রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কা, সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কা, সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে—এমন আশঙ্কায় সতর্কতা জারি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কেউ যাতে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে না পারে সেজন্য আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং আগাম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামার চেষ্টা করছে। কেউ যাতে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হায়দার আলী খান বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি যদি ঘটে আমরা সবসময়ই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। সবক্ষেত্রেই আমরা সহনশীল রাজনীতির কথা বলে থাকি। আমরা আশা করি সবাই নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি তা করবে। কোনও ধ্বংসাত্মক রাজনীতির কোনও কিছু করা, জনগণের অশান্তি বা জনগণকে সমস্যায় ফেলে সরকারি সম্পত্তি বা পাবলিকের জানমালের ক্ষতি যদি কেউ করতে চায় আমরা বরাবরের মতোই শক্ত হাতে দমন করবো।

পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে কোনোভাবেই অস্থিতিশীলতা কাম্য না। আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, আমাদের উন্নয়নের যাত্রা যাতে অব্যাহত থাকে। বিদেশি বিনিয়োগ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, বিশ্বের কাছে যেন অস্থিতিশীল দেশের রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত না হতে হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই আমরা করবো। কেউ যদি এমন কিছু করার চেষ্টা বা চক্রান্ত করে আমরা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেব। এসব ক্ষেত্রে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছরের শুরু থেকেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন কর্মসূচীর নামে মাঠে নামতে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কর্মসূচীর নামে সড়কে প্রতিবন্ধকতা ও ভাঙচুরের পাশাপাশি সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধনসহ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা হতে পারে বলে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদনও দিয়েছে। সম্প্রতি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ড সেরকম ঘটনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, হঠাৎ করেই একটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিএনপির পক্ষ থেকে সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচীর ডাক দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় লাঠি হাতে প্রবেশ ও এ নিয়ে দুদিন ধরে ছাত্রলীগের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার প্রারম্ভিক কর্মকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। নাশকতার জন্য কেউ মাঠে নামার আগেই প্রয়োজনে সারাদেশে সর্বাত্মক অভিযান চালানো হবে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, গত দুই মাসে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অপরাধ পর্যালোচনা সভাতেও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দিয়েছেন। গত মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘জামাত-শিবির হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাদের গতিবিধি লক্ষ্য রাখতে হবে। কোনও ধ্বংসাত্মক কাজ যেন করতে না পারে সেদিকে সকলকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে।’

গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত একটি গ্রুপ ইতোমধ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও নাশকতা করার জন্য প্রচুর পরিমাণে পেট্রোল বোমা ও ককটেল মজুত করেছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনার অপেক্ষায় ওই গ্রুপটি রয়েছে। নির্দেশনা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ককটেল ফাটিয়ে ও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করাটাই তাদের মূল উদ্দেশ্য।

গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তা জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সরকার কিছুটা চাপে থাকলেও বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে সেসব চাপ কাঠিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। আগামী মাসের ২৫ তারিখে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হবে। এই সেতু উদ্বোধন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় একটি সাফল্য। এই সাফল্যকে ম্লান করার জন্যই বিরোধী রাজনৈতিক চক্রটি মাঠে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আগাম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দেশের কোনও জেলাতেও যেন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের নামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি কেউ তৈরি করতে না পারে সেজন্যও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে ভোলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, পুলিশ সদর দফতর নিয়মিত নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাঠিয়ে থাকে। এছাড়া আমরা সবসময়ই রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে কেউ যাতে অস্থিতিশীলতা তৈরি বা নাশকতা করতে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকি।