র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সহায়তা

মোমেন-জয়শঙ্কর বৈঠকে আলোচনা হয়নি

মোমেন-জয়শঙ্কর বৈঠকে আলোচনা হয়নি

র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ভারতের সহায়তা চাওয়া হলেও এ নিয়ে সফররত দিল্লির বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের কোনো আলোচনাই হয়নি। এমনটা দাবি করেছে বৈঠকে উপস্থিত দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্র। দিল্লির বিদেশমন্ত্রী ড. সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের সফর নিয়ে আগাম ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী মোমেন ভারতের সহায়তা চাওয়ার তথ্য প্রকাশ করেছিলেন। গতকাল সন্ধ্যায় জয়শঙ্করের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয় মোমেনের। তার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন দিল্লির বিদেশমন্ত্রী। ওই বৈঠকদ্বয়ের ফল জানাতে আয়োজিত দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসা ছিল মন্ত্রী মোমেনের প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় দিল্লি আদতে কি বলেছে? দুই মন্ত্রীর কাছে উন্মুক্ত ওই প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করেননি ড. জয়শঙ্কর। ড. মোমেনের দিকে ইশারা করে মৃদু হাসির সঙ্গে জয়শঙ্কর বলেন, ‘এই প্রশ্ন আপনারা ড. মোমেনকে করেন, তিনিই ভালো বলতে পারবেন।’ অবশ্য তৎক্ষণাৎ মন্ত্রী মোমেন ফ্লোর নেন। তিনি তার আগের অবস্থান অনেকটা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ ও ভারত একসঙ্গে কাজ করছে। কিন্তু কাজটা হচ্ছে কীভাবে, যেখানে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে প্রসঙ্গই উঠলো না- সেই প্রশ্ন রয়ে গেছে!

চলতি সপ্তাহে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাফ জানিয়েছেন, সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ আর জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে না। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগের ব্রিফিংয়ে বলেন, বিষয়টি ঠিক আছে

বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দায়বদ্ধতা চাইছে, এই দায়বদ্ধতার ম্যাকানিজম র‌্যাবের অভ্যন্তরেই রয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৮শে এপ্রিল) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ভারতের বিদেশ মন্ত্রীর মধ্যকার বৈঠক হয়। ইফতারের পূর্বে আধঘণ্টারও কম সময় স্থায়ী হয় ওই বৈঠক। পরে তারা যৌথ ব্রিফিংয়ে জানান, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অমীমাংসিত ইস্যুগুলো তাদের আলোচনায় এসেছিল। রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও এ দাবি করা হয়েছে। বলা হয়ে, ঢাকা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত তিস্তা চুক্তি সইয়ের তাগিদ দিয়েছে। জবাবে দিল্লির বিদেশমন্ত্রী কি বলেছেন বিজ্ঞপ্তিতে তার কোনো উল্লেখ নেই। যৌথ ব্রিফিংয়ে ভারতের বিদেশমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি। সরকার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতে এ সংক্রান্ত একটি চিঠিও হস্তান্তর করেছেন।

প্রশ্ন ছিল প্রধানমন্ত্রী কবে নাগাদ দিল্লি সফর করতে পারেন? জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সুবিধাজনক সময়ে সফর করবেন বলে তারা আশা করেন। বিদেশমন্ত্রীর কাছে সম্পূরক প্রশ্ন ছিল প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য দিল্লি সফরটি চলতি বছরের মাঝামাঝি হবে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম লিখেছে। একইসঙ্গে এটাও বলা হচ্ছে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে সরকার প্রধানের দিল্লি সফরটি তাৎপর্যপূর্ণ। সত্যিই কি তাই? খোলাসা করে কোনো জবাব না দিয়ে দিল্লির বিদেশমন্ত্রী বলেন, সফরের সময়ক্ষণই তো এখনো ঠিক হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সুযোগ-সুবিধা মতো যাবেন। সুতরাং এর সঙ্গে অন্য কিছুকে যুক্ত করার বিষয়টি যে ভারত এখন ভাবছে না সেটা খোলাসা করার চেষ্টা করেন তিনি।

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সহায়তার প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন দিল্লির মুখপাত্রও:

বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) কর্মকর্তাদের ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে দিল্লি কোনো সহযোগিতা করবে কিনা? সেই প্রশ্ন উঠেছিল দিল্লির রুটিন প্রেস ব্রিফিংয়ে। কিন্তু বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র তা এড়িয়ে যান। বৃহস্পতিবার বিকালে নয়াদিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী এ সংক্রান্ত প্রশ্নটি গ্রহণ করেন। তবে তিনি যে জবাব দেন তাতে স্বীকার বা অস্বীকার কোনটাই করেননি। এর আগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন এ সপ্তাহেই মন্তব্য করেছিলেন, র‍্যাবের ওপর থেকে আমেরিকা যাতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় সে ব্যাপারে প্রতিবেশী ভারতের সাহায্য চেয়েছে বাংলাদেশ। যদিও তিনি এর বেশি কিছু ভেঙে বলেননি, তবে স্পষ্টতই তার ইঙ্গিত ছিল যেহেতু ভারত ও আমেরিকার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক বেশ ভালো, সেই সুসম্পর্কটাকে কাজে লাগিয়েই নিষেধাজ্ঞাজনিত অস্বস্তি কাটিয়ে উঠতে চাইছে ঢাকা।

সেই প্রসঙ্গের অবতারণা করেই দিল্লির সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মুখপাত্রের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ভারত কি সত্যিই বাংলাদেশের কাছ থেকে এ ধরনের কোনো অনুরোধ পেয়েছে? আর পেলে ভারত কীভাবেই বা সেই অনুরোধে সাড়া দিয়েছে? জবাবে অরিন্দম বাগচী বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ঢাকায় রয়েছেন। ওই সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. মোমেনের সঙ্গে দেখা করবেন।

তিনি যখন কথা বলছিলেন ততক্ষণে ঢাকায় পৌঁছে গেছেন বিদেশমন্ত্রী। মুখপাত্র আর বলেন, মন্ত্রীর সফর অবস্থায় বিষয়টা নিয়ে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন বোধ করছি না। আমরা আগেই কোনো অনুরোধ পেয়েছিলাম কিনা, বিষয়টা নিয়ে আলোচনা হলো কিনা- সেটা বলাটা এখন ঠিক হবে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠকটা হোক আগে। তারপরে না হয় দেখা যাবে আমরা কোনো ডিটেলস শেয়ার করতে পারি কিনা! তবে হ্যাঁ, আমরাও সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট দেখেছি যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ ধরনের একটা মন্তব্য করেছেন। সেই সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র যোগ করেন, ‘তবে এটাও বলার যে সত্যিই কোনো দেশ যদি আমাদের এরকম অনুরোধ জানিয়েও থাকে এবং তার ভিত্তিতে আমরা কোনো পদক্ষেপ নিয়েও থাকি- সেটা বোধহয় আমরা প্রকাশ্যে নাও জানাতে পারি। তাই বলবো, আপনারা বরং মি. জয়শঙ্করের ঢাকা সফর শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন। দেখা যাক, আমরা আদৌ কিছু জানাতে পারি কিনা?

দিল্লির পর্যবেক্ষকদের বরাতে একাধিক সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি সরাসরি স্বীকার না-করলেও মুখপাত্র একবারের জন্যও তা অস্বীকার করেননি। ফলে পর্দার আড়ালে দিল্লি ইতিমধ্যে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা শুরু করেছে, এমনটাই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।-মানবজমিন