলে ইলিশ শিকার করে থাকেন।