নিউমার্কেটে সংঘর্ষ ও হত্যা: ছাত্রলীগ কর্মীসহ ৩ জন রিমান্ডে

নিউমার্কেটে সংঘর্ষ ও হত্যা: ছাত্রলীগ কর্মীসহ ৩ জন রিমান্ডে

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষ ও দুজন নিহতের ঘটনায় গ্রেফতার তিনজনের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শুক্রবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোশাররফ হোসেন শুনানি শেষে ওই তিনজনকে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।

তারা হলেন- ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী মাহমুদুল হাসান সিয়াম এবং দোকানকর্মী মোয়াজ্জেম হোসেন সজীব ও মেহেদী হাসান বাপ্পি।

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের ওই সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় বুধবার শরীয়তপুর ও কক্সবাজার থেকে এই তিনজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

এর আগে গত ২৮ এপ্রিল কুরিয়ার সার্ভিস কর্মী নাহিদ হোসেন হত্যায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতারের খবর জানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে এখন পর্যন্ত দোকানকর্মী মোহাম্মদ মুরসালিনের হত্যায় জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

শুক্রবার সর্বশেষ গ্রেফতার তিন আসামিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। নাহিদ হত্যা মামলায় সিয়ামের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির ধানমণ্ডি জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. তারিকুল আলম জুয়েল। সিয়ামের পক্ষে তার আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করা হয়। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আর পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার মামলায় বাপ্পি ও সজীবের সাত দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা নিউমার্কেট থানার পুলিশ পরিদর্শক হালদার অর্পিত ঠাকুর। দুই আসামির পক্ষে তাদের আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তাদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এই আসামিদের গ্রেফতারের পর র‌্যাব জানায়, সিয়ামকে শরীয়তপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। মোয়াজ্জেম ও মেহেদীকে কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরমধ্যে গ্রেফতার সিয়াম সংঘর্ষকালে নিহত নাহিদ হত্যায় সরাসরি জড়িত। ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নাহিদকে রড দিয়ে আঘাত করছেন সিয়াম। আর দোকানকর্মী মোয়াজ্জেম ও মেহেদীর বিতণ্ডা থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছিল। নিউমার্কেটে পাশাপাশি দুটি ফাস্ট ফুডের দোকানের কর্মচারীদের মধ্যে ইফতারি বিক্রয়ের টেবিল বসানো নিয়ে বিতণ্ডা থেকে হাতাহাতি হয়। প্রতিশোধ নিতে দুই দোকানকর্মী মোয়াজ্জেম ও মেহেদী ফোন করে তাদের পরিচিত দুষ্কৃতকারীদের আসতে বলেন। পরে দুই দোকানের কর্মচারীদের মধ্যে মারামারি হয়। একপর্যায়ে তা ছাত্র ও কর্মচারীদের সংঘর্ষে রূপে নেয়। সংঘর্ষকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়। অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করা হয়।

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৮ এপ্রিল রাতে নিউমার্কেটের দোকানের কর্মীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরদিনও চলতে থাকে সংঘর্ষ। প্রায় ১৮ ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষের সময় একটি কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারিম্যান নাহিদকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়। ইটের আঘাতে আহত হন মুরসালিন নামের নিউ সুপারমার্কেটের আরেক দোকানকর্মী। পরে দুজনই হাসপাতালে মারা যান। সংঘর্ষে জড়ানো দুই পক্ষ এবং সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা দুই শতাধিক মানুষ এতে আহত হন। এ ঘটনায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ১ হাজার ৭২৪। দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে দুটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া সংঘর্ষ ও বোমাবাজির ঘটনায় আলাদা দুটি মামলা করেছে পুলিশ। আরেকটি মামলা করেছেন সংঘর্ষের দিন ভাঙচুর হওয়া অ্যাম্বুলেন্সের মালিক। এর মধ্যে হত্যা মামলা দুটির তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ। বাকি তিন মামলার তদন্ত করছে নিউমার্কেট থানা পুলিশ।

এদিকে সংঘর্ষের মামলায় নিউমার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেনকে এর আগে গ্রেফতার করে পুলিশ। নাহিদকে হত্যার ঘটনায় ইতোমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি। তারা হলেন- মো. আবদুল কাইয়ুম, পলাশ মিয়া, মাহমুদ ইরফান, মো. ফয়সাল ইসলাম ও মো. জুনাইদ বোগদাদী। এরা ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। সংঘর্ষের সময় তারা ধারাল অস্ত্র নিয়ে সামনের সারিতে ছিলেন।