লাইসেন্স যাচাই ছাড়াই ৪৬ চালক নিয়োগ

লাইসেন্স যাচাই ছাড়াই ৪৬ চালক নিয়োগ

ড্রাইভিং লাইসেন্স যাচাই-বাছাই ছাড়াই ৪৬ জনকে ভারী গাড়িচালক পদে নিয়োগ দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। অদক্ষ গাড়িচালকের কারণে প্রায়ই ডিএনসিসির গাড়িতে দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় তড়িঘড়ি করে চালক নিয়োগের বিষয়টি সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, ২২ ডিসেম্বর ডিএনসিসি ভারী গাড়িচালকের ৪৭টি শূন্য পদে নিয়োগপত্র আহ্বান করে। অষ্টম শ্রেণি পাশ, ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সিরা এ পদের যোগ্য। ২০১৫ সালের বেতন কাঠামো অনুযায়ী এ পদের বেতন ৯ হাজার ৩০০ থেকে ২২ হাজার ৪৯০ টাকা। এ পদের বেতন গ্রেড ১৬তম। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত আবেদনের সময় নির্ধারিত ছিল। আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করে লিখিত, মৌখিক ও প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। ডিএনসিসির নিজস্ব কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এ পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরে নিয়োগ প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে বিআরটিএ’কে চিঠি দেয় ডিএনসিসি। সেখানে ডিএনসিসির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত ব্যক্তিদের ড্রাইভিং লাইসেন্সের সঠিকতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। বিআরটিএ-এর জবাব পাওয়ার আগেই ২০ এপ্রিল ৪৭টি পদের বিপরীতে ৪৬ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ভারী গাড়িরচালকরা ২৪ এপ্রিল ডিএনসিসিতে যোগদান করেছেন।

ডিএনসিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ভারী গাড়ি চালানো খুব কঠিন কাজ। ডিএনসিসির পর্যাপ্ত দক্ষ ভারী গাড়িচালক না থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। দক্ষ চালকের অভাবে ডিএনসিসির শতাধিক গাড়ি ওয়ার্কশপে পড়ে রয়েছে। গাড়ি থাকা সত্ত্বেও বাইরে থেকে গাড়ি ভাড়া করে চাহিদা মেটানো হচ্ছে। এ অবস্থায় ড্রাইভিং লাইসেন্স যাচাই-বাছাই ছাড়াই নিয়োগ চূড়ান্ত করা কোনোভাবেই সঠিক হয়নি। তিনি বলেন, ভারী গাড়িচালক নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার সময় মেয়র মহোদয় ওমরাহ করতে সৌদি আরব অবস্থান করছিলেন। ডিএনসিসি প্রশাসনের তড়িঘড়ি করে যাচাই-বাছাই ছাড়া ভারী গাড়িচালক নিয়োগ মেয়রের ইমেজও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

ডিএনসিসির আরেক কর্মকর্তা জানান, লিখিত, মৌখিক ও প্র্যাকটিক্যাল (ব্যাবহারিক) পরীক্ষা ভালো হয়েছে। এসব পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হয়েছেন অনেকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। তারা বিআরটিএ’তে পরীক্ষা দিয়েছেন-এমন কাগজ জমা দিয়েছেন। এর বাইরেও কিছু ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএনসিসির সচিব (যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করার বিষয়ে আমরা খুবই আন্তরিক ছিলাম। এজন্য ৪৭টি পদ থাকা সত্ত্বেও ৪৬ জন চূড়ান্ত করেছি আমরা। কেননা, আবেদনকৃতদের মধ্যে অন্যরা পরীক্ষায় কতৃকার্য হতে পারেনি।

তিনি বলেন, ডিএনসিসির ভারী গাড়িচালক পদ নিয়ে কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে। আইনগত দিক বিবেচনা করে নিয়োগ চূড়ান্ত করতে একটু তড়িঘড়ি করতে হয়েছে। নইলে নিয়োগ দেওয়া যেত না। এরপরও ড্রাইভিং লাইসেন্স যাচাই-বাছাই করেই নিয়োগ দেওয়ার ইচ্ছা ছিল আমাদের। কিন্তু বিআরটিএ স্বল্প সময়ের মধ্যে জবাব দিতে না পারায় নিরুপায় হয়ে আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

ভারী গাড়িচালকদের মূল সনদ যাচাই-বাছাই ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া সঠিক হয়েছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিআরটিএ জবাব দেওয়ামাত্রই আমরা নিয়োগকৃতদের ড্রাইভিং লাইসেন্স সঠিক না থাকলে তাদের চাকরিচ্যুত করব। নিয়োগপত্রে এমন শর্ত দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে।