রোজার প্রথম দিনেই গ্যাসের জন্য হাহাকার

রোজার প্রথম দিনেই গ্যাসের জন্য হাহাকার

রবিবার ছিল রমজানের প্রথম দিন। এদিন ইফতারের জন্য বিশেষ আয়োজন থাকবে এমনটাই প্রস্তুতি ছিল প্রায় সবার। কিন্তু সেই আয়োজন শুরুই করা যায়নি। কারণ শনিবার রাত থেকেই রাজধানীসহ দেশের অনেক এলাকায় গ্যাসের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গ্যাস না থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে রপ্তানিমুখী অনেক শিল্পকারখানার উৎপাদন। সরবরাহ কমে যাওয়ায় কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদনও। এর ফলে সাধারণ জনগণের ভোগান্তি দ্বিগুণ হয়েছে।

বহুজাতিক কোম্পানি শেভরনের মালিকানাধীন বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র সংস্কারের কারণে গ্যাস উৎপাদন কমে যাওয়ায় এই সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। তবে আজ-কালের মধ্যে সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেছে পেট্রোবাংলা।

এদিকে হঠাৎ করে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে রাজধানীসহ আশেপাশের এলাকার সাধারণ মানুষ। প্রথম রমজানের ইফতার তৈরিতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে ঘরে ঘরে। গ্যাস সঙ্কটের কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক বাসিন্দা।

রাজধানীর মগবাজার এলাকার বাসিন্দা মসিউর রহমান বলেন, সকাল থেকে গ্যাসের চাপ ছিলো না। টিম টিম করে চুলা জ্বলছিল। দুপুরের পর থেকে চুলা একবারেই জ্বলেনি। বাধ্য হয়ে দোকান থেকে ইফতার কিনে আনতে হয়েছে।

সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ শিল্প কারখানাতেই রোববার সকাল থেকেই গ্যাসের চাপ একবারেই কম ছিল। একাধিত শিল্প কারখানার মালিক জানান, তাদের কারখানা চালাতে কমপক্ষে ১৫ পিএসআই চাপে গ্যাস প্রয়োজন হয়। কিন্ত রোববার সকাল থেকে ২/৩ পিএসআই এর উপর গ্যাসের চাপ ছিলো না। ফলে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস উৎপাদনকারী বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের সরবরাহ লাইনে হঠাৎ করে বালির উপস্থিতির কারণে শনিবার রাত দেড়টার দিকে ৬টি কূপের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে দিনে ১২৭ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরকরাহকারী গ্যাসক্ষেত্রটির উৎপাদন এক ধাক্কায় ৪৫ কোটি ঘনফুট কমে যায়।

একইসঙ্গে এলএনজি থেকে মাত্র ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস মেলে। সব মিলিয়ে গ্যাসের ঘাটতি সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। গত শনিবার ২৯৭ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে পেট্রোবাংলা। কিন্তু রোববার তা কমে দাঁড়ায় ২৭৮ কোটি ঘনফুট। এদিকে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪২০ কোটি ঘনফুট।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোববার দিনভর প্রসেসপ্ল্যান্ট সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোন কূপ থেকে বালি আসছে তা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান সমকালকে বলেন, শেভরন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। সন্ধ্যার মধ্যে একটি কূপ থেকে গ্যাস উৎপাদন শুরু হয়েছে। আশা করি সোমবার দিনের মধ্যে গ্যাস সঙ্কট কমে যাবে।

এদিকে গ্যাস সঙ্কটের কারণে কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদনও। গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কমপক্ষে ১৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন থাকলেও পেট্রোবাংলা ১১০ থেকে ১১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে। এরই মধ্যে রোববার বিদ্যুৎ উৎপাদনে আরও ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস কম সরবরাহ করা হয়েছে। এদিকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গ্যাস সঙ্কটের কারণে এদিন প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হয়েছে।

এ বিষয়ে রোববার জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের জরুরি রক্ষাণাবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপ দেখা যেতে পারে। অভিজ্ঞ প্রকৌশলীরা মেরামতের কাজ করে যাচ্ছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে আশা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, গ্যাস সরবরাহের ঘাটতিজনিত কারণে কিছু কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বিঘ্ন ঘটছে। ের ফলে কোন কোন এলাকায় সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে।