ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা: হাছান

ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা: হাছান

পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকা নিয়ে ইউনূস সেন্টার যে বিবৃতি দিয়েছে, তাকে ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টা’ বলেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এ কথা বলেন।

গতকাল বুধবার মুহাম্মদ ইউনূস তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের জবাব দেন। ইউনূস সেন্টার থেকে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহের জবাব’ শিরোনামে একটি বিবৃতি গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।

পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধে হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে চাপ প্রয়োগ এবং একজন সম্পাদককে সঙ্গে নিয়ে বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে বৈঠক করার বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ দুই বন্ধুর খেয়ালখুশি কিংবা একজন পত্রিকা সম্পাদকের সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার ওপরও নির্ভর করে না। কোনো ধরনের বৈঠক করা নিতান্তই কল্পনাপ্রসূত।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ইউনূস সাহেব হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে বিশেষ সখ্য থাকার সুবাদে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের ক্ষেত্রে যে মূল কুশীলবের ভূমিকা পালন করেছিলেন, সেটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট, দেশ-বিদেশে সবাই সেটি জানে।’

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ইউনূস সেন্টারের বিবৃতির বিষয় তুলে ধরে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আজ পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ায় অনেক বিরোধিতাকারীর সুর পাল্টেছে। বিএনপিও কিছুটা সুর পাল্টানোর চেষ্টা করছে, যদিও মির্জা ফখরুল সাহেব এখনো কিছু বলেননি। আজ দেখলাম ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে, সেটির প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তখনকার বিশ্বব্যাংকের মিস্টার জেলিক বলেছিলেন, এটি বন্ধ করার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। কারণ, প্রথমত, বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের অন্যতম অংশীদার দেশ, অর্থাৎ সেখানে আমাদের শেয়ার আছে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ কখনো ঋণখেলাপি হয়নি। ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে খুবই ভালো। এভাবে কোনো যুক্তিসংগত কারণ না থাকায় মিস্টার জেলিকের ওপর ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করা হলেও তিনি কিন্তু সেটি করেননি। তিনি যেদিন অবসরে যাচ্ছেন, তাঁর শেষ কর্মদিবসের শেষ ঘণ্টায় তিনি অর্থায়ন বন্ধের সিদ্ধান্তে সই করতে বাধ্য হয়েছিলেন।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ইউনূস সাহেব বেআইনিভাবে ১০ বছর অতিরিক্ত সময় গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডি ছিলেন এবং আরও থাকতে চেয়েছিলেন। ব্যাংকের এমডিদের বয়সসীমা বাংলাদেশে ৬০ বছর। কোনো বেসরকারি ব্যাংকেও এ বয়সের পর আর এমডি থাকা যায় না। তাঁর বয়স তখন ৭০–এর কোঠায়, অর্থাৎ কমপক্ষে ১০ বছর অতিরিক্ত সময় ধরে তিনি এমডি ছিলেন।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংক হচ্ছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক বা কর্মসংস্থান ব্যাংকের মতো সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, যেখানে সরকারের শেয়ার আছে। গ্রামীণ ব্যাংকে তখন সরকারের শেয়ার ছিল ৫১ শতাংশ ও অন্যদের ৪৯ শতাংশ। সংবিধিবদ্ধ অন্য ব্যাংকের জন্য যে আইন, এখানেও সেই আইন। কিন্তু তিনি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এমডির দায়িত্বে ছিলেন।’

সরকার সব সময় গ্রামীণ ব্যাংককে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বিশেষ করে ১৯৯৮ সালের বন্যার পর যখন তাদের ঋণগ্রহীতারা অর্থ ফেরত দিতে পারছিলেন না, তখন শেখ হাসিনার সরকার বিভিন্ন সময় গ্রামীণ ব্যাংকে ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল।

হাছান মাহমুদ জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে গ্রামীণ ফোনের লাইসেন্স দিয়েছিলেন এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল গ্রামীণ ব্যাংকের নামে। তখন বলা হয়েছিল, গ্রামীণ ফোনের টাকাটা গ্রামীণ ব্যাংকে যাবে। কিন্তু সেই টাকা কি গ্রামীণ ব্যাংকে গেছে! যায়নি। গ্রামীণ ব্যাংকে না গিয়ে সেই টাকা বিভিন্ন জায়গায় গেছে এবং তিনি ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে যে অনুদান দিয়েছিলেন, তা গতকালের বিবৃতিতে অস্বীকার করেছেন। কিন্তু দেশ-বিদেশের পত্রপত্রিকায় যখন সেটি বেরিয়েছিল, তখন তো তিনি অস্বীকার করেননি। আজ এত বছর পর কেন তিনি অস্বীকার করছেন, অর্থাৎ “ডাল মে কুচ কালা হ্যায়”।’

‘ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি সত্যের অপলাপ’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ইউনূস সাহেব যে পদ্মা সেতু এবং এতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের বিরোধিতা করেছেন, সেটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট। তিনি আগে কখনো বলেননি যে তিনি এই অপচেষ্টা চালাননি। বরং যখন বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ হলো, তখন দম্ভ করে বিভিন্ন জায়গায় তিনি নানা কথা বলেছিলেন, যেগুলো এখনো বাতাসে ভেসে বেড়ায়। এভাবে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টায় কোনো লাভ নেই।’