৪ সংগঠনের যৌথ বিবৃতি

খেয়ালখুশিমতো অধিকারের নিবন্ধন বাতিল হলো স্বাধীন মতপ্রকাশকে সংকীর্ণ করা

খেয়ালখুশিমতো অধিকারের নিবন্ধন বাতিল হলো স্বাধীন মতপ্রকাশকে সংকীর্ণ করা

মানবাধিকার বিষয়ক বেসরকারি সংগঠন অধিকার-এর নিবন্ধন ‘খেয়ালখুশিমতো’ বাতিল করার কড়া নিন্দা জানিয়েছে ৪টি মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন। তারা অধিকার-এর লড়াইয়ের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে। ইচ্ছামাফিক অধিকারের নিবন্ধন বাতিল করা হলো সংগঠনটির স্বাধীনতার অধিকারকে প্রত্যাখ্যান করা এবং স্বাধীন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার স্থানকে আরও সংকীর্ণ করা। ‘অবজার্ভেটরি ফর দ্য প্রটেকশন অব হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স অ্যান্ড ফ্রন্টলাইন ডিফেন্ডারস’ কাঠামোর আওতায় যৌথ বিবৃতি দিয়ে এই নিন্দা জানিয়েছে এশিয়ান ফেডারেশন এগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপেয়ারেন্সেস, এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, এফআইডিএইচ এবং ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন এগেইনস্ট টর্চার।

১৪ই জুন দেয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ৫ই জুন ইস্যু করা একটি চিঠির মাধ্যমে অধিকারের নিবন্ধন নবায়নের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশের এনজিও বিষয়ক ব্যুরো (এনজিওএবি)। এতে বলা হয়েছে, নিবন্ধন নবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য/প্রমাণ যথাযথভাবে সরবরাহ করা হয়নি। অধিকারের মানবাধিকার বিষয়ক কাজকে তারা ‘নেতিবাচক কর্মকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করেছে। আরও দাবি করেছে যে, দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে অধিকার যে কাজ করে তা বিভ্রান্তিকর এবং তাতে রাষ্ট্রের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাই নিবন্ধন নবায়নের আবেদন বিবেচনায় নেয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২০১৫ সালে অধিকারের নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তার ৬ মাস আগে ২০১৪ সালে তারা নিবন্ধন নবায়নের জন্য আবেদন করে।

তারপর থেকে তাদের এই আবেদন মুলতবি অবস্থায় ছিল। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে অধিকার এর প্রেক্ষিতে একটি রিট পিটিশন দাখিল করে।

এরপর অধিকারের নিবন্ধন নয়ায়নের বিষয়ে এনজিওএবি-এর কাছে ব্যাখ্যা চান বেঞ্চ। রিট পিটিশনকারীদেরকে আবেদনের তিন বছর পর ২০২২ সালের মার্চে জবাব দেয় এনজিওএবি। এ বিষয়টি পরে এ বছর ২৬শে মে হাই কোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হয়। পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয় ৮ই জুন। বিষয়টি বিচারের আওতায় থাকা অবস্থায় খেয়ালখুশি মতো অধিকারের নিবন্ধন বাতিল করে দেয় এনজিওএবি। এই মামলার ৮ই জুনের শুনানিতে আদালতকে জানানো হয় যে, অধিকারের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আনতে চায় রাষ্ট্র। এ জন্য আরও সময় চাওয়া হয়। তবে শুনানির পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ১৯৯৪ সাল থেকে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়কে প্রামাণ্য আকারে তুলে ধরছে অধিকার। তারা বিশ্বাসযোগ্য ডাটা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য দিয়ে আসছে। এশিয়ায় সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলোর মধ্যে অধিকার অন্যতম।

বিবৃতিতে ওই মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন আরও বলেছে, ইচ্ছামাফিক অধিকারের নিবন্ধন বাতিল করা হলো সংগঠনটির স্বাধীনতার অধিকারকে প্রত্যাখ্যান করা এবং স্বাধীন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার স্থানকে আরও সংকীর্ণ করা। অধিকার ও এর স্টাফদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার ব্যবহার করেছে মানহানিকর কৌশল। তাদের কর্মকাণ্ডকে আখ্যায়িত করা হচ্ছে ক্রিমিনাল এবং রাষ্ট্রবিরোধী হিসেবে। অধিকারের সেক্রেটারি এবং ডিরেক্টর যথাক্রমে আদিলুর রহমান খান এবং এএসএম নাসিরুদ্দিন এলান হয়রানির মুখোমুখি রয়েছেন। উপরন্তু অধিকারের সব ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। ফলে অর্থ সংস্থানের সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা বিধিনিষেধের মুখোমুখি।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাধা এবং জবরদস্তি ছাড়া বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি মনিটরিং করতে, প্রামাণ্য আকারে উপস্থাপন এবং রিপোর্ট করা নিশ্চিত করতে অধিকারের লড়াইয়ের প্রতি আমরা সংহতি প্রকাশ করছি। এতে আরও বলা হয়, আমরা আহ্বান জানাই অবাধে সমাবেশ এবং মত প্রকাশের বিধিনিষেধগুলো তুলে নেয়া হবে এবং মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলোকে দেশে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দেয়া হবে। একটি গতিশীল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এগুলো প্রয়োজনীয়।