টানাটানি করলে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার মেয়াদ আরও বাড়বে: বিএনপিকে শেখ সেলিম

টানাটানি করলে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার মেয়াদ আরও বাড়বে: বিএনপিকে শেখ সেলিম

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামানো যাবে না। যত টানাটানি করবে ততই ক্ষমতার মেয়াদ আরও বাড়বে।

প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর রোববার জাতীয় সংসদের বৈঠকে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব মন্তব্য করেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

আলোচনায় অংশ নিয়ে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বিএনপি বলছে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামানো হবে। কিন্তু নামানোর চেষ্টা করে লাভ নেই। কারণ এতে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার মেয়াদ আরও বাড়বে। টানলেই লম্বা হবে। ওরা যত টানবে আমাদের ক্ষমতা আরও বাড়বে। ২০০৯ সালে ক্ষমতা আসার পর থেকেই টানাটানি শুরু হয়েছে। টানতে টানতে ২০২২ সাল এসেছে। আরও টানলে এটা ৫০ বছরে পৌঁছে যাবে।

করোনা ভ্যাকসিনে দুর্নীতির অভিযোগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি সবকিছুতে দুর্নীতি দেখে। কারণ ওদের মাথায় দুর্নীতি ছাড়া কিছুই নেই। ওদের রক্তে দুর্নীতি। পদ্মা সেতুতে যখন এক টাকাও দেওয়া হয়নি, তখন অভিযোগ উঠল দুর্নীতি হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংককে দিয়ে এই অভিযোগ করিয়েছে ড. ইউনূসসহ কথিত কিছু বুদ্ধিজীবী। কী বিচিত্র। এরা মানুষের শত্রু। তারা সবসময় নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির। বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাক এরা কোনোদিন চিন্তা করে না।

তিনি বলেন, ইউনূস কিসের ডাক্তার? তিনি কি মাছের ডাক্তার? না-কি পশুর ডাক্তার? এরা আসলে বাংলাদেশের মানুষের সর্বনাশের ডাক্তার। সুদ খায়, ঘুষ খায়। তাকে শান্তিতে নোবেল দেওয়া হয়েছে। আসলে এরা দেশের মানুষের শান্তি নষ্টের কাজ করছে।

পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কানাডার টরোন্টো আদালতে মামলায় কিছুই পাওয়া যায়নি মন্তব্য করে শেখ সেলিম বলেন, ওদের মুখে কালি পড়েছে।

এ সময় অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে শেখ সেলিম বলেন, উনি (ড. ইউনূস) যে ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে দিয়েছেন, এই টাকা কোত্থেকে দিয়েছেন তা তদন্ত করুন। এটা মানি লন্ডারিংয়ের টাকা। বিশ্ব ব্যাংকের কাছে ও (ড. ইউনূস) বিক্রি। আমাদের কিছু বিএনপি ও বিদেশিকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করে পদ্মাসেতু বন্ধের চেষ্টা করেছে।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতায় গিয়ে পাটুরিয়ার পদ্মাসেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। তখন সেতুর কিছুই হয়নি। সেতুর কাজ যখন শুরু হল, তখন খালেদা জিয়া বললেন-জোড়াতালি দিয়ে ব্রিজ বানানো হচ্ছে। কিন্তু এত মজবুত সেতু এখন নির্মিত হয়েছে যে ভূমিকম্পেও কোনো ক্ষতি হবে না।

বিএনপির সমালোচনা করে শেখ সেলিম বলেন, তারা কথায় কথায় বলে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে। বাংলাদেশ ধ্বংস হলে তোরা খুশি হও। তোরা কী বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাবি? বাংলাদেশে কখনই শ্রীলঙ্কা হবে না। বাংলাদেশ ধ্বংস হলে ওরা খুশি হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তি খুব মজবুত। বাংলাদেশ কখনো শ্রীলঙ্কা হবে না। প্রধানমন্ত্রী যে ধারায় উন্নয়ন অব্যাহত রেখেছেন তাতে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হবে। মালয়েশিয়া ও সুইজারল্যান্ড হবে।

তিনি বলেন, বিএনপি বিদেশিদের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নালিশ করে। দেশের ভাবমূর্তি ও ইজ্জত নষ্ট করে। আর বিদেশিদের কাছে ধর্না দেয়। বিদেশিরা বাংলাদেশে কোনকিছু করতে পারবে না। বাংলাদেশের ভাগ্য এদেশের জনগণ নিয়ন্ত্রণ করবে। বিদেশিরা নিয়ন্ত্রণ করবে না। বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশে যেরকম সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হয়। বাংলাদেশেও সেইভাবে নির্বাচন হবে।

আগামী নির্বাচন নিয়ে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ আবার এখন বলছেন জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। বাংলাদেশে নির্বাচন হবে উন্নত বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মতো।

দেশে সিলেট ও উত্তরাঞ্চলে বন্যার কথা উল্লেখ করে শেখ সেলিম বলেন, দেশে বন্যা হচ্ছে। মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। তিনি দলীয় নেতাকর্মী সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

পদ্মাসেতু নির্মাণে বিরোধিতাকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি করেছেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। একই সঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত পদ্মা পাড়ের জাদুঘরে সেতুর বিরোধিতাকারীদের বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপনের দাবি করেন।

তিনি বলেন, পদ্মাসেতুর যন্ত্রপাতি নিয়ে ভাঙ্গায় জাদুঘর হবে। প্রস্তাব থাকবে যারা পদ্মাসেতু নির্মাণে বিরোধিতা করেছেন তাদের তথ্য ওই জাদুঘরে রাখতে হবে।

এ ছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, হাবিবুর রহমান, হাবিব হাসান, খন্দকার মমতা হেনা লাভলী, তানভীর শাকিল জয়, শফিউল ইসলাম বলেন, উম্মে কুলসুম স্মৃতি, এস এম শাহজাদা, এনামুল হক, জাতীয় পার্টির আহসান আদেলুর রহমান ও বিএনপির রুমিন ফারাহানা প্রমুখ।