গ্যাস সংযোগ বন্ধ, কামরাঙ্গীরচরে বিপাকে ১৬ লাখ মানুষ

গ্যাস সংযোগ বন্ধ, কামরাঙ্গীরচরে বিপাকে ১৬ লাখ মানুষ

ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে গ্রাহকদের সংযোগ ১০ মে থেকে বন্ধ করে দিয়েছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। কোনো নোটিশ ছাড়া এমন সিদ্ধান্তে হতবাক চরের বাসিন্দারা। গ্যাস সংযোগ বন্ধ হওয়ায় ওই এলাকার প্রায় ১৬ লাখ মানুষ ৬ দিন ধরে মারাত্মক কষ্টের মধ্যে আছেন। কারণ বাসাবাড়িতে রান্নাবান্না বন্ধ। হোটেল ও রেস্তোরাঁয় খাবার বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। কবে নাগাদ গ্যাস সংযোগ মিলবে এবং কীভাবে সংকটের সমাধান হবে, তা জানেন না এলাকাবাসী।

জানা যায়, কামরাঙ্গীরচর থানায় তিতাস গ্যাসের বৈধ সংযোগ ১২ হাজার। পাশাপাশি অবৈধ সংযোগ রয়েছে প্রায় ৩৬ হাজার। এক দশক ধরে এসব গ্রাহকের বেশির ভাগ গ্যাসের বিল পরিশোধ করেন না। তাদের অভিযোগ-অবৈধ গ্রাহকদের কারসাজির কারণে বৈধ গ্রাহকরা গ্যাস পাচ্ছেন না। এতে গ্রাহকদের কাছে তিতাসের পাওনা জমেছে প্রায় ৬৮ কোটি টাকা।

গ্যাসের বিল আদায়ে অপারগ হয়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ এমন কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ প্রসঙ্গে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ মোল্লাহ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কামরাঙ্গীরচরের গ্রাহকরা গ্যাসের বিল পরিশোধ করছে না। তাদের অভিযোগ, তাদের চুলা জ্বলে না। অবৈধ সংযোগকারীরা কারসাজি করে গ্যাস সরিয়ে নিচ্ছে। এ কারণে তারা বিল পরিশোধ করবেন না। নানা উদ্যোগ ও আলোচনা করেও বকেয়া বিল আদায়ের কোনো পথ করা সম্ভব হয়নি। এজন্য ওই এলাকার গ্যাস সংযোগ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। এভাবে জাতীয় সম্পদের অপচয় তো কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।

তিনি বলেন, ১২ হাজার গ্রাহকের কাছে ৬৮ কোটি টাকা গ্যাসের বিল বকেয়া-এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ওই এলাকায় যেসব বাসাবাড়িতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে, তারা শুধু গ্যাসের সুবিধা গ্রহণ করবে। কিন্তু অন্যরা চোরাই লাইন দিয়ে সেসব গ্যাস বের করে নিচ্ছে। এত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ওই এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করা তিতাসের জন্য দুরূহ ব্যাপার। এজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তারা অবৈধ গ্যাস সংযোগ রোধে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। তিতাস তাদেরকে সহযোগিতা করবে। এভাবে সমাধান এলে পুনরায় কামরাঙ্গীরচরে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে।

কামরাঙ্গীরচরের রহমতবাগ এলাকার বাসিন্দা ইলিয়াছ আহমেদ বাবুলের অভিযোগ, ১৭ বছর ধরে গ্যসের চুলায় রান্না করা যায় না। সকাল থেকে রাত ১টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। ফলে সিল্ডিার গ্যাস কিনে রান্না করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা তিতাসের গ্যাসের বিল দেব কেন?

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে তিতাস সেবা না দিয়ে লাখ লাখ টাকা বকেয়া দাবি করছে। এটা কোনোভাবেই আমরা পরিশোধ করতে পারব না। আমাদের বকেয়া মওকুফ ও গ্যাস সংযোগ বাতিল করা হোক। আমাদের এমন গ্যাসের প্রয়োজন নেই। তিতাস একটি সরকারি সংস্থা হয়েও অবৈধ সংযোগ বন্ধ করতে পারেনি। ফলে বৈধ সংযোগদাতারা বঞ্চিত থাকছে। উপরন্তু বৈধ গ্রাহকদের কাছে বকেয়া দাবি করা হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’ কামরাঙ্গীরচরের ম্যাটাডোর শিল্প পার্ক এলাকার বাসিন্দা সাফায়েত হোসেন বলেন, বৈধ সংযোগের চেয়ে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বেড়ে যাওয়া তিতাস কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা। বছরের পর বছর এ অবস্থা চলে আসছে। তিতাসের সদিচ্ছা থাকলে এখানে শৃঙ্খলা আনতে পারত। সেটা হলে তিতাসের রাজস্ব আয় বাড়ত এবং গ্রাহকরা উপকৃত হতো। তিতাস সেদিকে কোনো খেয়াল না করে হঠাৎ করে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ায় সাধারণ মানুষ বিপদে পেড়েছেন।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন বলেন, তিতাস কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ায় এলাকায় ১৫ থেকে ১৭ লাখ মানুষ রান্না ও খাবার নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বিষয়টির সুরাহা করতে চান। এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরে সহযোগিতা চেয়েছেন। আমরা তিতাসের সার্বিক কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদান করে কামরাঙ্গীরচরে গ্যাস সংযোগ ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে কাজ করব। তিনি বলেন, গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এলাকাবাসীর সমস্যা হচ্ছে, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখানে তিতাসের একরকম কথা, সাধারণ গ্রাহকদের আরেক রকম কথা। গ্রাহকরা বলছেন গ্যাস পাই না, টাকা দেব কেন, আর তিতাস বলছে-গ্রাহকরা টাকা না দিলে গ্যাস সংযোগ দেওয়া যাবে না। এ বিশৃঙ্খলা নিরসনে তিতাসের সঙ্গে আমরা কাজ করব। আশা করি, এ সংকটের সুরাহা করা সম্ভব হবে। বর্তমানে গ্যাসের বৈধ সংযোগ ১২ হাজার হলেও অবৈধ সংযোগ প্রায় ৪০ হাজার। এভাবে চলতে পারে না। এটাকে শৃঙ্খলায় আনতে হবে।