দুইদিনে আরও ২৪০৯ ডায়রিয়া রোগী ভর্তি

দুইদিনে আরও ২৪০৯ ডায়রিয়া রোগী ভর্তি

রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী কিছু এলাকায় হঠাৎ করেই ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় গত কয়েকদিনে রাজধানীর মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) হাসপাতালে রেকর্ড সংখ্যক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। গত দুই দিনেই হাসপাতালটিতে দুই হাজার ৪০৯ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ অবস্থায় রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তব্যরতরা।

আইসিডিডিআর,বি’র সূত্র মতে, ২৪শে মার্চ রাত পর্যন্ত এক হাজার ১৭৬ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী আইসিডিডিআর,বি-তে এসে ভর্তি হয়েছেন। এর আগের দিনও (২৩শে মার্চ) রাত পর্যন্ত এক হাজার ২৩৩ জন রোগী ভর্তি হন। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, শনির আখড়া, মোহাম্মদপুর, টঙ্গী ও উত্তরা থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেশি আসছে। এর আগে (২৩শে মার্চ) হাসপাতালটির মিডিয়া বিভাগ সূত্র জানিয়েছিল, গত সাতদিনে ৮ হাজার ১৫২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর আগে গত ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে এরকমই একটি প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল।

সেটি স্থায়ী হয়েছিল মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দৈনিক ১২ থেকে ১৩শ’ ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে আসছেন। যাদের অধিকাংশকে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তব্যরতরা। আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বছরে দুইবার বাড়ে। শীতের সময় আর গরমের সময়ে। সাধারণত প্রতিদিন সাড়ে ৩০০-৪০০ রোগী থাকলেও রোগী বাড়লে সর্বোচ্চ এক হাজারের মতো হয়। কিন্তু এবারই এটা ১ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে গেছে।

আইসিডিডিআর,বির সহযোগী গবেষক ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. লুবাবা শাহরিন গণমাধ্যমকে বলেন, খাবার ও পানির মাধ্যমে ডায়রিয়ার জীবাণু সংক্রমিত হয়। গরম বাড়ার কারণে খোলা জায়গার বিভিন্ন ফলের জুস, শরবত খাচ্ছেন পথচারীরা। এই কারণে ডায়রিয়ার বিস্তারটা এবার ব্যাপক। তিনি বলেন, মার্চের শুরু থেকে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ১৪ই মার্চ থেকে দৈনিক এক হাজারের বেশি রোগী আসছেন। গত কয়েক বছরে এত রোগী আমরা দেখিনি। এবার ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের তুলনায় তরুণ রোগী বেশি পাচ্ছি। তরুণ রোগী বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তারা হয়তো বাইরের খাবার বেশি খাচ্ছেন। খোলা জায়গার বা মুক্ত পরিবেশের খাবার খাচ্ছেন। এ কারণে ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এবার অনেক বেশি মাত্রায় রোগী পাচ্ছি। রোগীরা মারাত্মক পানিশূন্যতা নিয়ে আমাদের কাছে আসছেন। তারা সঠিক সময়ে যদি না আসতেন তাহলে অনেকের মৃত্যুর আশঙ্কা থাকতো। ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পেতে নিরাপদ পানি ও খাবারের বিকল্প নাই। সবচেয়ে ভালো ঘরে তৈরি করা খাবার ও ফুটানো পানি খেতে হবে। পাশাপাশি বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র আইসিডিডিআর,বির বরাত দিয়ে জানিয়েছে, মার্চের ২৩ তারিখ পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শুধু আইসিডিডিআর,বিতে ভর্তি হয়েছেন ১৯ হাজার ৬৭৭ জন রোগী। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল হাসপাতালটিতে ১০ হাজার ৩৪৪ জন এবং জানুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৯০১ জন।