১০ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ৩০.৮ বিলিয়ন ডলার

১০ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ৩০.৮ বিলিয়ন ডলার

চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে ৩০.৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে বাণিজ্য ঘাটতি। আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির তুলনায় রফতানি আয় কম বাড়ায় এ ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। এতদিন প্রবাস আয় দিয়ে এ ঘাটতি পূরণ হয়ে আসছিল। কিন্তু এবার প্রবাস আয় কমতে থাকায় ১০ মাস শেষে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের চলতি হিসাবের ঘাটতি ১৫.৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আগের অর্থবছর এই ঘাটতি ছিল ৪.৫ বিলিয়ন ডলার। এভাবে প্রতি মাসেই লেনদেনের ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ডলারের দরের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বাড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল ১০ মাসে ৭৪.২২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়। সর্বশেষ এপ্রিল মাসে আমদানি হয় ৭.৭২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। বছরের শেষ দুই মাসে এ হারে আমদানি হলে অর্থবছর শেষে মোট আমদানি ব্যয় দাঁড়াতে পারে ৯০ বিলিয়ন ডলারের মতো। অন্যদিকে অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে পণ্য রফতানি হয় ৪৭.১৭ বিলিয়ন ডলারের। সর্বশেষ মে মাসে পণ্য রফতানি হয় ৩.৮৩ বিলিয়ন ডলারের। শেষ মাসে একই হারে রফতানি হলে ৫১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে পুরো বছরের রফতানি আয়। এতে বছর শেষে ৪০ বিলিয়ন ডলারের মতো বাণিজ্য ঘাটতি হতে পারে।

অন্যদিকে অর্থবছরের ১১ মাসে প্রবাস আয় হয়েছে ১৯.১ বিলিয়ন ডলার। শেষ মাসে দেড় বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এলে বছর শেষে এ খাতে আয় দাঁড়াতে পারে সাড়ে ২০ বিলিয়ন ডলারের মতো। এতে চলতি অর্থবছর শেষে চলতি হিসাবে ঘাটতি ১৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যা আগের অর্থবছর ছিল ৪.৫ বিলিয়ন ডলার।

বৈদেশিক খাতের লেনদেনের ভারসাম্যে বাণিজ্য ঘাটতি বড় ধরনের চাপ তৈরি করছে। গত ৩০ জুন যেখানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৬.৩ বিলিয়ন ডলার ছিল তা গত ১ জুন নেমে এসেছে ৪২.১ বিলিয়ন ডলারে। এ ধারা সামনেও অব্যাহত থাকবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

এদিকে দেশের রফতানি আয়ে বছরের শেষে এসে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। গত বছরের আগস্টের পর থেকে গড়ে প্রতি মাসে ৪০০ কোটি ডলার করে রফতানি আয় করেছে বাংলাদেশ। গত মে মাসে বিভিন্ন পণ্য রফতানি থেকে ৩৮৩ কোটি (৩.৮৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে। এই আয় গত ৯ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও রফতানি আয় ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ কম। আগের মাস এপ্রিলের চেয়ে কম এসেছে ১৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। তবে সার্বিকভাবে রফতানি আয় গত ১১ মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৪ শতাংশ বেড়েছে বলে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্যে প্রকাশ করা হয়েছে।

ইপিবির গতকাল প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১১ মাসের হিসাবে অর্থাৎ জুলাই-মে সময়ে রফতানি খাত থেকে সব মিলিয়ে চার হাজার ৭১৭ কোটি ৪৬ লাখ ৩০ ডলার আয় হয়েছে, যা গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি এসেছে ১৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

সদ্য বিদায়ী মে মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৩৮৩ কোটি ডলার। এপ্রিলে আয় হয়েছিল ৪৭৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। গত বছরের মে মাসে আয় হয়েছিল ৩১০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত বছরের আগস্ট মাসে পণ্য রফতানি থেকে ৩৩৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। এর পর থেকে প্রতি মাসেই ৪০০ কোটি (৪ বিলিয়ন) ডলারের বেশি রফতানি দেশে এসেছে। সবচেয়ে বেশি এসেছিল গত বছরের ডিসেম্বরে, ৪৯০ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। গত মে মাসে যে আয় হয়েছে তা গত বছরের মে মাসের চেয়ে ২৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। করোনা মহামারীর মধ্যে ২০২১ সালের মে মাসে কম রফতানি আয় দেশে এসেছিল।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার হাজার ৩৫০ কোটি ডলার। আর এগারো মাসের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৯৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলার আয়ের বিপরীতে রফতানি আয় হয়েছে চার হাজার ৭১৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ অন্তত ৩৬৫ কোটি ডলারের বেশি আয় হয়েছে।

রফতানির সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমরা এমনটিই আশঙ্কা করছিলাম। গত মাসে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সাত থেকে আট দিন কারখানা বন্ধ ছিল। এ সময় উৎপাদন ও রফতানি কার্যক্রমও বন্ধ ছিল। পাশাপাশি ইউরোপসহ বিশ্বজুড়ে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতিও দেখা গেছে। এ কারণে চাহিদা কমে যাওয়ায় গত মে মাসে আয় কমেছে। তারা বলছেন, যুদ্ধের কারণে আমাদের পোশাকের প্রধান বাজার ইউরোপ ও আমেরিকায় মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গেছে। সে কারণে এখন সেখানকার মানুষের খাদ্যের জন্য বেশি খরচ করতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে তারা পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। যার প্রভাব পড়েছে রফতানি আয়ে।