কোটি টাকার ফ্লাইটে সরকারি কর্মকর্তারা কেন? উত্তর দেননি প্রতিমন্ত্রী

কোটি টাকার ফ্লাইটে সরকারি কর্মকর্তারা কেন? উত্তর দেননি প্রতিমন্ত্রী

২৬ মার্চ ঢাকা-টরন্টো ফ্লাইটে সরকারের ৪ কোটি টাকার বেশি খরচ হবে। এই পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক ফ্লাইট মূলত ‘মর্যাদা রক্ষার ফ্লাইট’। এই উদ্বোধনী ফ্লাইটে থাকবেন ১২০ জন। এর মধ্যে সাধারণ যাত্রী ৩৬ জন। আর ফিরতি ফ্লাইটে থাকবে ১৪০ জন যাত্রী। সেখানে সাধারণ যাত্রী থাকছেন ১৯ জন।

রাজধানীর একটি হোটেলে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কর্মকর্তারা। ২৬ মার্চ ঢাকা-টরন্টো ফ্লাইটের উদ্বোধনী উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, ‘কানাডার সঙ্গে একটা ফ্লাইট অপারেট করা আমাদের জন্য একটা মর্যাদার বিষয়। আমরা চিন্তাভাবনা করেই ফ্লাইট অপারেট করছি। আমাদের ট্রিপ ফ্রিডম থাকবে না, তা না। কানাডীয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, এ মুহূর্তে ফ্লাইট অপারেট করতে হলে সরাসরি করতে হবে।’

কতজন সরকারি কর্মকর্তা সরকারি খরচে টরেন্টোতে বিমানের অফিস নির্ধারণসহ বিভিন্ন কাজে যাচ্ছেন—এই প্রশ্নের জবাবে বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘টরন্টোতে বিমানের অফিস ঠিক হয়েছে আরও এক মাস আগে। আমরা গিয়ে সে অফিস উদ্বোধন করব। টরন্টোতে জিএসএ নিয়োগ এখন নির্ধারণ হওয়ার পথে। আমাদের পক্ষ থেকে যত প্রস্তুতি, সব নেওয়া হয়েছে। আমি নিজে টরন্টো না–ও যেতে পারি, সচিব যাবেন না, বিমানের এমডিও যাবেন না।’

প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, ‘এই করোনা পরিস্থিতিতেও স্বল্প সময়ে টরন্টো ফ্লাইটের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এভাবে চিন্তা করলে হবে না যে শুরুতেই এখানে লস হবে। লস মাথায় নিলে বিমান ফ্লাইট অপারেট করা যাবে না। ফ্লাইট পরিচালনায় এটা সবচেয়ে কার্যকর বাজার হবে। অনেক জায়গায় সপ্তাহে একটি ফ্লাইট অপারেট করা হয়েছে। কানাডায় সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।’

প্রস্তুতি ছাড়াই বিমানের টরন্টো ফ্লাইট শুরু কেন—সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যে অভিযোগগুলো আনছেন, আমি একবারও বলব না, এগুলো সত্য না। আবার এটাও বলব না, সবগুলোই সত্য। বিমানের অব্যবস্থাপনা নেই, এটা বলা যাবে না। কিন্তু বিমান একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে পার হয়েছে। করোনায় বহু এয়ারলাইনস দেউলিয়া হয়েছে। আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা হয়তো যথাযথ সেবা দিতে পারিনি। তবু আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

২৬ মার্চ টরন্টো ফ্লাইট প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী জানান, ‘টরন্টোতে পরীক্ষামূলক ফ্লাইট চালু করতে গেলে যাত্রীসংখ্যা অর্ধেকের নিচে রাখতে হবে। ১২০ যাত্রী নিয়ে টরন্টো যাচ্ছে, ১৪০ জন নিয়ে ঢাকা ফিরবে। আমরা মার্কেটিং করব, পরবর্তী সময়ে যাত্রীর সংখ্যা অবশ্যই বাড়বে।’

৪ কোটি টাকা ব্যয়ে টরন্টোতে ২৬ মার্চ পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক ফ্লাইটটি সরকারের প্রয়োজন নাকি অপচয়—এমন প্রশ্নের জবাবে বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি প্রত্যাশা করি, এটা প্রয়োজন। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কানাডার সঙ্গে ফ্লাইট অপারেট করা, পৃথিবীর অনেক দেশই তা পারছে না। আমরা এটা করতে পেরেছি। এই ফ্লাইট কার্যকর হবে।’

কোটি টাকা খরচ করে বিমানের উড়োজাহাজ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কেন এই ফ্লাইটে যাচ্ছেন—এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী অন্য কথা বলেন।

এর আগে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, সব বিধিগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ২৬ মার্চ প্রথমবারের মতো বিমান ঢাকা-টরন্টো গন্তব্য পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করতে যাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঢাকা-টরন্টো ফ্লাইটটি ২৬ মার্চ রাত সাড়ে ১১টায় যাত্রা করে কানাডায় পৌঁছাবে ২৭ মার্চ স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে। ফিরতি ফ্লাইটটি ২৯ মার্চ কানাডার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় যাত্রা শুরু করে ৩০ মার্চ বাংলাদেশের স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া ১২টায় পৌঁছাবে। বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার দিয়ে ফ্লাইটটি পরিচালনা করা হবে। এতে আসন থাকবে ২৯৮। ২৬ মার্চ যাওয়ার দিন ১৮ ঘণ্টা ও ফেরার ফ্লাইট ১৬ ঘণ্টা সময় লাগবে। তবে বাণিজ্যিকভাবে ফ্লাইট শুরু হলে ফ্লাইটসূচি হবে ১৬ ঘণ্টার।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডীয় লিলি নিকোলস বলেন, ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মাধ্যমে আমরা শুরু করতে যাচ্ছি ঢাকা-টরন্টোর ঐতিহাসিক সরাসরি ফ্লাইট। বছরে দুই দেশের মধ্যে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়। প্রায় ১ লাখের বেশি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক আমাদের দেশে বাস করেন। ৮ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী কানাডায় লেখাপড়া করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের মানুষের মধ্যে আরও যোগাযোগ বাড়ানোর এটা একটা সুযোগ।’

টরন্টো ফ্লাইট পরিচালনা করতে এত তাড়াহুড়ো কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে কানাডীয় হাইকমিশনার বলেন, ‘এগুলো খুবই উচ্চপর্যায়ের টেকনিক্যাল বিষয়। নিরাপত্তাসহ আরও কিছু কাজ বাকি আছে, এ কারণে সময় লাগছে। প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু হবে, এ কারণে সময় লাগবে।’

টরন্টো ফ্লাইটে সাধারণ যাত্রী কত, টিকিট বিক্রি শুরুর পরেই শেষ কেন—এসব প্রশ্নের জবাবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালক (করপোরেট প্ল্যানিং অ্যান্ড ট্রেনিং) এয়ার কমোডর (অব.) মো. মাহবুব জাহান খান দাবি করেন, টিকিট বিক্রি হয়েছে, টিকিট এখনো পাওয়া যাচ্ছে।

টরন্টো ফ্লাইট বাণিজ্যিকভাবে কতটুকু কার্যকর হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুব জাহান খান বলেন, প্রথম দিনের ফ্লাইটে ১২০ থেকে ১৩০ জন যাবে। বাণিজ্যিক ফ্লাইট হলে যাত্রীসংখ্যা ২২০ থেকে ২৩০ হবে। এ হিসাবে কার্যকর হবে এই গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করা। প্রথম দিনের ফ্লাইটে যাত্রী কম। পরে সময় কম লাগবে, যাত্রী বেশি নেওয়া যাবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিমানের ফ্লাইট চালুর কয়েক মাস পরে বন্ধ হয়ে যায়, এটি এড়াতে টরন্টো ফ্লাইট নিয়ে ‘মার্কেট রিসার্চ’ করা হয়েছে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিমানের এই পরিচালক বলেন, ‘সেটি আমরা চিন্তা করেছি। শুরু করে হুট করে বন্ধ করা যাবে না। টরন্টোকে বাণিজ্যিক ফ্লাইট হিসেবে ঘোষণা করেছি। কারণ, আবেদন করা হয়েছে বাণিজ্যিক ফ্লাইট হিসেবেই। হুট করে পরিবর্তন সম্ভব না।’