ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের সম্মেলন

ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের সম্মেলন

‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’—আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই নীতি মেনে চলবে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে সবার আগে বাংলাদেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। দেশের স্বার্থ যেদিকে, সরকার সেদিকে যাবে। বুধবার গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অবস্থান ব্যক্ত করেছেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিকেল চারটায় বৈঠক শুরু হয়ে রাত প্রায় নয়টার দিকে শেষ হয়। বৈঠকে উপস্থিত নেতারা জানান, বৈঠকে যোগ দেওয়া সব নেতাই বক্তব্য রাখেন। দলীয় প্রধান সবার বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং নিজের মত দেন। আলোচনার একটা বড় অংশজুড়েই ছিল পদ্মা সেতুর উদ্বোধন, খাদ্যপণ্যের দাম, দলের আগামী জাতীয় সম্মেলন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গ।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে উপদেষ্টা পরিষদের দলের ‘থিঙ্কট্যাংক’ হিসেবে কাজ করার কথা। ক্ষমতাসীন দলের এই ফোরামই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে দলের করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেবে। বৈঠকের শুরুতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা সূচনা বক্তব্য দেন। এরপর নেতাদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন তিনি।

বৈঠক সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাপী নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার বিষয়টি অনেক নেতা তাঁদের বক্তব্যে উল্লেখ করেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের দেশে দেশে দুর্ভিক্ষের অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে—, এমন আশঙ্কাও উঠে আসে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান কী হবে, সে বিষয়ে কথা বলেন নেতারা। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই মৌসুমে খাদ্যশস্য ও শাকসবজির পর্যাপ্ত উৎপাদন হয়েছে। বাংলাদেশ খাদ্যে উদ্বৃত্ত অবস্থানে আছে। এরপরও বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধির কারণে যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে, সেগুলোর বিষয়ে সরকার সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৯৮ সালে সারা দেশে বন্যার সময় অনেক বিদেশি সংস্থা বহু মানুষের না খেয়ে ও অসুখে মরার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল। কিন্তু কিছুই হয়নি। তিনি আশা করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতেও কোনো সমস্যা হবে না। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকারের কাছে বাংলাদেশের স্বার্থই চূড়ান্ত। এর জন্য যেদিকে যাওয়া দরকার, সেদিকেই যাবেন।

আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এবং বর্তমান আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে দলকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দলে নতুন নেতৃত্বকে সুযোগ করে দিতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর লোকজন যাতে টাকাপয়সা দিয়ে দলে ঢুকে না যান, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

উপদেষ্টা পরিষদের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দেশের মর্যাদা বেড়ে গেছে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সাহসিকতার জন্য উপদেষ্টা পরিষদের নেতারা তাঁকে ধন্যবাদ জানান। পদ্মা সেতুর বিষয়ে দলীয় প্রধান বলেছেন, এই সেতু না হওয়ার জন্য দেশে-বিদেশে বিপুল ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু সততার কারণে কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হয়নি। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন বিপুল মানুষ সেখানে জমায়েত হবেন। এ জন্য নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের বিষয়ে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলেও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বৈঠকে জানান। এ লক্ষ্যে তৃণমূল থেকে দলকে প্রস্তুত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। ক্যাম্পাসসহ সারা দেশে প্রতিবাদের নামে ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্রদলসহ বিএনপির বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের মারামারির ঘটনার সমালোচনা করে উপদেষ্টা পরিষদের একাধিক সদস্য বলেন, কাউকে সুযোগ দেওয়া যাবে না। সামনে জাতীয় নির্বাচন, এ বিষয়কে মাথায় নিয়ে সবাইকে সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে। ছাত্রলীগসহ সব সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীদের লাগামহীন আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেন তাঁরা। ছাত্রলীগ বিষয়ে দলের নেতাদের বিভিন্ন বক্তব্যের সমালোচনা করেন নেতারা। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তাদেরও লাগাম টেনে ধরতে হবে।