সিলেটে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের মহড়া, শনাক্ত হয়নি কেউ

সিলেটে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের মহড়া, শনাক্ত হয়নি কেউ

সিলেটে প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মহড়া দিলেও গত তিন দিনে কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি।

গত সোমবার বিকেলে নগরের চৌহাট্টা এলাকায় ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তখন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র, রড, পাইপ ও লাঠি নিয়ে মহড়া দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ছাত্রদলের নেতারা। এ ঘটনায় ধারালো অস্ত্র হাতে থাকা একজনের ছবি প্রথম আলোসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

সিলেট মহানগরের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ দাবি করেছেন, ওই দিন পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় ধারালো অস্ত্র হাতে কাউকে মহড়া দিতে দেখা যায়নি। তাই পুলিশ মামলা করেনি। ছাত্রলীগ কিংবা ছাত্রদলের পক্ষ থেকেও এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।

চৌহাট্টা এলাকার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানিয়েছেন, ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার একপর্যায়ে ছাত্রলীগের কয়েক শ নেতা-কর্মী জড়ো হয়ে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দেন। এরপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ওই দিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সোয়া ছয়টা পর্যন্ত চৌহাট্টা-রিকাবিবাজার সড়কে অবস্থান নিয়ে মহড়া দেন। মহড়ার সময় বেশ কয়েকজনের হাতে ধারালো অস্ত্র, লোহার রড ও পাইপ দেখা গেছে। তাঁরা ছাত্রলীগের কর্মী বলে অনেকেই তখন জানিয়েছেন।

পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ওই দিন হামলার শিকার হন ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (ইমজা) সিলেটের সভাপতি মঈন উদ্দিন। তাঁকে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছেন কয়েকজন। ওই হামলায় লোহার রড হাতে হাবিবুর রহমান নামে এমসি কলেজ ছাত্রলীগের এক কর্মীর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া চৌহাট্টা এলাকায় ছাত্রলীগের মহড়া দেওয়ার সময় দা হাতে আরেক যুবকের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তবে ওই যুবকের শরীরের পেছনের অংশ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় তাঁর পরিচয় কেউ নিশ্চিত হতে পারছে না।

এ বিষয়ে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধারালো অস্ত্র হাতে থাকা যুবকের ছবিটি দেখেছি, তবে ওই যুবক কে, সেটা আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। ছাত্রলীগের কোনো নেতা-কর্মীর হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল না। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরাই ধারালো অস্ত্র হাতে ছিলেন বলে শুনেছি। মূলত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর আকস্মিক হামলা চালিয়েছে ছাত্রদল। তাই হাতের পাশে রাস্তায় পড়ে থাকা লাঠি, বাঁশ আর ইটের টুকরা দিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ছাত্রদলের হামলা প্রতিহত করে তাঁদের ধাওয়া দিয়েছেন।’

ছাত্রলীগের অভিযোগের বিষয়ে জানতে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি ধরেননি। তবে ছাত্রদল সিলেট মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী এহসান বলেন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র হাতে সেদিন মহড়া দিয়েছেন। উল্টো এখন তাঁরা ছাত্রদলকে দোষারোপ করতে চাইছেন। ছাত্রলীগই ধারালো অস্ত্রসহ লাঠিসোঁটা নিয়ে অতর্কিতে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেছে।

এদিকে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার সাংবাদিক মঈন উদ্দিন মঙ্গলবার রাতে সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন। মামলায় ছাত্রলীগ কর্মী হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিবের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। হাবিব জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলামের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তাঁর বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কাইমা গ্রামে। লোহার পাইপ হাতে হাবিবের ছবিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছিল।

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘হাবিবুর এমসি কলেজ ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। কোনো বিশেষ মহলের ইন্ধনে কিংবা ভুল তথ্যের ভিত্তিতে তাঁর নামে মামলা করা হয়েছে। সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় হাবিবুর কিংবা ছাত্রলীগের কেউ জড়িত ছিলেন না।’

সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, সাংবাদিক মঈন উদ্দিনের দায়ের করা মামলার আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশ চেষ্টা করছে।