খন্দকার মোশতাকের প্রতি ‘শ্রদ্ধা’

অধ্যাপক রহমত উল্লাহকে ঢাবির একাডেমিক-প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি

অধ্যাপক রহমত উল্লাহকে ঢাবির একাডেমিক-প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি

খন্দকার মোশতাক আহমদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একই সঙ্গে রহমত উল্লাহকে তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

আজ বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। সভায় আর কোনো আলোচ্যসূচি ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য প্রথম আলোকে জানান, অধ্যাপক রহমত উল্লাহর বক্তব্যের জন্য সিন্ডিকেট সভায় প্রথমে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এরপর তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামালকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. রহমত উল্লাহ মুজিবনগর সরকারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে খন্দকার মোশতাক আহমদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান বলে অভিযোগ ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ সেখানেই তাঁর এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। পরে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান অধ্যাপক রহমত উল্লাহর বক্তব্যের ওই অংশটি প্রত্যাহার করার কথা জানান।

তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোশতাক মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিছু বিপথগামী সেনাসদস্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর নিজেকে দেশের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন খন্দকার মোশতাক। খন্দকার মোশতাককে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারীদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সেই খন্দকার মোশতাককে ‘শ্রদ্ধা জানানোর’ প্রতিবাদে সরব হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সমালোচনার ঝড় ওঠে।

এই প্রেক্ষাপটে গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাব ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে ‘ভুল করে থাকলে ক্ষমা প্রার্থনা’ করেন অধ্যাপক রহমত উল্লাহ। তবে ওই দিনই রহমত উল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা এবং তাঁর বিষয়ে ‘যথোপযুক্ত ব্যবস্থা’ নেওয়ার দাবি জানিয়ে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। উপাচার্য ছাত্রলীগের দাবি ও বক্তব্যের সঙ্গে একাত্মতা জানান।

মো. রহমত উল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। নীল দলের প্যানেল থেকে তিনি শিক্ষক সমিতির সভাপতির পাশাপাশি আইন অনুষদের ডিনও নির্বাচিত হয়েছেন।

নীল দল ও শিক্ষক সমিতির নিন্দা

এদিকে নীল দলের এক জরুরি সভায় আজ অধ্যাপক রহমত উল্লাহর বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। বিকেলে নীল দলের আহ্বায়ক মো. আবদুস ছামাদ এক বিবৃতিতে বলেন, নীল দলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির জরুরি সভায় রহমত উল্লার বক্তব্য ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। সভায় রহমত উল্লাহর কাছে এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি তাঁর অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পুরো ঘটনার জন্য নীল দল বিব্রত।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিক্ষক সমিতির জরুরি সভায়ও রহমত উল্লাহর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানো হয়। এক বিবৃতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, রহমত উল্লাহ মুজিবনগর সরকারের অন্যান্য নেতার পাশাপাশি খুনি মোশতাকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সে বিষয়ে শিক্ষক সমিতির কার্যকর পরিষদ তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতি রহমত উল্লাহর কাছে ব্যাখ্যা দাবি করে।