ফরিদপুরের দুই ভাইয়ের অভিযোগ গঠনের পরবর্তী শুনানি ১৭ এপ্রিল

ফরিদপুরের দুই ভাইয়ের অভিযোগ গঠনের পরবর্তী শুনানি ১৭ এপ্রিল

অর্থ পাচারের মামলায় ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত, তাঁর ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি অব্যাহত রয়েছে। আগামী ১৭ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেছেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০–এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম আজ বৃহস্পতিবার এই দিন ধার্য করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মাহাবুব আলম প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহিনুর ইসলাম।

এপিপি মাহাবুব বলেন, এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে তিনি অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি উপস্থাপন করেছেন। তবে শুনানি শেষ হয়নি। অভিযোগ গঠনের শুনানির সময় কারাগারে থাকা সাজ্জাদ হোসেন বরকত, ইমতিয়াজ হাসান রুবেল, নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী, আশিকুর ফারহান ও খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরকে আদালতে হাজির করা হয়। পলাতক আসামি হলেন মোহাম্মদ বিন আলী মিনার, এ এইচ এম ফুয়াদ, ফাহাদ বিন ওয়াজেদ, তরিকুল ইসলাম ও কামরুল হাসান ডেভিড।

বরকত ও রুবেলের বিরুদ্ধে সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ বাদী হয়ে ২০২০ সালের ২৬ জুন ঢাকার কাফরুল থানায় অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় ওই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদ অবৈধ উপায়ে অর্জন ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়। ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধনী-২০১৫-এর ৪(২) ধারায় এ মামলা করা হয়। ওই মামলা তদন্ত করে গত বছরের ৩ মার্চ আদালতে বরকত, রুবেলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, বরকত ও রুবেল ১৯৯৪ সালে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মহিউদ্দিন খোকন হত্যায় অভিযুক্ত হয়ে এলাকা ছাড়েন। ২০০৮ সাল পর্যন্ত তাঁদের তেমন সম্পদ ছিল না। বরকত ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের পক্ষে নৌকা মার্কার নির্বাচন করেন। পরে খন্দকার মোশাররফ মন্ত্রী হলে বরকত তাঁর আস্থা অর্জন করেন। পরে মন্ত্রীকে দিয়ে পুরোনো আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার করান বরকত। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফের চারদিকে একটি বলয় তৈরি করেন মন্ত্রীর ভাই মোহতেশাম হোসেন, মন্ত্রীর এপিএস এইচ এম ফোয়াদ। তাঁদের দিয়ে ওই দুই ভাই ফরিদপুর জেলার রোডস, পিডব্লিউডি, এলজিইডি, হেলথ, বিআরটিএ, পৌরসভা, বিদ্যুৎ, জেলা পরিষদ, ফ্যাসিলিটিজ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, টেপাখোলা গরুর হাট, সিঅ্যান্ডবি ঘাট ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সব ধরনের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ ও কমিশন-বাণিজ্য শুরু করেন। সঙ্গে তাঁরা মাদক ব্যবসা, পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি ও জেলা রেজিস্ট্রারের অফিসে দলিলসংক্রান্ত কমিশন নিতে শুরু করেন। পরে জোর করে নিরীহ মানুষের জমি দখল করে নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করেন তাঁরা। সেসব জমির অধিক মূল্য দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণও তোলেন দুই ভাই। বিভিন্ন ব্যাংকে তাঁদের ১৭১ কোটি টাকা ঋণ আছে। এসব অবৈধ টাকা দিয়ে ফরিদপুর ও রাজবাড়ীতে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি কিনে টাকা বৈধ করার চেষ্টা করেন তাঁরা। বরকত ও রুবেল এবং তাঁদের স্ত্রী, ভাই, শ্বশুর ও মায়ের নামে ৪৮৭টি দলিলে মোট ৫ হাজার ২৮৮ বিঘা জমির সন্ধান পাওয়া যায়। যার দলিলমূল্য ৩৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চার বছরে এলজিইডির ৪৭৫টি ঠিকাদারি কাজ পান বরকত ও রুবেল, যার আর্থিক মূল্য ৮১২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। ওই সময়ে দুই ভাইয়ের নয়টি ব্যাংকের ১৮৮টি হিসাবে ২ হাজার ৯১০ কোটি ৭১ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। এই টাকার মধ্যে তাঁদের ২ হাজার ৫৩৫ কোটি ১১ লাখ টাকার কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। তাঁদের প্রায় ৫ হাজার ৩৮৮ বিঘা জমি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য সরঞ্জাম এবং ব্যাংকে রক্ষিত পৌনে ১০ কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে।