৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামল বাংলাদেশের রিজার্ভ

৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামল বাংলাদেশের রিজার্ভ

রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কয়েক মাস ধরে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত চাপে রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে কমে আসছে দেশের অর্থনীতির শক্তির পরিচায়ক এই অন্যতম সূচকের সামর্থ্য। সেই চাপে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (এসিইউ বা আকু) পাওনা পরিশোধের পর মঙ্গলবার বৈদেশিক মুদ্রার মজুত দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে। গত দুই বছরের মধ্যে এই প্রথম বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ৪০ বিলিয়নের নিচে নামল। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ গত সপ্তাহে আকুতে ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আমদানি দায় নিষ্পত্তি করেছে। আকু হলো একটি লেনদেন ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। ইরানের রাজধানী তেহরানে এর সদরদপ্তর। এ ব্যবস্থায় সংশ্নিষ্ট দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাস অন্তর আমদানির অর্থ পরিশোধ করে। এর আগে গত ১০ মে আকুতে ২২৪ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ দাঁড়ায় ৪১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে। গত আগস্টে রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। এর মানে ১১ মাসে রিজার্ভ কমলো প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ ২০২০ সালের অক্টোবরে রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই থেকে মে) আমদানি ব্যয় বেড়েছে আগের বছরের তুলনায় ৩৯ শতাংশ। এ সময়ে আমদানি বাবদ মোট ব্যয় হয়েছে ৭৫ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে রপ্তানি আয় ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। ১১ মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৪ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে গত ছয় বছরের মধ্যে প্রথমবার প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। গত অর্থবছরে প্রবাসীরা ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ফলে আমদানি দায় মেটাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে আসছে। গত মে পর্যন্ত ১১ মাসে আমদানিতে গড়ে প্রতি মাসে ব্যয় হয়েছে ৭৪১ কোটি ডলার।

মজুত কমে আসায় সরকার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় কমানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়িত যেসব উন্নয়ন প্রকল্পে আমদানি ব্যয় আছে, সেগুলোর ধীরে বাস্তবায়নের নীতি নেওয়া হয়েছে। গাড়ি কেনা বন্ধ এবং বিদেশ ভ্রমণ বাবদ বরাদ্দের অর্ধেক খরচ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকশ বিলাসপণ্য ও জরুরি নয় এমন পণ্য আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক্ক বাড়িয়েছে সরকার। গাড়ি, টিভি, ফ্রিজ, স্বর্ণসহ ২৭ ধরনের পণ্য আমদানিতে শতভাগ মার্জিন তথা এলসি খোলার সময় নগদ জমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অতি প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে মার্জিনের হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫ শতাংশ। উভয় ক্ষেত্রে ঋণের টাকায় মার্জিন নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ, তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থ ছাড় আপাতত বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আমদানি নিয়ন্ত্রণে ডলারের দর বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বর্তমানে আন্তঃব্যাংকেই প্রতি ডলারের দর উঠেছে ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা। এক বছর আগে যা ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা ছিল।

সংশ্নিষ্টরা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে রিজার্ভ কমে এ পর্যায়ে নামলেও এর আগে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল। ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছর আগে ছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে বেড়ে গত বছরের আগস্টে প্রথমবারের মতো ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার হয়।