রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে আঁতে ঘা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের কড়া হুঁশিয়ারি!

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের কড়া হুঁশিয়ারি!

বাংলাদেশ নয়, যুক্তরাষ্ট্রের বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রদূতকে প্রশ্ন করতে সাংবাদিকদের পরামর্শ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

বুধবার সকালে পাঠানো এক বার্তায় যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রদূতকে প্রশ্ন করা বিষয়ে এ অভিমত দেন। জাতীয় প্রেসক্লাবে গত মঙ্গলবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বাংলাদেশের নির্বাচন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যু‌ নিয়ে কথা বলেন।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে পাঠানো বার্তায় আব্দুল মোমেন লিখেছেন, ‘অনুগ্রহ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে প্রশ্ন করবেন, কেন তারা তাদের নিজ দেশে এ ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে পারেন না? দ্বিতীয়ত, প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ মার্কিন নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে নিখোঁজ হয়। এমনকি শিশুরা তাদের হিস্পানিক মা–বাবার সঙ্গে পুনর্মিলন থেকে বঞ্চিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করুন, বাংলাদেশ সম্পর্কে নয়।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের এ দেশ শাসন এবং এর উন্নয়নের দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের নয়। যুক্তরাষ্ট্র যদি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা চায়, তাহলে আরটি (রাশিয়ান টেলিভিশন) সম্প্রচারে কেন বাধা দিয়েছে? তারা যদি জবাবদিহি চায়, তাহলে কেন প্রতিবছর এক হাজারেরও বেশি নাগরিককে (বেশির ভাগ কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিক) হত্যার দায়ে মার্কিন নিরাপত্তা বাহিনী বা পুলিশের কোনো শাস্তি বা জবাবদিহি হয় না?’

সাংবাদিকদের উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিখেছেন, ‘আপনারা কেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে প্রশ্ন করেন না, যদি নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু হয়, তাহলে কেন তরুণ আমেরিকানরা তাদের নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করে না এবং কেন তরুণ আমেরিকানদের মধ্যে ভোট দেওয়ার হার কম? প্রতিটি নির্বাচনে কেন তাদের ভোটারদের প্রায় ২৫ শতাংশ ভোট দেয়?’

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিক্যাব টকে অংশ নেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। সেখানে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন, মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেন তিনি।

রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে কোনো ছাড় দিবেনা যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রদূত বলেন, র‌্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য র‌্যাবের জবাবদিহিতা ও সংস্কার চায় যুক্তরাষ্ট্র।

তিনি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের কথাও বলেন, যেখানে নির্বাচন কমিশন ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পিটার হাস বলেন, 'প্রেসিডেন্ট বাইডেন স্পষ্ট করেছেন যে, মানবাধিকার ও মানবাধিকার রক্ষা যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দু। র‌্যাব ও র‌্যাব কর্মকর্তাদের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সেটা তারই ফল।'

গত বছরের ১০ ডিসেম্বর র‌্যাব এবং এর বর্তমান ও সাবেক ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশ গত কয়েক মাস ধরে নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের কী কী দৃঢ় উদ্যোগ নেওয়া দরকার জানতে চাইলে পিটার হাস বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র ২টি জিনিস চাইছে—সম্ভাব্য মানবাধিকার লঙ্ঘনে র‌্যাবের জবাবদিহিতা এবং সেই অপব্যবহারের ঘটনা যাতে আর না ঘটে তা নিশ্চিত করার জন্য সংস্কার।'

আগামী বছর অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে পিটার হাস বলেন, সম্প্রতি আমি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানের গুরুত্বের কথা বলছি, যেন বাংলাদেশের জনগণ অবাধে তাদের নেতা নির্বাচন করতে পারে।