শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি

অভিযুক্ত জাহাজ আটক, ৩টি তদন্ত কমিটি গঠন

অভিযুক্ত জাহাজ আটক, ৩টি তদন্ত কমিটি গঠন

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে ডুবে যাওয়ার ১৫ ঘণ্টা পর এমএল আফসার উদ্দিন নামের লঞ্চটিকে উদ্ধার করে তীরে এনেছে বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়। উদ্ধারকৃত ছয়টি লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে নৌ-পুলিশ। দুর্ঘটনার জন্য অভিযুক্ত মালবাহী জাহাজটিকে মুন্সিগঞ্জে আটক করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

সোমবার ভোর ৫টার দিকে মাঝ নদী থেকে লঞ্চটিকে উদ্ধার করে টেনে তীরে নিয়ে আসা হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড ও বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারীরা লঞ্চটির ভেতরে তল্লাশি চালায়। ফিরে এসে তারা জানান, লঞ্চের ভেতরে কোনো লাশ নেই।

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক তানহারুল ইসলাম জানান, রাত ১০টার দিকে বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ঘটনাস্থলে আসে। পরে রাতভর চেষ্টায় ভোর সোয়া ৫টার দিকে লঞ্চটি আলামিন নগর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর পারে আনা হয়। এরপর উদ্ধারকারী সংস্থাগুলো তল্লাশি চালায় তবে লঞ্চের নিচে ও উপরে কোনো লাশ পাওয়া যায়নি।

তিনি জানান, নদীতে উদ্ধার অভিযান অব্যহত রয়েছে। যারা নিখোঁজ রয়েছেন তাদের উদ্ধারে নদীর তলদেশে ও নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তল্লাশি করা হবে। এদিকে এখনো কয়েকজন তাদের নিখোঁজ স্বজনের খোঁজে নদীর পারে অপেক্ষা করছেন।

লঞ্চডুবির ঘটনায় উদ্ধারকৃত ছয়জনের লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে নৌ-পুলিশ। যাদের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে তারা হলেন মুন্সিগঞ্জ সদরের উত্তর ইসলাম পুরের ব্যবসাী জয়নাল ভূইয়া (৫৫), মুন্সিগঞ্জের সদরের আরিফা আক্তার (৩৫), তার ছেলে সাফায়েত (১৫ মাস), পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের সালমা বেগম (৪০), তার মেয়ে ফাতেমা (৭), মুন্সিগঞ্জ সদরের স্মৃতি (২০)।

নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ পুলিশ থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, তাদের কাছে নিখোঁজের তালিকায় রয়েছেন পাঁচজন। এরা হলেন মুন্সিগঞ্জের হাতেম আলী, আরোহী, আব্দুল্লাহ আল জাবের, জোবায়ের হোসেন ও সোনারগাঁওয়ের উম্মে খায়রুন ফাতেমা।

নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার জন্য অভিযুক্ত জাহাজটিকে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় আটক করা হয়েছে। জাহাজের সঙ্গে এর চালক মাস্টারসহ কয়েকজন কর্মীকেও আটক করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ-থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, রূপসী-৯ সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন একটি কার্গো জাহাজ। জাহাজ চলাচল সম্পর্কিত ওয়েবসাইট ভেসেলফাইন্ডারে রূপসী-৯ এর মালিক হিসাবে সিটি সিড ক্রাশিং ইন্ডাস্ট্রিজের নাম রয়েছে।

অপরদিকে এ ঘটনা তদন্তে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শামীম বেপারীকে আহ্বায়ক করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামীকাল থেকে সাত দিনের মধ্যে এই কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে ঘটনার পর বিকেলে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব আ ন ম বজলুর রশীদকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া ঘটনার তদন্তে প্রকৌশলী ও জরিপকারক ওবায়দুল্লাহ ইবনে বশিরকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নৌপরিবহন অধিদফতর। এই কমিটিকে আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

রোববার দুপুর ২টা ১০ মিনিটে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকে যাত্রী নিয়ে মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল এমএল আশরাফ উদ্দিন-২ নামের লঞ্চটি। সদর উপজেলার সৈয়দপুরের আল-আমিন নগর সংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীতে রূপসী-৯ জাহাজটি পেছন থেকে চাপা দিয়ে লঞ্চটিকে ডুবিয়ে দেয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে দু’জন শিশু, দু’জন নারী ও দু’জন পুরুষ। ঠিক কতজন নিখোঁজ আছেন, তা এখনো স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।