আইজিপি, ডিএমপি কমিশনারের বেফাঁস মন্তব্য: পুলিশ সংগঠনের সাফাই গেয়ে বিবৃতি

আইজিপি, ডিএমপি কমিশনারের বেফাঁস মন্তব্য: পুলিশ সংগঠনের সাফাই গেয়ে বিবৃতি

রাজনৈতিক কোন পদ-পদবি না থাকার পরও প্রশাসনের লোক হয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া আর বেফাঁস মন্তব্য করে ইতিমধ্যে সমালোচিত হয়েছেন পুলিশের আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। রীতিনীতি ভেঙে সরকারের তোষামোদি করার স্বার্থে সম্প্রতি তারা বক্তব্য দিয়েছেন রাজনৈতিক ইস্যুতে, সমালোচনা করেছেন দেশের বিরোধীদলসমূহের এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে। চারদিকে এ নিয়ে নিন্দা আর প্রতিবাদ শুরু হবার পর বুধবার এই দুই কর্মকর্তার পক্ষে সাফাই গেয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএসএ)।

বিবৃতিতে বিপিএসএ বলছে, অতীতের বিভিন্ন সময়ে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালনকারী একটি দলের নেতাদের মুখে পুলিশের মতো পেশাদার বাহিনী সম্পর্কে এই ধরনের হুমকি প্রদানপূর্বক বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত, অপ্রত্যাশিত ও অনভিপ্রেত। ভবিষ্যতে তাঁরা এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকবেন, এটাই বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন প্রত্যাশা করে।

২৬ মার্চ রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মিলনায়তনে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে অশোভন এবং শিষ্টাচারবর্হিভূত মন্তব্য করেন ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম।

একই অনুষ্ঠানে বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ বলেছিলেন, ‘তাঁরা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। দেশের অর্থনীতির ওপর অবরোধ আরোপ করতে একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা লবিস্ট নিয়োগ করছেন, জিএসপি বন্ধ করতে চিঠি লিখেছেন।’

পুলিশের এমন শীর্ষ পদে থেকে এমন অশোভন মন্তব্যের পর চারদিকে নিন্দা এবং সমালোচনা শুরু হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশ সব সময় রাষ্ট্রের কল্যাণে ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা প্রদানসহ স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে পেশাদারির সঙ্গে কাজ করে। দেশের শান্তিপ্রিয় ও উন্নয়নকামী জনগণ পুলিশের পাশে ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ তাদের এ ধরনের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে আইনসংগত সব কাজে পুলিশের প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন বজায় রাখবে বলে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি পুলিশ সদস্যরা প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের সূচনা করেন উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেন এবং ১৪ হাজার পুলিশ সদস্য মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের উত্তরাধিকারী বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা সেবার সুমহান ব্রত নিয়ে সর্বোচ্চ পেশাদারির সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। জঙ্গিবাদ দমনসহ দেশের প্রতিটি সংকটে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্ভীক পুলিশ সদস্যরা দেশপ্রেমের দৃপ্ত শপথে বলীয়ান হয়ে কাজ করছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে দেশের চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ পেশাদারি ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।