বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ভোজ্য তেল

বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ভোজ্য তেল

নানা নাটকীয়তার পর ক’দিন আগেই ভোজ্য তেলের দাম কমায় সরকার। নতুন দাম অনুযায়ী খুচরা পর্যায়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা কমিয়ে ১৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৭ টাকা কমিয়ে করা হয় ১৩৬ টাকা। অন্যদিকে খোলা পাম অয়েলের দাম ৩ টাকা কমিয়ে করা হয় ১৩০ টাকা। তবে, দাম কমালেও, এখনো তার প্রভাব পড়েনি বাজারে। বাড়তি দামেই তেল কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

আগারগাঁওয়ের ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম বলেন, নতুন মূল্যের তেল এখনো বাজারে আসেনি। সরবরাহ চাহিদার থেকে কম।
বেশি দামে ক্রয়কৃত পণ্য তো আর কম দামে বিক্রি করতে পারবো না। আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে কিনতে পারলে বিক্রিও করতে পারবো। সরকারের বেঁধে দেয়া মূল্য কার্যকর হতে এখনো প্রায় ৪ থেকে ৫ দিন সময় লাগতে পারে। তিনি বলেন, কোম্পনিগুলো চাহিদা অনুযায়ী তেল দিচ্ছে না।

ডিলাররা জানান, আমরা কোম্পানিগুলোকে টাকা দিয়ে রেখেছি। কিন্তু আমাদেরকে পর্যাপ্ত তেল দেয়া হচ্ছে না। কোম্পানিগুলোকে নাকি সরকারের কাছে তেল বিক্রি করতে হচ্ছে। এজন্য আমাদেরকে বর্তমান মূল্যের তেল দিতে একটু সময় লাগছে। এখন ৫ লিটারের বোতল বেশি পাওয়া যাচ্ছে। ৫০০ গ্রাম, এক লিটার ও দুই লিটারের বোতল কম পাওয়া যাচ্ছে। তবে আমরা আশা করছি কাল-পরশু থেকে বাজারে বর্তমান মূল্যের তেল পাওয়া যাবে।

টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল তাছলিম মানবজমিনকে বলেন, আমরা ২২শে মার্চ থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে প্রডাক্ট দেয়া শুরু করেছি। ডিলাররা এখন সরকার নির্ধারিত মূল্যেই আমাদের কাছ থেকে পণ্য নিতে পারবে। তবে প্রত্যেকটা ডিলারের ঘরে আগের মাল আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ডিলাররা তো চেষ্টা করবে আগের পণ্যগুলো বের করে দেয়ার, তারপর বর্তমান মূল্যে কেনা পণ্য দেয়া শুরু করবে। তখন বাজারে প্রভাব পড়বে। বাজারে প্রভাব পড়তে এখনো ৩ থেকে ৪ দিন সময় লাগতে পারে।

এদিকে তেলের দাম এখনো না কমায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভোক্তারা। হাতিরপুল বাজার করতে আসা শাহনাজ আক্তার বলেন, সরকার তেলের দাম কমালেও এখনো বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছে, সরকার নির্ধারিত দামের তেল এখনো বাজারে আসেনি। আগের কেনা দর অনুযায়ী তেল বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু, দাম বাড়ানো হলে ঠিকই তো পরের দিন থেকেই দাম বেড়ে যায়। তিনি বলেন, লিটার প্রতি মাত্র ৮টাকা কমানো হয়েছে। গত মাসে ৮ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। তাহলে ভ্যাট কমিয়ে লাভ কি হলো?

কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া মানবজমিনকে বলেন, সরকার ভোজ্য তেলের দাম কমিয়েছে এজন্য ধন্যবাদ। তবে দাম কমানো হলেও বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। ভোক্তাদেরকে আগের দামেই তেল কিনতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছে, নতুন দামের পণ্য এখনো তাদের কাছে আসেনি। তবে দাম বাড়লে আমরা ভিন্ন চিত্র দেখতে পায়। তখন সঙ্গে সঙ্গেই দাম বেড়ে যায়। এজন্য সরকারের নজরদারি করা দরকার। তিনি বলেন, ভোজ্য তেলের দাম আরও কমানো উচিত ছিল। সরকার ব্যবসায়ীদেরকে যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন তখনই সবকিছু বিবেচনা করে তেলের দাম ১৬৮ টাকা নির্ধারণ করেছিল। ভ্যাট-ট্যাক্স কমানোর কারণে তেলের দাম ১৫০ টাকা হওয়া উচিত ছিল।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য (বাণিজ্য নীতি) শাহ মো. আবু রায়হান আল-বেরুনী মানবজমিনকে বলেন, সবকিছু বিচার-বিবেচনা করেই আমরা ভোজ্য তেলের দাম নির্ধারণ করেছি। কোম্পানিগুলো আমাদের নির্ধারিত মূল্য মেনেও নিয়েছে। রোজার মাস পর্যন্ত এই দামই কার্যকর থাকবে। তিনি বলেন, এখন বাজারে যে তেল বিক্রি হচ্ছে, সেগুলো আমদানি করা হয়েছে তিন মাস আগে। ভ্যাট দিয়েই পণ্যগুলো আমদানি করতে হয়েছে। তবে কোম্পানিগুলো ভ্যাট ছাড়া তেল আমদানি শুরু করলে দাম আরও কমবে।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, আগের পণ্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত তো কম দামে তেল বিক্রি করতে পারবে না। এই তেলই আগে বিক্রি হচ্ছিল ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৬৮ টাকায়। তেলের বাজারে যে অস্থিরতা ছিল, সেটা আমরা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি। তিনি বলেন, সবাই সরল হিসেবে বলে দিচ্ছে ৩০ শতাংশ ভ্যাট কমানো হয়েছে। আসলে কি ৩০ শতাংশ কমানো হয়েছে? আমরা না বুঝেই অনেক কিছু লিখছি। শুধুমাত্র আমদানি পর্যায়ে যে পরিমাণ ভ্যাট কমানো হয়েছে তার প্রভাব বাজারে পড়ছে। আসলে উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যালু অ্যাডিশন ১ থেকে ১ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত হয়।